আবুল কাশেম,নড়াইল
গ্রীষ্মের দ্বিতীয় ও জৈষ্ঠ্যমাসে বিভিন্ন রকমের ফলের মৌ মৌ গন্ধে যেকোনো বাগানজুড়ে চারপাশে মোহিত থাকে। তাই এই জৈষ্ঠ্যমাসকে বলা হয় মধুমাস। তবে বছরজুড়ে অন্যান্য ফলের মধ্যে লিচু অন্যতম। পুষ্টিগুণের দিক থেকে লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’।ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়,দাঁত, চুল, ত্বক, ও নখ ভালো রাখার জন্য। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬গ্রাম, ক্যালরি৬১, ক্যালসিয়াম১০মিলিগ্রাম,লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন ‘সি’৩১ মিলিগ্রাম। নড়াইলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চাষিদের লিচু বাগান পরিচর্যায় চলছে ব্যস্ততা। দেশিয় এবং চায়না ৩ জাতের লিচুর এবার বাম্পার ফলন আশা করছে চাষিরা। দেশিয় চায়না -৩ জাতসহ অন্যান্য জাতের লিচুর মুকুল বেশি দেখায় এ জেলার লিচু চাষিদের মুখে হাসি। উচু চালা জমি সমৃদ্ধ নড়াইলের রসালো লিচুর কদর হয়ে থাকে দেশজুড়েই।জেলাজুড়ে প্রায় ১২ হাজার কৃষক এই লিচুকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিচালনা করে থাকেন। এবং প্রাকৃতিক দূর্ষোগ না থাকায় এই জেলায় চায়না ৩ দেশিয় জাতসহ অন্যান্য লিচুর ভালে ফলন আশা করছে চাষিরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তর্থমতে,সব চেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয় নড়াইল সদর উপজেলায়, ৩ / ৪ হাজার একর জায়গা জুড়ে চাষ হয় রসালো এবং সুস্বাদু ফল লিচুর। ৮০ দশকে এ অঞ্চলের মানুষ প্রথমে শখের বসে শুরু করলেও বর্তমান এই রসালো ফল চাষ করছে বাণিজ্যিক ভাবে। নড়াইল ও বসুন্দিয়া জুড়ে রয়েছে ছোট বড় ১০হাজার ১০৭ টির ও বেশি লিচু বাগান । গত বছর এসব এলাকায় উৎপাদিত মৌসুমি লিচুর বাজার মূল্য ছিলো প্রায় ৪শো থেকে ৫ শো কোটি টাকা।তবে এবছর গাছে ভালো মুকুল আসায় বেশি ফলন পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছে লিচু চাষিরা। চাষিদের ধারণা অনুযায়ী বছরের মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সাধারণত লিচুর মুকুল ফোটা সম্পন্ন হয়। যে গাছে মুকুল না আসে সে গাছ গুলোতে ফাল্গুনের শুরুতেই নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। আর যে গাছে মুকুল আসে সে গাছ মুকুলে ছেয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকারের জাত থাকলেও নড়াইল বসুন্দিয়াতে মূলত ৩ জাতের লিচু চাষ হয় সব চেয়ে বেশি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চায়না ৩,বোম্বাই,ও দেশি জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে।তবে চায়না ৩ জাতের লিচুর স্বাদও চাহিদা বেশি থাকার কারণে বর্তমানে এই আঞ্চলে চায়না ৩ লিচুর চাষ বাড়ছে। নড়াইল, বসুনিয়া, সৈয়দ মাও মংপুর,মাথা ভাঙ্গা, আশ্রম , আওড়িয়া,ভদ্রবিলা,উজিরপুর, মিরাপাড়া,গোবরা,পহর ডাঙ্গা, মাছিমদিয়া, বাহির ডাঙ্গা,সহ উল্লেখ যোগ্য নড়াইল সদর উপজেলার আফরা গ্রামের লিচু চাষি আকবার বেগ বলেন, এবার লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় লিচুর বাম্পার ফলন হবে এবং দামও বেশি পাওয়ার আশা করছি।বসুন্দিয়ার লিমন খান জানান দেশিয় চায়না -৩ জাতের লিচু গাছ লাগিয়েছিলেন। তার চায়না -৩ জাতসহ অন্যান্য ৩০ টি লিচু গাছ রয়েছে। তিনি গত বছর লিচু বিক্রি করেছিলেন আড়াই লাখ টাকার।তবে এবছর মুকুল ভালো হওয়ায় আশা করছেন লিচু বিক্রি করতে পারবেন চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা।এবার শতকরা ৮০ শতাংশ লিচু হবে বলে ধারণা করছে বাগানিরা।আফরা গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী রবি মোল্লা জানান। আমি শুধু গাছ দেখে ৩ মাস আগে ২০ লাখ টাকার গাছ কিনেছি,তবে বোম্বাই,ও চায়না -৩ জাতের লিচুর মুকুল কম দেখা গেলেও দেশি জাতের লিচুর বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে, তিনি আরো জানান বোম্বাই ও চায়না -৩ কম হলেও দেশি জাতের লিচুতে এবছর আমার ৭থেকে ৮ লাখ টাকা লাভ হতে পারে বলে জানান তিনি জানান। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবদাস কর বলেন,আমরা কয়েক বছর ধরে স্হানীয় চাষিদের লিচু চাষ সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ করায় প্রতিনিয়ত বানিজ্যিক ভাবে বাড়ছে লিচু চাষ।তিনি আরো বলেন এবার গাছের মুকুল দেখে ধারনা করা যাচ্ছে এসব অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ শো কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে চাষিদের উৎপাদন পুষিয়ে যাবে। তাছাড়া ভোক্তা পর্যন্ত বিষমুক্ত সুস্বাদু লিচু পৌছানোর ব্যাপারে আমরা শুরু থেকে নজরদারি করছি এবং করে যাবো।