মোঃ শফিকুল ইসলাম,যশোর
বিদায়ি ২০২৪ সালে যশোর জেলায় অন্তত শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন। বছরজুড়েই জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। ৫ আগস্ট হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ডে শিক্ষার্থী, বিদেশি নাগরিকসহ ২৫ জন মারা যান। জাবির ট্র্যাজেডি ছিল সারা দেশের আলোচিত ঘটনা। এছাড়াও বছরের শুরুতে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্যকে হত্যা ও বছর শেষের দিকে সীমান্তে তিন যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ছিল আলোচিত। ২০২৪ সালজুড়ে যশোর জেলায় আধিপত্য বিস্তার, দখল, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক বিরোধ, পারিবারিক কলহসহ নানা কারণে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ শতাধিক মানুষ খুন হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা তুলে ধরা হল। ১৩ জানুয়ারি যশোর শহরের খড়কি এলাকায় মরিয়ম নামে এক শিশুকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ হত্যা করে সৎমা। ১৭ জানুয়ারি পূর্বশত্রুতার জের ধরে যশোর শহরের আরবপুরে খুন হন মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল মালেক। ২২ জানুয়ারি শার্শা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ জওয়ানদের গুলিতে নিহত হন বিজিবি সদস্য রইচউদ্দিন। ১১ ফেব্রুয়ারি অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২১ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার মালিডাঙ্গা গ্রামে নাইমুর রহমান হিমেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ২৪ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকায় চয়ন দাস নামে এক কিশোর খুন হয়। ৮ মার্চ রাতে যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ১৩ মার্চ শার্শার গোগা সীমান্তে মশিয়ার রহমান নামে এক স্বর্ণ চোরাকারবারির লাশ উদ্ধার করে বিজিবি। ২৪ মার্চ যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ায় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদের চালের আড়তে প্রকৌশলী বায়েজিদ হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৩ এপ্রিল সদর উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামে খাদিজা আক্তার নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার হয়। ১১ মে যশোর শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়ায় কলেজছাত্র নূর হোসেনকে ছুরি মেরে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১ জুন যশোরের অভয়নগরে আফরোজা বেগম নামে এক নারীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ৬ জুন যশোর সদরের ই-ব্লকে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন যুবলীগ কর্মী আলী হোসেন। ৯ জুলাই শহরের রেলগেট এলাকায় ফল ব্যবসায়ী আকিকুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয়। ২০ জুলাই বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুরে তাসনিয়া খাতুন নামে এক শিশুকে যৌন হয়রানির পর শ্বাসরোধে খুন করা হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিকালে শহরের চিত্রামোড়ে হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ অগ্নিকাণ্ডে বিদেশি নাগরিক, শিক্ষার্থীসহ ২৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকেই। ৮ আগস্ট যশোর সদর উপজেলায় দুজন খুন হন। তারা হলেন-চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাদিয়াটোলা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মেহের আলী ও আড়পাড়ার জাহাঙ্গীর আলম মিঠু। ১৯ আগস্ট রাতে ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউপি মেম্বর তালিমুল ইসলামের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর ঝিকরগাছা উপজেলার বায়সা চাঁদপুরে মাঠ থেকে সবজি ব্যবসায়ী রেজাউল হোসেনের লাশ উদ্ধার হয়। ৭ অক্টোবর সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকে হাতুড়িপেটায় হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৪ নভেম্বর শহরের খড়কি এলাকায় জামায়াতকর্মী আমিনুল ইসলাম সজল খুন হন। ২২ অক্টোবর চৌগাছা উপজেলার পুড়াপাড়ায় বিএনপি কর্মী শওকত হোসেন খুন হন। ২১ ডিসেম্বর বেনাপোল সীমান্ত থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। তারা হলেন-বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুচ আলী মোড়লের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, দিঘিরপাড় গ্রামের আরিফ হোসেনের ছেলে সাবুর আলী ও চৌগাছা উপজেলার সাদাতপুরের সাকিবুল। সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন পলাশকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।