মোঃ আক্তারুজ্জামান সুমন
মনিরামপুরে প্রথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। এই উপজেলার অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর মানসিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিটি শিশুর প্রথম শিক্ষক বাবা-মা। এরপরই তার বিকাশের জন্য প্রথম ও প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখান থেকে সে দেখে শিখে, শোনে শিখে, করে শিখে ও অনুকরণ করে শিখে। বর্তমানে একককেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠানে তদারকি না থাকা এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে সেটি হচ্ছে না। এ ছাড়াও ক্রম পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থায় শিশুর বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কতৃক মেন্টরিংয়ের দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুস্থ দেহে সুস্থ মন, আর সুস্থ মনে কাক্সিক্ষত বিকাশ। যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষাই শিক্ষার মূল ভিত, সে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মৌলিক ও জ্ঞানমূলক শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, চিত্রাঙ্কন, বিতর্ক, আবৃত্তি ও সংগীতচর্চা, পাঠ্যাভ্যাস তৈরি, কাব-স্কাউটিংসহ চারিত্রিক ও নেতৃত্বের বিকাশ, শুদ্ধাচার চর্চার অনুশীলন, বাগান তৈরি, ভাষা শিক্ষা অনুশীলন, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চর্চার অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এগুলোর মাধ্যমে শিশু-শিক্ষার্থীদের যেমন মানসিক, চারিত্রিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত হয়, তেমনি একজন আদর্শ ও পূর্ণাঙ্গ সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে নিজস্ব সাংস্কৃতিতে শিক্ষার্থীরা যেমন হৃদ্য হয় তেমনি দেশপ্রমেও উদ্বুদ্ধ হয়। ক্রীড়াচর্চার মাধ্যমে শারীরিক বিকাশ যেমনি নিশ্চিত হয় তেমনি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং জয়-পরাজয় মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলার জন্য প্রত্যয়ী হয়। কাব-স্কাউটিং, স্টুডেন্ট কাউন্সিল ইত্যাদির মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকাশ ও চারিত্রিক গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় বেশ কিছু সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও শুদ্ধ চর্চার বিকাশ ঘটেছে যেমন ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচি, সততা স্টোর, রিডিং ক্লাব, স্বপ্নের আয়না, মহানুভবতার দেয়াল বা মানবিকতার দেয়াল, ভালো কাজের ডায়েরি সংরক্ষণ, প্রতিদিন ১টি নতুন শব্দ শেখা, অভিভাবক ও প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী যোগাযোগ রেজিস্টার সংরক্ষণ এগুলোও সহপাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুশিক্ষার্থীদের চারিত্রিক ও মানবিক বিকাশ এবং নৈতিকতাবোধ শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যা বর্তমানে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয় না। বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা সেটি অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন হয়না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি শিশুর প্রায় ৯০ শতাংশ মস্তিষ্ক বিকাশের কাজটি শেষ হয় ১১ বছর বয়সের মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে শিশুর মানসিক বিকাশ, শারীরিক বিকাশ, সৃজনশীলতা, অনুসন্ধিৎসা, নৈতিকতা, মূল্যবোধের মতো অর্জনযোগ্য গুণাবলি ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। শিশুর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষার যে বীজ রোপিত হয় বাবা-মা ও পরিবারে তা অংকুরিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যে জায়গাটায় নার্সিং করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে একজন আদর্শ শিক্ষক বলার চেয়ে একজন ভালো মেন্টর বা ভালো গাইড হিসেবেই বেশি আখ্যায়িত করা হয়। ধর্ম যেমন মূল্যবোধ চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি করে বহমান সাংস্কৃতিক আবহ, রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার এবং অনুকরণীয় অনুসরণীয় শুদ্ধাচার চর্চার অনুশীলন শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা শিশুমনে-কাদামাটিতে প্রোথিত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিশুদের মন ও মননে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের গুণাগুণ প্রবেশ করাতে পারলে একজন আদর্শ নাগরিক সৃষ্টি করা যেমন সম্ভব তেমনি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও মূল লক্ষ্য অর্জন করাও সম্ভব। কিন্তু সেটি কোনটিই সঠিকভাবে পালন হচ্ছে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।