এস এম তাজাম্মুল,মনিরামপুর
চলতি কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে মনিরামপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা।তার মধ্য সবচেয়ে জলাবদ্ধতায় দূরাবস্থায় আছে মনিরামপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মানুষ।
এর একমাত্র কারন হয়ে দাড়িয়েছে পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থার যত্রতত্র কাজ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,বসতবাড়ি,ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সহ সমস্ত পৌরসভার রাস্তাঘাট এমনকি মনিরামপুর পৌরশহরের প্রধানসড়কেও জলাবদ্ধতার চিত্র ভেসে উঠেছে।
মাছবাজার,কাঁচাবাজার,গরুহাটসহ প্রতিটি বাজার ও অলিগলিতে সামান্য বৃষ্টি হলেই চোখে পড়ে ব্যাবসায়ীসহ পৌরবাসির ভোগান্তি।
মনিরামপুর পৌরশহরসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা যায়,প্রধানসড়ক থেকে যে সমস্ত বাইপাস পিচ ও ইটের সলিং বিভিন্ন রাস্তারসাথে সংযুক্ত হয়েছে প্রতিটি সড়কেই হাটুসমান পানি।আবার এসমস্ত রাস্তা থেকে যে সকল রাস্তা বিভিন্ন ওয়ার্ডের আবাসিক এলাকায় গেছে সে সমস্ত রাস্তার অবস্থা আরো শোচনীয়।
রাস্তার পাশ দিয়ে কোথাও কোথাও ড্রেনেজ ব্যাবস্থা আছে,আবার বেশিরভাগ রাস্তার পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যাবস্থা নাই।তবে যে সকল রাস্তার ড্রেনেজ ব্যাবস্থা আছে তার শতকরা ৯০%ড্রেনেজ ব্যাবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে আছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অবেহালা আর অযত্নে।
মনিরামপুর পৌরসভার মাঝদিয়ে বয়ে গেছে হরিহর নদ।পৌরকর্তৃপক্ষের তথ্যঅনুযায়ী, এই হরিহর নদের সাথে ড্রেনেজ ব্যাবস্থা সংযোগ করে পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা থেকে পৌরবাসিকে মুক্ত রাখা।
তবে বিগত কয়েক বছরের তথ্যঅনুযায়ী,মনিরামপুর পৌরশহর সহ পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের কাজ করানো হয়েছে।
অধিকাংশ কাউন্সিলররা ড্রেনের কাজ করিয়েছেন নির্ধারিত শিডিউলের বাইরে তার নিজের মতো করে।ড্রেনের কাজের জন্য নিম্নমানের রড,সিমেন্ট,বালি এমনকি ড্রেনের আয়োতনেও আছে নানা জটিলাতা।তারপরেও ড্রেনের সংযোগস্থলেও নেই কোন সঠিক সমাধান।কোথায় মিলবে ড্রেন সেটাও নির্ধারিত হয়নি ড্রেনেজ ব্যাবস্থায়।
আবার স্থানীয়দের অবহেলায় ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে অনেক ড্রেন হয়ে পড়েছে অকেজো।
এটাকে সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌরসভার কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন ব্যাবসায়ী ও পৌরবাসী।
হাটুপানিতে দাড়িয়ে কথা হয় মনিরামপুর পাইকারি কাঁচাবাজারের আড়ৎ ব্যাবসায়ী আনসার কাজীর সাথে,তিনি জানান আমাদের পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যাবস্থার বেহালদশার কারনে আজ বাজারের প্রতিটি ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে,এতে করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।বাজারে কৃষকেরা কাঁচামাল আনতে হিমশিম খাচ্ছে শুধু জলাবদ্ধতার কারণে। আমারও সঠিক সময়ে মালামাল বিভিন্ন বাজারে পাঠাতে পারছিনা এই জলাবদ্ধতার কারনে।এতে করে কাচামালে পচন ধরছে।ব্যাবসায় মন্দা সৃষ্টি হচ্ছে। লাভের বাবদে দিন গেলেই লোকশানের পরিমান বাড়ছে।
এলাকাবাসিরও একই অভিযোগ যে,পৌরসভার অবহেলা ও অযত্নে অনেক ড্রেন বদ্ধ হয়ে পড়ে আছে।বিগত কয়েক বছরেও কোন পৌরকর্তৃপক্ষ আসেনি ড্রেন সংস্কার বা ড্রেনের ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে।বাসাবাড়িতে পানি বেঁধে যাওয়াতে ঘর থেকে বাইরে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পৌরবাসীর।
মনিরামপুর পৌরসভার ৫নং তাহেরপুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রওনক প্রিতিনিধিকে জানান,কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে আমার বাড়ির সামনে পিছনে ও বাড়ির ভিতরে কোথায় হাটুসমান আবার কোথাও আরো বেশি পানিতে তলিয়ে আছে।বাড়ির পাশদিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থার জন্য পৌরসভা বরাবর একাধিক অভিযোগ দিলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।জলাবদ্ধতার কারনে বাড়ি থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়াতে রান্নাবান্না করতে সমস্যা হওয়াতে খাওয়া দাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটছে।পৌরসভার সঠিক কাজ হলে হয়তো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
এ ব্যাপারে মনিরামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় হতাশায় প্রতিটি দিন পার করছে পানিবন্ধি মনিরামপুর পৌরবাসী।