মাবিয়া রহমান,মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:
প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে ভাল ফলাফলের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। ফলাফল প্রকাশের সাথে-সাথে প্রত্যাশি নামের সেই নীল পাখিরা বাঁধ ভাঙা উচ্ছাসে মেতে উঠতো ক্যাম্পাসের মাঝখানে। সারিবদ্ধ বা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তারা আনন্দ-উল্লাস করে উপভোগ করতো তাদের মনের অভিব্যক্তি। কিন্তু এবার ভয়াবহ করোনাভাইরাসের কারণে নেই সেই দৃশ্যপট। সব কিছু যেন বদলে গেছে। করোনা কেড়ে নিয়ে- সব আনন্দ-হাসি আর বাধভাঙ্গা উল্লাস। শিক্ষার্থী নামের সেই নীল পাখিরা আসেনি প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে। শিক্ষকদের ছিল না কোন ব্যস্ততা। মাইক বা সাউন্ড বক্সে ছিল না কোন ঘোষনা।
চারিদিকে সবকিছুই যেন নীরব আর নিস্তাবতা। মণিরামপুরের ঐতিহ্যবাহি পোড়াডাঙ্গা আর,সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলতি ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় তাদের সাফল্যের মশাল জ্বালিয়ে অভাবনীয় ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে বরাবরই ভালো ফলাফল করে এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে চলতি বছর এসএসসি’র ফলাফল অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে উপজেলায় সেরাদের তালিকায় আসতে সক্ষম হয়েছে ঐহিত্যবাহি এ বিদ্যালয়টি।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর ফলাফলের সময়ে উৎসবমূখর হয়ে যায় বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে-কিন্তু সকল রেকর্ডকে ছাফিয়ে বিদ্যালয়টি এবার ভাল ফলাফল অর্জন করলেও ভয়াবহ করোনাভাইরাসের কারণে সেই আনন্দটা অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে গেল। কারণ শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ আসেনি বিদ্যালয়ের প্রিয় ক্যাম্পাসে।
খোজ-খবর নিয়ে জানাযায়, ভাল ফলাফলের বিষয়ে পোড়াডাঙ্গা আর,সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি তাদের কৃতিত্ব ধরে রাখতে সব সময়ই সচেষ্ট থাকে। এর কারণ শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও প্রতিটা শিক্ষার্থীদেরকে কঠোর নজরদারীতে রাখেন। তাছাড়া বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সুযোগ্য সভাপতি মিলন কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠানটির পড়ালেখার মান উন্নয়নে নিয়মিত তদারকিসহ সার্বিক খোজ-খবর রাখেন। যে কারণে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে এবার এসএসসি’র ৯৮% পাশসহ এই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪জন। ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পোড়াডাঙ্গা আর,সি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবছর পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ৪১ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ৪০জন। এর মধ্যে ৩জন গোল্ডেনসহ ৪জন জিপিএ-৫, ১৬ জন জিপিএ-৪, ১৩ জন জিপিএ-৩.৫০ এবং ৭ জন জিপিএ-৩। মাত্র ১ শিক্ষার্থী অকতৃকার্য হয়েছে। অজো পাড়াগায়ে বিদ্যালয়টির অবস্থান হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সমন্বিত প্রচেষ্টা উপজেলার মধ্যে সেরাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
ফলাফলের সাফল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী মন্দিরা মজুমদার, তাসনিম আলম, সাগর দত্ত ও মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠদান শ্রেণি কক্ষে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ ও সেগুলো চর্চা করা এবং প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কঠোর নজরদারীই ভাল ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে।
পোড়াডাঙ্গা আর,সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে যথাযথ উপস্থিতিসহ বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাল ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে।
এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিলন কুমার দত্ত বলেন, যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা শক্তি ও দৃঢ় মনোবলের কারণেই ভাল ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে। আমি যতদিন এ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব থাকবো- প্রতিষ্ঠানটি ভালফল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।