1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

করোনামুক্ত চিকিৎসক কাজে ফিরলেন, বললেন, ‘ভয় পাবেন না’

  • প্রকাশের সময় বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০
  • ৭০ বার সংবাদটি পাঠিত

করোনাভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ২৬ দিন পর তিনি আবার চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছেন। এত দিন তিনি বাসায় একা কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফ্ল্যাটে তিন বেলা খাবার পৌঁছে দিতেন। আর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন।

ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৭ দিন আগে (২ এপ্রিল) আমার হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা একজন বৃদ্ধ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম বলে আমার ধারণা। তখন থেকে আমার পরিবারের সদস্যের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। বাসায় কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নিয়ে আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আজ থেকে আমি আবার কাজে যোগ দিয়েছি। সত্যি আমি খুব ভাগ্যবান। সবাইকে আমি বলব, করোনায় আক্রান্ত হলে কোনোভাবে আপনি আতঙ্কিত হবেন না, ভয় পাবেন না।’

করোনামুক্ত চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

করোনার কবল থেকে মুক্তি
চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২ এপ্রিল বেলা দুইটার দিকে পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে একজন বয়স্ক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম ওই রোগীর চিকিৎসা করেন।
Lifebuoy Soap

মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওই রোগীর চিকিৎসা করি দুপুরে। সন্ধ্যার মধ্যে খবর পাই, ওই রোগী করোনা পজিটিভ। কারণ, আগেই তিনি নমুনা দিয়ে এসেছিলেন। ওই রোগীর করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার তখন মনে হয়, আমাকে আমার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা থাকা উচিত। হাসপাতাল থেকেই বাবাকে ফোন দিয়ে বলি, আমি বাসায় গিয়ে সবার থেকে আলাদা থাকব।’

চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম বাবা-মায়ের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁদের নিজ বাসার তিনতলায় একটা ফ্ল্যাটে একা থাকা শুরু করেন। তাঁর বাবা-মা আলাদা বাসায় বসবাস শুরু করেন।

চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘২ এপ্রিল বাসায় ঢোকার পর থেকে শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করে। দুদিন পর ৪ এপ্রিল আমার শুকনা কাশি, গলাব্যথা আর জ্বর শুরু হয়। এই উপসর্গ দিন দিন বাড়তে থাকে। যে কারণে আমি ৮ এপ্রিল নিজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসি। সেদিন রাতেই জানতে পারি, আমার করোনাভাইরাস পজিটিভ। আর ১০ এপ্রিলের পর শরীর আরও খারাপ হয়। জ্বর, কাশি বেড়ে যায়। তবে ১২ এপ্রিলের পর আবার আমার জ্বর, সর্দি, কাশি কমতে শুরু করে।’

বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যাপারে মাহমুদুল ইসলাম জানালেন, তিন তলা ফ্ল্যাটের দরজার সামনে তাঁর পরিবারের সদস্যরা খাবার রেখে যেতেন। যে জায়গায় খাবার রাখা হতো, তিনি সেই জায়গাটা জীবাণুমুক্ত করে তবেই খাবার ভেতরে নিয়ে যেতেন। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার থালা জীবাণুমুক্ত করে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে রেখে যেতেন। এভাবে তাঁর কেটেছে ২৬ দিন। কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিন মেনে চলার কারণে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।

চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘২ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার আগে চার কার্টন মিনারেল পানি কিনে নিয়ে আসি। কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় আমার বাসার মগ কিংবা জগ—কোনো কিছুই ব্যবহার করিনি। বাইরে থেকে কিনে আনা মিনারেল পানিই শুধু পান করেছি। আমার বাসার কারও সংস্পর্শে আমি আসিনি। কারণ, আমি ভালোভাবে জানি, করোনা ভাইরাস কী পরিমাণ ছোঁয়াচে একটা রোগ।’

মাহমুদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘নরমাল কাশির সময় মনে হয়, বুকের ভেতর কফ জমে আছে। কাশি এলে কফ বের হয়। তবে করোনার কাশির সময় মনে হবে না যে বুকের ভেতর কফ জমে আছে। বরং কাশির সময় মনে হবে যেন গলার ওপরের অংশে ব্যথা।’

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ ঠান্ডা, কাশি কিংবা জ্বর হলে আমরা যে ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকি, সেই একই চিকিৎসা করোনার রোগের ক্ষেত্রেও।’

করোনায় আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করে তরুণ চিকিৎসক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর মোটেও আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধক্ষমতা) এমন যে যখন আমাদের মন খারাপ থাকে, তখন কিন্তু আমাদের ইমিউন সিস্টেম কিছুটা ডাউন (দুর্বল) থাকে। যখন আমরা হাসিখুশি থাকি, আনন্দে থাকি, তখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম বেশি কার্যকর থাকে। এটা মেডিকেল সায়েন্সে প্রমাণিত। যদি কেউ ভয় পান, যদি নিজেকে দুর্বল করে ফেলেন, তাহলে শরীর খারাপ হবে। মানসিক দুর্বলতা থেকে শারীরিক দুর্বলতা চলে আসবেই।’

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ভিটামিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস পজিটিভ হলেই যে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এমন নয়। তবে যাঁরা বয়স্ক, যাঁদের হার্টে সমস্যা আছে, ডায়াবেটিস আছে, উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁরা আক্রান্ত হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। আর তীব্র জ্বর আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে, এমন লক্ষণ দেখা দিলে তিনি যে বয়সেরই হোন, তাঁকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।’

মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস ঠান্ডা-কাশি জ্বরের মতো একটা অসুখ। যাঁদের ধূমপানের কোনো ইতিহাস নেই, যাঁদের ডায়াবেটিস, হাইপার-টেনশন নেই, শ্বাসকষ্ট নেই, তাঁদের এই রোগ নিয়ে বেশি চিন্তিত কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সিস্টেমেটিকভাবে চিকিৎসা করালে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION