1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

লোকসানে দক্ষিণের চামড়ার বাজার

  • প্রকাশের সময় সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪
  • ২৯ বার সংবাদটি পাঠিত

কণ্ঠ ডেস্ক

সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম রাজারহাটে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কমে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে বলে দাবি এখানকার ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।তবে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের দাবি, চামড়ার আকার ও মান অনুযায়ী তারা উপযুক্ত দামই দিচ্ছেন। কোরবানির ঈদ পরবর্তী বড়হাটে এ চিত্র উঠে এসেছে। এদিন প্রায় তিন কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট। ঢাকার পরে দেশের অন্যতম বৃহত্তর চামড়ার মোকাম এখানে। এ মোকামে প্রায় ৩০০ আড়ৎ রয়েছে। সপ্তাহে দুদিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে হাজির হন এ হাটে। প্রতি কোরবানির ঈদ ঘিরে কয়েকটি হাটবারে রাজারহাটে ১৫-৩০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়।এ হাটে কোরবানি ঈদ পরবর্তী প্রথম শনিবার জমজমাট আকার ধারণ করে। শনিবার (২২ জুন) সেই হাট জমজমাট হলেও হতাশার কথাই শুনিয়েছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীর।রাজারহাটে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পরিবহনে চামড়া এনে স্তূপ করে রেখেছেন। আবার স্থানীয় আড়তদাররা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্তূপ করা চামড়া উল্টে-পাল্টে দেখছেন। দাম নিয়ে চলছে দুই পক্ষের দর কষাকষি।হতাশা প্রকাশ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির পশুর চামড়ার দামে খুশি নন তারা। এক লাখ ৮০ হাজার বা দুই লাখ টাকার একটি গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ছাগলের চামড়া আড়তদাররা কিনছেই না। কেউ কেউ ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত ছাগলের চামড়ার দাম পেয়েছেন।ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। মূলত রাজারহাটে সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা পূঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না।যশোর সদরের ইছালি গ্রামের বিশ্বজিৎ কুমার ১২২ পিস গরু ও ২০ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছিলেন রাজারহাটে। প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কমে তিনি চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত ৩-৪ বছর ধরে রাজারহাটে চামড়ার দরপতন চলছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য ৫০ টাকা ফুট হলেও দাম পাওয়া যাচ্ছে ২৫ টাকায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে যে চামড়ার দাম প্রতি পিস ৮০০-৯০০ টাকা পড়েছে। সেই প্রায় একই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।খুলনার পাইকগাছা থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজকুমার রাজ বলেন, তারা পাঁচজন মিলে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির চামড়া কিনেছেন। এলাকায় ৩০০-৫০০ টাকায় ছোট গরুর চামড়া, ৫০০-৭০০ টাকায় মাঝারি আকৃতির গরুর চামড়া এবং ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বড় গরুর চামড়া কিনেছেন। কিন্তু আড়তে আনার পর গড়ে সব চামড়ার দামই ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এমনিতে দাম কম, তার ওপর এ কাঁচা চামড়া লবণজাত করে সংরক্ষণ করলে তারা আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন। আর তারা সেই চামড়া সরাসরি ট্যানারিতে পৌঁছাতেও পারবেন না। তাই অনেক চিন্তা-ভাবনা করে একরকম বাধ্য হয়েই কম দামে গরুর চামড়া আড়তে বিক্রি করেছেন। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম গড়ে ১০-২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।লোকসানের কথা জানিয়েছেন খুলনার পাইকগাছার স্বপন দাসও। তিনি জানান, ২৪৮ পিস গরুর চামড়া ও ৪৪ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে রাজারহাটে এসেছি। বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৭০০ টাকায়, আর ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ২০ টাকা করে। অর্থাৎ গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ২৫ টাকা ফুট হিসেবে। অথচ সরকার নির্ধারণ করেছে ৫০ টাকা ফুট করে। যে কারণে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন না। লাভের মুখ দেখছেন আড়তদার আর ট্যানারি মালিকরা। তারা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। যেহেতু আমাদের চামড়া বিক্রি না করে উপায় নেই।আর দুই একজন ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে পারলেও অনেকে বিক্রিই করতে পারেননি। যদিও চলতি বছর খাসি ও বকরির দামও বাড়ানো হয়েছে। গত বছর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম ছিল ১৮-২০ টাকা। এবার সেটি বাড়িয়ে ২০-২৫ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে বকরির চামড়ার দাম বর্গফুট প্রতি বেড়েছে ৬ টাকা। তবে বাস্তবে খাসি ও বকরির চামড়ার দামও এবার বাড়েনি।খাসির চামড়ার স্তূপের সামনে বসে থাকা মণিরামপুর গোপাল দাস ঋষি নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানালেন, প্রতিটি চামড়া ২০-৫০ টাকা টাকা করে কিনেছেন। লবণ লাগানো, শ্রমিক এসব দিয়ে আরও খরচ হয়েছে। এখন সেই চামড়া হাটে এনে কেনা দামেও মিলছে না। এখন তো আমার চালানও টিকছে না। ঋণ নিয়ে চামড়া কিনেছিলাম। এখন এ টাকা শোধ করবো কিভাবে? গোপালের মতো এদিন রাজারহাটে অনেককেই ছাগলের চামড়ার স্তূপ নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, ছাগলের চামড়ার দিকে চোখ দিচ্ছে না কেউই।তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দাম পাচ্ছে না এমন অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় আড়তদাররা। আড়তদারদের দাবি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি টাকা দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া কিনেছেন তারা। তবে কাটা ফাটা চামড়ার দাম কম। অনেকে ক্ষেত্রে তারা নেননি বলেও জানিয়েছেন। এছাড়াও তারা অজ্ঞাত ভাইরাসের কারণে চামড়া ফেটে যাওয়ার কথাও বলছেন। ত্রুটিপূর্ণ চামড়া দেখলেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা।যশোরের স্থানীয় আড়তদার ও ঢাকার এক ট্যানারি মালিকের প্রতিনিধি হাসিবুল হক জানান, হাটে ভালোমানের গরুর চামড়া সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। খারাপ চামড়া কম দামে বিক্রি হয়েছে। কেননা এবার চামড়ায় এক ধরনের ভাইরাস লেগে ফেটে যাচ্ছে। যে কারণে দাম পড়ে গেছে। দেখেশুনে না কিনলে আমাদের পথে বসতে হবে। কারণ ট্যানারি মালিকরা ফেটে যাওয়া চামড়া কিনবে না।কুষ্টিয়ার ট্যানারি মালিকের প্রতিনিধি এহসান রিপন জানান, এক ধরনের ভাইরাসে অন্তত ১৫ শতাংশ চামড়া ফেটে যাচ্ছে। আবার ঠিকমত লবণ না দেওয়ায় চামড়া নষ্ট হয়ে পড়েছে। যে কারণে চামড়ার দাম কমে গেছে। তবে ভালো মানের চামড়া ভালো দাম দেয়া হচ্ছে।স্থানীয় আড়তদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, সাধারণত বড় আকৃতির গরুর চামড়া ৩৫-৪০ বর্গফুট হয়, মাঝারি আকৃতির গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকৃতির গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। একেকটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরিসহ গড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। গত বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় খরচ কিছুটা বেশি পড়ছে। এরপরও তারা ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে কাঁচা চামড়া কিনেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দাম দিয়েছেন। এখন এসব চামড়া লবণজাত করতে তাদের খরচ বেড়ে গেছে। বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, শনিবার রাজারহাটে গড়ে ৭০ হাজার পিস চামড়া উঠেছে। এরমধ্যে গরুর চামড়া ছিল ৪০ হাজার পিস। যেখানে ৩ কোটি টাকার হাতবদল হয়েছে।তিনি বলেন, ভালোমানের গরুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে অথবা কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়েছে। খারাপ চামড়ার দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি থেকে কম দামে কিনে হাটে এসে অনেক বেশি দাম চেয়ে থাকে। তবে সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির উদ্যোগ নিলে এ খাত আরও বিকশিত হবে। আবার সরকার খুচরা চামড়া ব্যবসায়ীদের অল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে চামড়া ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION