উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মিশন শেষে,সরকার বিরোধী আন্দোলন ঠেকানোর তৎপরতায় ছিলো তারা
শাহিনুর রহমান পান্না
আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের ভিতরে অফিসার্স ক্লাবে অবস্থানকারী চার ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর কর্মকর্তাকে নিয়ে সর্বত্ব নানা গুঞ্জন চলছে। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রীতা পাড়ে এর ব্যবস্থাপনায় এই চার গোয়েন্দা সংস্থার কর্ম তৎপরতা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, মিনি ইনডোর স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত উপজেলা পরিষদের অফিসারদের মিলন কেন্দ্র অফিসার্স ক্লাব। এই ক্লাবে বিগত ৫ আগস্টের পূর্বে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর চার কর্মকর্তা অবস্থান করেছেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রীতা পাড়ে তাদেরকে এই ক্লাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ‘র’ এর কর্মকর্তাদের বাজারসহ পোষাক-আশাকের ব্যবস্থা করে দিতেন সমবায় অফিসার তারিকুল ইসলাম ও কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার। তাদের রান্না-বান্নাসহ খাদ্যের সকল দায়িত্ব পালন করেন রীতা পাড়ে নিজেই।
তাদের অন্যান্যে সকল দায়িত্ব পালনে সদা সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন অন্যান্য চার কর্মকর্তা। সূত্রমতে, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে এদেরকে ভারত থেকে আনা হয় রীতা পাড়ের মাধ্যমে। উদ্দেশ্যে ছিলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলুকে বিভিন্ন কলা কৌশলের মাধ্যমে নির্বাচিত করে চেয়ারে বসানোর জন্য। বিগত নির্বাচনে রীতা পাড়ের এই মিশন সফল হয় এবং আমজাদ হোসেন লাভলু অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে চেয়ারে বসেন। গুঞ্জন আছে সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে সহায়তায় তার পুত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভোর মাধ্যমে রীতা পাড়ে ‘র’ এর কর্মকর্তাদের এখানে আনতে সক্ষম হন এবং উপজেলা পরিষদের সরকারী এই কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তাদেরকে অফিসার্স ক্লাবে অবস্থান করার সুযোগ করে দেয়। উপজেলা পরিষদের একাধিক সূত্র জানায়, ‘র’ এর কর্মকর্তারা ক্লাব থেকে বের হওয়ার সময় প্রায় দিন সরকারী এই চার কর্মকর্তা তাদের সাথে থাকতেন। অনেকেই অচেনা এই কর্মকর্তাদে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করলেও কেউ মুখ খুলে প্রকাশ করতে সাহস পায়নি। কেননা সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে রীতা পাড়েও উপস্থিত থাকতেন। জানাগেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মিশন শেষ হওয়ার পর দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে উঠে তখনও ‘র’ এর চার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের অফিসার্স ক্লাবে অবস্থান করতে দেখা গেছে। অফিস টাইম শেষে অনেক কর্মকর্তা গোপনে এদের সঙ্গে দেখা করতেন। পুলিশেরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাদা পোষাকে এই ক্লাবে আসতে দেখা গেছে। স্থানীয়দের ধারণা সরকার বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নসাৎ করার জন্য এই ক্লাবে গোপন বৈঠক হতো। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, তার পুত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য শুভ, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহবায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু এবং সর্বোপরি রীতা পাড়ে। এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় দুই মাস পর বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবে অবস্থানকারী চার ‘র’ এর কর্মকর্তাদের নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের মতে ‘র’ কর্মকর্তাদের অবৈধ তৎপরতায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম, ঋতুরাজ সরকারসহ অন্যান্যেরা এখনো এই উপজেলা পরিষদে বহাল থাকায় নতুন করে অর্ন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে পারে। এছাড়াও আটক হয়নি আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন শীর্ষ নেতা। প্রচার আছে উপজেলার এই চার কর্মকর্তা বিভিন্ন ভাবে তৎপরতা চালিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, তার পুত্র সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, রীতা পাড়েসহ অন্যান্যেদের সঙ্গে সার্বাক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ফলে তাদের গোপনে পলাতক থাকার পথ সুগম হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগে যেহেতু এই ঘটনাটির উৎপত্তি। সেই কারণে আমি এ বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করতে পারবো না। তবে আমাদের উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোটি যেহেতু পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সেই কারণে ডাকবাংলোর অতিথিরা অফিসার্স ক্লাবে থাকার সুযোগ পেয়েছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদী থাকার কোন নিয়ম অফিসার্স ক্লাবে নেই। এ বিষয়ে আমি খোজ খবর নিয়ে তবে বিষয়টির উপরে মন্তব্য করতে পারবো।