কেশবপুর(যশোর)প্রতিনিধি
পলিতে নদী ভরাটের প্রভাবে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হয়ে দু’মাস ধরে পানিবন্দী কেশবপুর ও মনিরামপুরের নিন্মাঞ্চলের জনগণ। বন্যা থেকে রক্ষায় ২৭ বিল ও অন্যান্য এলাকার জনগণ পানি নিষ্কাশনে সেচপাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এজন্যে সেচ কমিটি বিল খুকশিয়ার ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেটের পলি অপসারণ কাজ শরু করেছে। কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৬৮টি গ্রামের ২৭ বিলের পানি বিল খুকশিয়ার ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেট দিয়ে হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। হরি নদী ও খুকশিয়ার খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেট পলিতে ভরাটের কারণে ২৭ বিল এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার ধারণ করেছে। ভবদহ এলাকার দু’উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দী জীবন যাপণ করছে। পানিবন্দী এলাকার জনগণ ৩ যুগ ধরে এভাবেই পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদ করে আসছে। ৮ অক্টোবর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ৫ দফা দাবিতে পানি সম্পদ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়া, ৯ অক্টোবর সুফলাকাটি ইউপি চত্বরে বানভাসীদের বিশাল সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পানি সেচ প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাথরা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭/৮ দিন ধরে বুড়-লি ও পাঁজিয়া-পাথরা বিল এলাকার ৪৭ গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৪/২৫টি সেচ পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন চলছে। এ পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়িঘর থেকে পানি নামা শুরু হওয়ায় বানভাসিরা সুফল পেতে শুরু করেছে। তাদের দেখে বিল গরালিয়ার প্লাবিত ২৭ গ্রামের পানি নিষ্কাশনে ৪টি সেচযন্ত্র দিয়ে এবং ২৭ বিল সেচ কমিটি খুকশিয়া খালের ৮ ব্যান্ড স্লুইচ গেটের পলি ২/৩ দিন ধরে অপসারণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মনিরামপুরে আশাননগর গ্রামের শিক্ষক আদিত্য সরকার বলেন, বানভাসী জমির মালিকরা বিঘা প্রতি ৫’শ টাকা করে ও অবশিষ্ট টাকা ঘের মালিকরা দিয়ে এ সেচকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ভবদহের জলাবদ্ধ ৫২ বিলের পানি মনিরামপুর উপজেলার কোনাখোলা বাজার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বিল খুকশিয়ায় ঢুকছে। এতে সেচকার্য বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিল খুকশিয়া পানি সেচ প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক ও সুফলাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মুনজুর রহমান বলেন, হরি নদী ও খুকশিয়া খালের ৮ ব্যন্ড স্লুইচ গেট থেকে হরি নদী পর্যন্ত ২২০ ফুট খাল পলি পড়ে ৫ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হরি নদীর বিল খুকশিয়া থেকে ডুমুরিয়ার শোলগাথিয়া ব্রিজ পর্যন্ত ১ কিলোমিটার পলি অপসারণ কাজ করছে। কিন্তু বিলের পানি থেকে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় এতে পানি নিষ্কাশন হবে না। যেকারণে বানভাসীরা বৈদ্যুতিক সেচ মোটর দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়ে আসছিল। খালের পলি অপসারণ করতে ৮ ইঞ্চি সাইজের ৮টি বৈদ্যুতিক সেচ মোটর দিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ মাস ব্যাপী ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম চলানো হবে।
কেশবপুর পাউবো’র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরিহর, বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা ও হরি নদীর ভরাটকৃত পলি স্কাভেটর দিয়ে অপসারণ কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হলে দ্রুত পানি সমস্যার সমাধান হবে। উল্লেখ্য, কেশবপুরে ১০৪ গ্রাম প্রায় ২ মাস ধরে প্লাবিত। ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩৬৪০টি মাাছের ঘের, ২৪২০টি পুকুর পানিতে তলিয়ে ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১৮৩০ হেক্টর আমন, ২৩৯ হেক্টর সবজি, পান, তুলা, মরিচ ও ৬০ হেক্টর তরমুজ পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।