জহুরুল ইসলাম
আজ শনিবার দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাব যশোরে সদর উপজেলার হামিদপুর গ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে এস্কোভেটর দিয়ে বসত-বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া এবং লুটপাটের অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২৭ জুন দুপুর অনুমান সাড়ে ১২টার সময় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের নেতৃত্বে তার পুত্র পিয়াস, কুখ্যাত সন্ত্রাসী মিল্টন, নুরুল ইসলামসহ তাদের প্রত্যক্ষ মদদে মাইক্রো, প্রাইভেট ও মোটর সাইকেল যোগে আসা আরও অজ্ঞাতনামা প্রায় ১৫০/২০০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১টি এস্কোভেটর ও ৭টি ট্রাক্টরের টলি নিয়ে আকর্ম্মিকভাবে অনাধিকার তার বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সকলকে জিম্মি করে প্রথমে তাকে মারপিট করে মোবাইল সেট কেড়ে নেয়। এরপর সন্ত্রাসীরা আমার বড়পুত্র আরমান হোসেন ও ছোট পুত্র জাফরীকে মারপিট করে মোবাইল সেট কেড়ে নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। এসময় আমার স্ত্রী রুবিনা জামান, বৌমা কানিজ ফাতেমা ও সুমি আক্তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তাদেরকেও হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ীভাবে মারপিট করে সন্ত্রাসীরা। এসময় সন্ত্রাসীরা একে একে ঘরে ঢুকে হকিস্টিক দিয়ে মালামাল ভাংচুর ও লুটতরাজ চালায়। সন্ত্রাসীরা ওয়্যারড্রোপ ভেঙ্গে জমি বিক্রির নগদ ১০ লাখ টাকা, প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৩০ ভরি স্বর্ণের গহনা, ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৩টি গরু, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ৬টি ছাগল, ৯ হাজার টাকা মূল্যের ৬টি রাজহাস, ৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি মুরগী, ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের ১৫টি পাতিহাস ও ১১০ টি কবুতর, ১ লাখ টাকা মূল্যের ব্যাটারীসহ ৪টি সোলার প্যানেল, ৩০ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি লেপ-তোষক, ৩ লাখ টাকা মূল্যের ১৫০ সেপ্টি মেহগনির সাইজ কাঠ, ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৬০ মন গম, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ৯০ মন ধান, ১ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ বস্তা খৈল, ১ লাখ টাকা মূল্যের ২৫ মন তিল, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ১টি পানির মটর ও বিভিন্ন ফল-ফলালীসহ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুটপাট করে সন্ত্রাসীরা। এসময় এস্কোভেটর দিয়ে দুটি ছাদের পাকা বিল্ডিং গুড়িয়ে দিয়ে সর্বমোট দেড় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধন করে শহিদুল ইসলাম মিলন গ্যাং।
সন্ত্রাসীরা একদিকে লুটপাট আর অন্যদিকে একটি এস্কোভেটর দিয়ে ৮ রুমের ছাদের দুটি বসত-ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় ৬টি ট্রাক্টরের টলিতে করে লুটকৃত মালামাল নিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। মিলন গ্যাং পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ, সাংবাদিক এবং স্থনীয় জনগন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘর স্বচক্ষে দেখেন। সন্ত্রাসীরা যখন ধ্বংযজ্ঞ ও বাড়িতে লুটপাট চালায় তখন তাদের এক অংশ অস্ত্র নিয়ে বাড়ির চর্তুরদিক ঘিরে রেখেছিল। কাজেই সাহায্যের জন্য এলাকার জনগণও ভয়ে এগিয়ে আসতে পারেনি। ঘটনার শেষ পর্যায়ে অবশ্য পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের একটি এস্কোভেটর ও একটি ট্রাক্টরের টলি জব্দ করে এবং ৩ জনকে আটক করে। এলাকার শত শত লোক সন্ত্রাসীদের এই মধ্যযুগীয় ধ্বংযজ্ঞ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাছাড়া সন্ত্রাসীরা আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে যেভাবে জিম্মি করে রেখেছিল তাতে করে আমার পরিবারের কারো বাঁচার আশা ছিল না। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসীদের নিয়ে শহিদুল ইসলাম মিলন আমাদের বাড়ি লুটপাট করার পর আমার ছোট বৌমা সুমি আক্তারকে অপহরণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান শিল্প ব্যাংক থেকে হামিদপুর গ্রামে নিলামের মাধ্যমে ২ একর ৯৭ শতক জমি খরিদ করেন। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তিনি উক্ত সম্পত্তির উপর বসবার করে আসছেন। যার বৈধ কাগজপত্র তার কাছে আছে বলে তিনি প্রদর্শন করেন। অথচ শহিদুল ইসলাম মিলন উক্ত সম্পত্তি তার বিয়াই নুরুল ইসলামের দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে ওই সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করে আসছেন। তাছাড়া শহিদুল ইসলাম মিলনের বিয়াই নুরুল ইসলামের ছেলে বিশেষ বাহিনীর একজন বড় কর্মকর্তা। মিলন দলীয় প্রভাব এবং ঐ বড় কর্মকর্তার ভয় দেখিয়ে স্থানীয় প্রসাশনকেও এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছেন। কাজেই স্থানীয় প্রশাসন আসাদুজ্জামানের বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের সময় আসতে বিলম্ব করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এব্যাপারে ভূক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে আসাদুজ্জামানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তার বিয়াই শুকুর আলী ও ইদ্র্রিস আলী, বড়পুত্র আরমান হোসেন, মেঝো পুত্র আফরুজ্জামান, হাসানুজ্জামান, হাবিবুল্লাহ বাহারসহ এলাকার প্রায় শতাধিক লোক।