মোঃ ইব্রাহিম খলিল,সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় বিআরটিএ অফিসে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারী দুদকের পক্ষ থেকে একটি টিম এসে এ অভিযানে অংশ নেয়। দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা অফিসের সহকারী পরিচালক মাহাবুর রহমান শুভ্র এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এসময় পুলিশের একটি টিম সেখানে উপস্তিত ছিলো। দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, বিআরটিএ অফিসে দালালের উপদ্রব বেড়েছে- এমন খবর পেয়ে তিনি অনুসন্ধান করতে থাকেন। একপর্যায় ঘটনার সত্যতা পেয়ে তিনি বিআরটিএ অফিসে অভিযান চালান। এ সময় অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করে তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করে অতিরিক্ত অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে বিআরটিএ পরিচালকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সূত্রে জানা যায়, বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মাহবুব কবির একই স্থানে দীর্ঘ ১২ বছর চাকরি করার সুবাদে বিআরটিএ অফিস দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম সহ একাধিক ব্যক্তি। সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মাহাবুব কবির বলেন, আবুল হোসেন বাবু নামে এক আইনজীবী সহকারীকে দুদক কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলেও মুচলেকা নিয়ে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিআরটিএ অফিস সহকারী সাইফুল ইসলামের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এই কর্মকর্তা। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) কে এম মাহবুব কবির যোগদানের পর থেকে বেড়েছে দুর্নীতি। মোটরযান রেজিষ্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন, মালিকানা পরিবর্তন সহ অন্যান্য সেবা গ্রহনের ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে দিতে হয় ঘুষ। ঘুষ ছাড়া হয়না কোন কাজ, মেলেনা কোন সেবা। তাদের অভিযোগ, বিধিমোতাবেক বিআরটিএ অফিসে সরকারি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সেবা নিতে গেলে হতে হয় নানাভাবে হয়রানি। সেকারণে দালালদের মাধ্যমে বাড়তি টাকা ঘুষ দিয়ে সেবা নিতে হয়। তারা বলেন, এসব অভিযান পরিচালনা করে কি লাভ? যখন সরিষার মধ্যে ভূত। নাম প্রকাশ না করায় শর্তে এক দালাল বলেন, ঘুষ ছাড়া কোন কাগজে সাক্ষর করেননা সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) কে,এম মাহবুব কবির। তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমে অফিসের একাধিক হাত বদল হয়ে ঘুষের টাকা যায় সহকারী পরিচালকের পকেটে। প্রসঙ্গত, ৫ আগষ্টের আগে তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। জানা গেছে, গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাদে তিনি অপকর্ম করেও পার পেয়েছেন। তৎকালীন সময় বিআরটিএ অফিসের দূর্নীতি নিয়ে কেউ কোন কথা বললেই উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতেন। সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ মানুষ একাধিকবার এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অপসারণ চেয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় পত্রিকায় বিআরটিএ এর লাগামহীন দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারণবশত কখনো তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। ৫ ই আগস্টে সরকারের পটপরিবর্তনের পরে সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসে ঘুষের টাকা নিতে দালালদের সাথে কৌশলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে দুদকের অভিযানে সেটিও ধরা পড়েছে। দুদক কর্মকর্তারা সরেজমিনে এর সত্যতা পেয়েছে। অভিযান শেষে তদন্তের বিষয় নিয়ে একটি রিপোর্ট হেড অফিসে পাঠানোর পর পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ বলে জানান দুদক কর্মকর্তা।