নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের খর্ণিয়া বাজারে ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি এখন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। জনবল ও ওষুধের অভাবে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা। প্রতিদিন রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন শ‚ন্য হাতে, হতাশ হয়ে।২০২০ সালে কালিয়া উপজেলার গুরুত্বপ‚র্ণ খর্ণিয়া বাজারে শুরু হয় এই ১০ শয্যার হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ। তৎকালীন সময় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল, কারণ আশপাশের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা পাওয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন। তিনতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে রয়েছে— ১০ শয্যার দুটি ওয়ার্ড (প্রতিটিতে ৫টি করে শয্যা), ১০টি আধুনিক কেবিন, অস্ত্রোপচার কক্ষ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য আবাসন কোয়ার্টার।সবকিছু প্রস্তুত থাকার পরও, সেবার ম‚ল চালিকাশক্তি – জনবল ও ওষুধ – না থাকায় হাসপাতালটি যেন মৃতপ্রায়। বর্তমানে এ কেন্দ্রে ১০টি পদ অনুমোদিত থাকলেও অধিকাংশই ফাঁকা। নেই প‚র্ণকালীন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স। চিকিৎসার আশায় আসা এক মা বলেন, আসলাম একটু সেবা নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে এসে দেখি কিছুই নেই। ডাক্তার নেই, সেবিকা নেই। ওষুধও পাইনা।এমন অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। প্রতিদিনই অনেকে ফিরে যান এমন শ‚ন্যতা নিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এ কেন্দ্রটি চালু হলে নবজাতক, গর্ভবতী মা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আশপাশের বিশাল জনগোষ্ঠী উপকৃত হতো।স্বাস্থ্যকর্মীরা জানাচ্ছেন, আশপাশে কোনো বড় হাসপাতাল নেই। কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় ১০ কিলোমিটার দ‚রে। সেখানে পৌঁছাতে সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। ফলে অনেকেই গৃহেই প্রসব করাতে বাধ্য হন, যা মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পরিদর্শিকা গীতা রানী বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে আমাদের ওষুধ সাপ্লাই নেই। এ কারণে মায়েদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। জনবল থাকলে আমরা ভালোভাবে সেবা দিতে পারতাম।নড়াইল জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলিফ ন‚র বলেন, স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রগুলো চালু আছে এবং মানুষ সেবা পাচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগ ও ওষুধ সরবরাহ পাওয়া গেলে নিয়মিত কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো উন্নতি হয়নি।
বাংলাদেশে গত এক দশকে স্বাস্থ্যখাতে অনেক অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনার ঘাটতি, জনবল সংকট ও তদারকির অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে চালু করা যায়নি। খর্ণিয়ার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র তারই একটি প্রতিচ্ছবি।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যা সমাধানে কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরি: দ্রæত জনবল নিয়োগ ও পদায়ন, বিশেষ করে নারী চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্স। নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ। স্থানীয় তদারকি কমিটি গঠন করে ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা। টেলিমেডিসিন সুবিধা চালু, প্রয়োজনে ভিডিও কনসালটেশন ব্যবস্থাও যুক্ত করা যেতে পারে।