আসাদুজ্জামান সনেট
মোবারকগঞ্জ চিনিকলে আখ ক্রয় ও কৃষকের টাকা পরিশোধে অটোমেটেড পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। দেশের ৯ চিনিকলের মধ্যে মোবারকগঞ্জে প্রথম এ পদ্ধতির যাত্রা শুরু হলো। এটা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন পাইলট প্রোগ্রাম। গত ১২ ডিসেম্বর মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ২০২৫-২৬ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আখ ওজন ও টাকা পরিশোধে খুশি কৃষক ও মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পদ্ধতি চালু করার ফলে খরচ কমবে বলে আশা করছেন মিল কর্তৃপক্ষ।
বিগত বছরগুলোতে টাকা পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় আখ চাষ কমেছে আশঙ্কাজনভাবে। এবছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে আখের ওজন ও টাকা পরিশোধে ভোগান্তি না থাকায় কৃষকরা আবার আগের মত আখচাষে ফিরবেন বলে আশা মিল কর্তৃপক্ষের।
মিল কর্তৃপক্ষ ও টেকনিশিয়ান টিমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে আখ ভর্তি গাড়ি ওজন যন্ত্রের উপর ওঠানোর পর মিল থেকে দেওয়া ইপুর্জিতে থাকা কিউআর কোড পজ মেশিনে স্ক্য্যান করার সাথে সাথে কৃষকের যাবতীয় তথ্য স্ক্রিনে ভেসে উঠছে। এরপর ডিজিটাল ঘড়িতে দেখানো গাড়িসহ আখ ওজনের সংখ্যাটি পজ মেশিনে স্থাপিত ক্যামেরায় ছবি তোলা হচ্ছে। এরপর বিশেষ এ্যাপসে ইমেজ প্রসেসিং করে প্রিন্ট হয়ে হচ্ছে যাবতীয় তথ্য। এরপর কৃষক তার আখ নিদিষ্ট স্থানে পৌছে দেওয়ার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় অপর একটি মেশিনে খালি গাড়ি ওজন দেওয়া হচ্ছে। এবার আখসহ ওজনের পর দেওয়া কাগজে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করার পর একইভাবে সকল তথ্য কম্পিউটারের স্ক্রীনে ভেসে উঠছে। এসময় ডিজিটাল ঘড়িতে ওঠা খালি গাড়ির ওজন সংখ্যাটি কম্পিউটারে স্থাপিত ক্যামেরায় তোলা ইমেজ প্রোসেসিং করে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এরপর প্রকৃত আখের ওজন ও কৃষকের তথ্য চলে যাচ্ছে মিলের অর্থ বিভাগের কম্পিউটারে। সেখান থেকে এ্যপ্রুভ করলেই বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে আখের টাকা চলে যাচ্ছে কৃষকের মোবাইলে। টাকা প্রাপ্তির কাজটি এক-দুই মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টা মধ্যে সম্পন্ন করা হচ্ছে। আখ ক্রয়ের জন্য মিলগেট ও কেন্দ্র মিলিয়ে ৪২ ডিজিটাল ওজন যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে।
এসব কাজ সম্পন্ন করতে “স্মার্ট ক্যান প্রকিউরমেন্ট এন্ড পেমেন্ট সিস্টেম (ঝসধৎঃ পধহব ঢ়ৎড়পঁৎবসবহঃ ধহফ ঢ়ধুসবহঃ ংুংঃবস)”নামে একটি বিশেষ এ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এ্যাপসটি তৈরি এবং মিল পর্যায়ে সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন ওয়ার্ল্ড টেক নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান।
আইটি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড টেক এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, এবারই প্রথম মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ওজন ও টাকা পরিশোধে অটোমেটেড পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। দেশের চিনিকলগুলোর মধ্যে এটা প্রথম হলেও আমরা সফল। এ পদ্ধতি চালুর ফলে অল্প জনবল এবং কম খরচে সহজ ও স্বাচ্ছন্দে কৃষকের আখ বিক্রি ও টাকা পাচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে প্রথমে খরচ হলেও অনেক বছর পর্যন্ত মানে নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত একই যন্তপাতি ব্যবহার করা যাবে। এতে মিলের খরচ কমবে বলে যোগ করেন।
মিলগেট এলাকার আখচাষি মিজানুর রহমান জানান, উদ্বোধনের দিন সন্ধ্যায় আমি মিলে আখ দিয়েছিলাম। রাতে বাড়ি এসে দেখি আমার মোবাইলে বিকাশ পেমেন্টের মাধ্যমে টাকা এসে গেছে। আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পরে সকালে উঠে প্রতিবেশীদের দেখিয়ে নিশ্চিত হয় এটা আমার আখ বিক্রির টাকা।
মিলের মহা-ব্যবস্থাপক (কৃষি) গৌতম কুমার মন্ডল জানান, এবারই প্রথম ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে আখের ওজন ও কৃষকের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। আশা রাখি এখন থেকে কৃষক ভাইদের আখের ওজন ও টাকা প্রাপ্তি নিয়ে কোন ভোগান্তি থাকবে না। বিগত সময়ে আখের মূল্য পরিশোধ ও ওজন নিয়ে কৃষকদের মধ্যে নানা অভিযোগ ও অসন্তুষ্টি ছিল। কৃষকদের আখের টাকা পরিশোধ করতে বেশ সময় লেগে যেত। যে কারনে কুষকদের আখচাষে অনিহা ছিল। আশা করা যায় এখন থেকে কৃষক আগের মত আখচাষে ফিরবেন।
চলতি ২০২৫-২৬ মাড়াই মৌসুমে কৃষকদের আখের মূল্য ধরা হয়েছে মন ২৫০ টাকা। এটি সুগার মিলের ৫৯তম আখ মাড়াই মৌসুম। এ বছর ৫৬ দিনে ৮০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছেন। চিনি আহরণের আনুমানিক হার ধরা হয়ে ৫.৫০ শতাংশ।













