মোস্তাকিম আল রাব্বি সাকিব
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে দেশে আসছে হচ্ছে হার্টের রিং। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যকর তৎপরতা না থাকায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ওই রিং ব্যবহার হচ্ছে। ফলে রোগীদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা বাড়ছে। চোরাচালান চক্রটি হার্টের রিং আনা ক্ষেত্রে নিরাপদ রুট হিসেবে তিনটি স্থলবন্দর ব্যবহার করছে চক্র। রিংয়ের প্যাকেট খুলে অন্য লাগেজ ও প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আনা হচ্ছে দেশে। অথচ হার্টের রিংয়ে ওষুধের প্রলেপ লাগানো থাকে। বায়ু ও পানির সংস্পর্শে এই প্রলেপ নষ্ট হয়ে যায়। এমন রিং ব্যবহার করলে রোগীর দ্বিতীয়বার হার্টে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। কিন্তু প্যাকেট খুলে আনা মানহীন রিং অবাধে ব্যবহার হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চোরাই পথে আনা রিং ব্যবহার করলে চিকিৎসকরা রিংপ্রতি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পান। এ কারণে এখন এই রিং ব্যবহারে চিকিৎসকরা বেশি আগ্রহী। এমন তৎপরতা বন্ধে ভারতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রিংয়ের দাম নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। অ্যাবোট ভাসকুলার হার্টের রিংয়ের আমদানিকারক কার্ডিয়াক কেয়ার, কার্ডিয়াক সলিউশন, পিসিআই সাপোর্ট চোরাই পথে রিং (স্টেন্ট) আনছে। প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে তিন ধরনের রিং সরবরাহ করে। এর মধ্যে জায়েন্স প্রাইম বাংলাদেশে বেশি ব্যবহার হয়। জায়েন্স প্রাইম রিংয়ের বর্তমান বাজার মূল্য ৬৬ হাজার টাকা। ভারতে এই রিং বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার। বেশি মুনাফার জন্য চোরাই পথে এসব রিং এনে কার্ডিয়াক কেয়ারের নামে বিক্রি করা হচ্ছে। আখাউড়া, বেনাপোল ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে এসব রিং আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়,জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ সুপার স্পেশালাইজডসহ কিছু হাসপাতালে গত তিন মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার কার্ডিয়াক কেয়ার কোম্পানির রিং ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে ডলার সংকটে ব্যাংকে এলসি খুলে তিন মাসে এত রিং আনা অসম্ভব। তিন মাসে বিভিন্ন হাসপাতালে সাড়ে চার হাজার রিং ব্যবহার হলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন আকৃতির ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি রিং মজুত থাকার কথা। এত রিং বর্তমানে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। ডলার সংকটের কারণে এক ব্যবসায়ীর পক্ষে এত রিং বৈধভাবে আনার সুযোগ নেই। দেশে রিং সরবরাহ করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগে। মাসে কোন কোম্পানি কতটি রিং আনবে, তার অনুমোদন দেয় অধিদপ্তর। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কার্ডিয়াক কেয়ার কতটি রিং আনার জন্য ওষুধ প্রশাসনে অনুমোদন চেয়েছে, সেই তথ্য দিতে রাজি হয়নি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সূত্র আরো জানায়, ভারত থেকে কার্ডিয়াক কেয়ার কোম্পানি হার্টের রিং বক্স ছাড়া আনা হচ্ছে। দেশে নকল বক্স তৈরি করা হয়। এসব বক্স হাতে নিলেই যে কেউ সহজে বুঝতে পারবে এটি নকল। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী রিংয়ের প্রতিটি বক্সের ভেতরে চারটি ভাষায় অনুবাদ করা ব্যবহার নীতিমালা থাকার কথা। তবে অবৈধভাবে আসা জায়েন্স প্রাইম রিংয়ের বক্সের ভেতরে এ ধরনের কোনো ব্যবহার নীতিমালা পাওয়া যায়নি। শুধু একটি পাতলা কাগজে রিং সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। ওই কাগজে যে বারকোড ব্যবহার করা হয়েছে, সেই বারকোড স্ক্যান করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কোনো বৈশ্বিক কোম্পানির ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া অসম্ভব। এমন রিং ব্যবহার করলে রোগীর দ্বিতীয়বার হার্টে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এমনকি রিং বসানো স্থানে ইনফেকশন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করে। এজন্য হার্টের রিং নির্ধারিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে আনতে হয়। এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। এদিকে এ প্রসঙ্গে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক সদস্য বলেছেন, এ ধরনের অনৈতিক কর্মকা- বন্ধে ভারতে বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে রিংয়ের দাম নির্ধারণ করতে হবে। মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, বৈধভাবে হার্টের রিং আনতে আমদানি ও সরবরাহ কর হিসেবে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ দিতে হয়। চোরাই পথে রিং আনলে এই কর দেওয়া লাগে না। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অনৈতিকভাবে রিং আনা বন্ধে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। অন্যদিকে অবৈধভাবে রিং আনার বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, সরকার হার্টের চিকিৎসা সরঞ্জাম অবৈধভাবে আনা বন্ধে কাজ করছে। লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, চোরাই পথে হার্টের রিং আসছে এমন অভিযোগের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।