1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman
শিরোনামঃ

যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যায় ৩ জন আটক, হলেও  বাকি আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

  • প্রকাশের সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
  • ১২১ বার সংবাদটি পাঠিত
আব্দুল খালেক,কেশবপুর
যশোরের কেশবপুরে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মনিরুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবদল কর্মীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও আরও কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা। তবে পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৭ জুন মঙ্গলবার বিকেলে কেশবপুর উপজেলার সরসকাঠি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত মনিরুল সরসকাঠি বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী রেজা হাসান সবুজের পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সবুজ উত্তেজিত হয়ে লোহার রড দিয়ে মনিরুলের মাথায় আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা প্রথমে তাকে কেশবপুর হাসপাতালে এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর ১৮ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় জনতা তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান আসামি রেজা হাসান সবুজ, তার ভাই মোস্তফা কামাল লিটন এবং তাদের বাবা মশিউর রহমান গাজীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। নিহত মনিরুলের মেজো ভাই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৬-৭ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার অন্য আসামিরা এখনও পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, “আমরা মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাকি আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে প্রধান আসামি রেজা হাসান সবুজের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক প্রতারণা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার অভিযোগ। তিনি কেশবপুর উপজেলার বরণডালি গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি মশিউর রহমান গাজীর ছেলে দীর্ঘদিন ধরে সে নিজেকে কখনো এসপি, কখনো ডিসি, কখনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রেজা হাসান সবুজ গোপালপুর গ্রামের প্রবাসী কামরুল ইসলামের পাওনা ১০ লাখ টাকা আদায়ের দায়িত্ব নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এরপর কামরুলের স্ত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিজের সঙ্গে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে কেশবপুর শহরে বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করতে থাকে।
এছাড়া, রফিক সানার কাছ থেকে জমি দখল করে দেওয়ার নাম করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণা করে। বরণডালি গ্রামের মৃত শেখ শওকত হোসেন তোতনের মৃত্যুর পর এক আসামির কাছ থেকে মামলার রিলিজ দেওয়ার নামে ৩ লাখ টাকা এবং তোতনের পরিবারের কাছ থেকে আরও ২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। অথচ সেই মামলায় সে নিজেই পরে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে আসামি হয়।
গোপসেনা গ্রামের এক ঘেরে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার সময় বিরোধে জড়িয়ে পড়ে বাবুল নামে এক ড্রাইভারকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেয়, যার মামলা এখনো আদালতে চলমান এবং সে মামলারও প্রধান আসামি সবুজ।
ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের বাগান বিক্রির ১৭ লাখ টাকার মধ্যে ৭ লাখ টাকা ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ঘের ও জমি দখল করে দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি গাছ কাটার অনুমতি পাইয়ে দেওয়ার নামে চাঁদাবাজি, বাল্যবিবাহে মধ্যস্থতা করে টাকা নেওয়া এমনকি নিজের এলাকার বাইরেও একাধিক অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় জনগণের ভাষ্য, রেজা হাসান সবুজ বছরের পর বছর ধরে প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্মে লিপ্ত থেকেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই আজ এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তাঁরা সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় কেশবপুরসহ আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকার সাধারণ মানুষ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারাতে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION