জহুরুল ইসলাম
ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত দুই সহস্রাধিক মানুষ দ্রুত পানি সরানোর দাবিতে আজ যশোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীদের ‘পানি সরাও, জীবন বাঁচাও’, অবিলম্বে টিআরএম (নদীতে জোয়ারাধার বাস্তবায়ন) চালু, আমডাঙা খাল সংস্কার কর- স্লোগানে গোটা চত্বর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।গতকাল রবিবার বেলা ১১টা থেকে ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকা যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির’র ব্যানারে জড়ো হতে থাকেন। তারা পানি সরানোর দাবিতে সেখানে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করেন। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন তাদের দাবিসমূহ উত্থাপন করে বক্তব্য দিতে থাকেন। দুপুর একটার দিকে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদের সেলফোনে ভার্চুয়ালি অংশ নেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপদেষ্টা উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উদ্দেশে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ একটি টিম ভবদহ অঞ্চলে যাবেন। তারা আপনাদের সাথে কথা বলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়- সে বিষয়ে আলোচনা করবেন। এরপর বিষয়টি আমি উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করবো। এবার আর সমস্যার সমাধান আশপাশ দিয়ে হবে না। তিনি বলেন, এতোদিন আমি আপনাদের সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এখন এই সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব আমার পরে বর্তেছে। সমাধান যেন আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে হয়- অবশ্যই সেই বিষয়টি যতো দ্রুত সম্ভব তা সুনিশ্চিত করা হবে।সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যেন এই সমস্যার সমাধানে কাজ করা হয় আপনাদের এই দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বলতে চাই, এই বিষয়টি আমি তাদের সঙ্গেও আলোচনা করবো।পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ উত্থাপিত ভবদহ অঞ্চলে ব্যাংক ও এনজিওর সুদ মওকুফ, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দাবির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস, প্রভাষক কানু বিশ্বাস, তারক বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এছাড়া জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন বাসদ নেতা হাচিনুর রহমান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ নেতা তসলিম উর রহমান, সিপিবি নেতা অ্যাড. আমিনুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ। সমাবেশে সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বক্তৃতাকালে বলেন, গতকাল রাতে টেলিফোনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেছিলেন অবস্থান চলাকালে জেলা প্রমাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে তিনি কথা বলবেন। কিন্তু আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম ডিসি মহোদয়ের উপস্থিতিতে আপনি কথা বলবেন। কিন্তু তিনি (ডিসি) আমাদের সময় দেননি। তিনি এখানে এসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সামনে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি। সেকারণে তার উপস্থিতি ছাড়াই মাননীয় উপদেষ্টা জলাবদ্ধ মানুষের সামনে তার বক্তব্য রেখেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তার বক্তব্য সরাসরি শুনেছেন। ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, মাননীয় উপদেষ্টা খুব শিগগির তার মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইডব্লিউএমের প্রধান নির্বাহীসহ একটি টিম ভবদহ অঞ্চলে পাঠাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তার এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ ১০ লাখ মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং ব্যাংক ও এনজিওদের সুদসহ ঋণের কিস্তি মওকুফের দাবি জানিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় উপদেষ্টা সেগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।অবস্থান চলাকালে বেলা পৌনে দুইটার দিকে যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলাম তার কার্যালয় থেকে নিচে নামেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দেওয়া স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।তিনি জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের দাবির সাথে একমত পোষণ করেন এবং সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।