নিজস্ব প্রতিবেদক
মোবাইল ফোনে পরিচয়, সেই পরিচয়ে রুপ নেয় প্রেমের সম্পর্ক। দুর থেকে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক চলতে চলতে ইচ্ছে জাগে ঘর বাঁধার। তবে আর প্রেমিকের বিদেশ থেকে ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকা কেনো?সুযোগ তখন হাত ছানি দিয়ে বলে মোবাইলেই তো বিয়ে হয়। তাই সুযোগ কাজে লাগাতে অপেক্ষার দিন না গুনে দিনক্ষণ ঠিক করে হয়ে যায় বিয়ে। শুনতে নাটকীয় মনে হলেও এভাবেই প্রবাসী ছেলেদের বিয়ে করার নজির হুবহু রয়েছে সমাজে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এমন বিয়ে পারিবারিক ভাবে দু’পক্ষের দেখাশুনার মধ্যদিয়ে হলেও এবার হয়েছে ব্যতিক্রম। প্রেমিকা নাসরিন রাজশাহী জেলা থেকে ছুটে এসেছেন প্রেমিকের ঝিনাইদহের বাড়িতে। আর সেখানেই হয় সমস্ত বিয়ের আয়োজন। এদিকে বড় ছেলের পছন্দের কথা ভেবে,লিটনের বাবা মা মেয়েটির সম্পর্কে তার পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়ার কথাও ভুলে যান। স্থানীয় কাজী ডেকে তারা মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে দিয়ে দেন। আর তখনি যেন প্রতারণার ফাঁদে পা দেন লিটন ও তার পরিবার।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার মেহেরচন্ডী উত্তর পাড়ার মোঃ মুনছুর আলীর মেয়ে নাসরীন,মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক ধরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পুটিয়া গ্রামের মোঃ আয়ুব আলীর ছেলে লিটনের বাড়িতে আসেন। লিটন মালয়েশিয়া প্রবাসী। দীর্ঘদিন মোবাইলে সম্পর্কের জের ধরেই বিয়ের সিদ্ধান্ত হলে নাসরীন লিটনের বাড়িতে আসেন। লিটন মালয়েশিয়াতে থাকায় স্থানীয় কাজী ডেকে মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে হয় তাদের। এরপর থেকে বিভিন্ন বায়না ধরে লিটনের কাছ থেকে টাকা ও সোনার গয়না নিতে থাকে নাসরীন। এভাবে লিটনের কাছ থেকে সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করে নাসরীন। প্রবাসী লিটন জানান,এই টাকা দিয়ে রাজশাহীতে একটি ফ্লাট বাড়িও করেছেন নাসরীন। এছাড়াও সাত ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়েছি তাকে। মোবাইলে যখন সম্পর্ক হয় তখন নাসরীন নিজেকে এতিম ও অসহায় বলে পরিচয় দিয়েছিল আমাকে। যে কারণে নাছরীনের কোন কিছুতেই অপুরণ রাখিনি। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি আমি। কিন্তু আমি মালয়েশিয়া থেকে বাড়িতে আসার পর নাসরীনের কিছু কিছু কাজে আমার সন্দেহ হতে থাকে। রাজশাহী তার বাবার বাড়ি বেড়াতে যেতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যেতে চাই না। এছাড়াও ভারতে চিকিৎসা করানোর কথাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কথা বলে এপর্যন্ত প্রায় সাত থেকে আট লঞ্চ টাকা নিয়েছে,কিন্তু পরে শুনতে পেলাম সে চিকিৎসা করাতে ভারতে যায়নি। কেন চিকিৎসা করাতে যায়নি শুনতে চাইলে জানায়,ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এদিকে কয়েক দফা বলার পর রাজশাহী তার বাবার বাড়িতে যেতে রাজি হলে, লিটন রাজশাহীতে যেয়ে দেখে তার ১৮/১৯ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ছেলেটি কার শুনতে চাইলে,তার বোনের ছেলে বলে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিয়ের আগে নাসরীন আমাকে জানিয়েছিলো সে এতিম তার কেউ নেই। বিভিন্ন স্পর্শকাতর কথা বলাই, আমি নাসরীনের প্রতি দুর্বল হয়ে তাকে স্বচোখে না দেখেই এই বিয়েতে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু ঐ ১৮/১৯ বছরের ছেলেটি যে তার এবং এর আগে নাসরীনের বিয়ে হয়েছিল একথা জানতে পেরে আমার মনে ঘৃনার পাত্র হয়ে যায় নাসরীন। একদিকে অন্ধ এই ভালোবাসার সাথে নাসরীনের প্রতারণা,অনদিকে দিনের পর দিন বিভিন্ন অজুহাতে তার লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার ফন্দি লিটনের মগজে নাড়া দেয়। লিটন সাংবাদিকদের জানায়,একদিকে আমার সরলতার সুযোগ,অন্যদিকে ১৭/১৮ বছর বিদেশ থাকায় আমার টাকা আছে এটা ভেবেই নাসরীন মনে হয় আমাকে টার্গেট করেছিল। একথা আমি বুঝতে পারিনি। আমার এতো কিছু থাকতেও আমি একজন এতিম মেয়েকে অন্ধ ভাবে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু এই প্রতারকের ফাঁদে আর নয়।এ সমস্ত নিয়ম মেনে কোর্টের মাধ্যমে ডিভোর্স দিয়ে আমি মালয়েশিয়া চলে যায়। এতেও ক্ষ্যান্ত না হয়ে ডিভোর্সের দুই মাসের মধ্যে আমার চাকরি খেতে নাসরীন মালয়েশিয়া চলে যায়। লিটন বলেন,কতোটা দুর্ধর্ষ হলে একটি মেয়ে বিদেশে যাওয়ার মত রিস্ক নিতে পারে এটা আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চায়। এঘটনার পর আমি থানাতে একটি জিভি করেছি। আমি বিদেশে যেয়েও নাছরীনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। লিটনের বাবা আয়ুব হোসেন জানান,আমরা নাসরীনের ছলনায় ভুলে গিয়েছিলাম। নাসরীনের এর আগে বিয়ে হয়েছে এবং ১৫/১৬ বছরের একটি ছেলে আছে এর কোন কিছুই আমাদের জানায়নি। পরে আমার ছেলে জানতে পেরে তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। তিনি বলেন,এই প্রতারণার কথা শুনেও আমরা তাকে মেনে নিয়েছিলাম। বিভিন্ন অজুহাতে আমার ছেলের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করেছে নাসরীন। পরে শুনতে পেলাম ডিভোর্সের পর ক্ষিপ্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় চলে গেছে নাসরীন। আমরা এই মেয়েটির হাত থেকে বাঁচতে চাই। বর্তমানে নাসরীন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।