দাম ও চাহিদা বেড়েছে মাঝারি পশুর, কমেছে বড় গরুর দাম
মোমিনুর রহমান, দেবহাটা
দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে আগামী ১৭ জুন ধর্মীয় রীতি ও ভাব-গাম্ভীর্য্যরে মধ্যদিয়ে ঈদুল আযহায় পশু কোরবানি করবেন সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ।
বর্তমানে সারাদেশের ন্যায় কোরবানির পশু বেচাকেনার ধুম পড়েছে দেবহাটার পারুলিয়া পশুহাটে। তবে গবাদি পশুর খাদ্য সামগ্রীর মুল্যবৃদ্ধি এবং লালন-পালন ব্যয় বেশি দেখিয়ে ঈদের আগে পশুহাটে কোরবানি পশুর চড়া দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
কোরবানির পশুর চড়া দাম শুনে ক্রেতাদের কপালে অস্বস্তির ভাঁজ পড়লেও, পারুলিয়া পশুহাটটি থেকে এবছর সরকারিভাবে স্বল্প মাত্রায় টোল আদায় হওয়ায় সন্তুষ্টির ছাঁপ দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মুখে।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে পারুলিয়া পশুহাট ঘুরে দেখা যায়, এবারের ঈদে চাহিদা ও দাম দুই-ই বেড়েছে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের। আড়াই থেকে তিন মন ওজনের প্রতিটি গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যেই। ১০-১২ কেজি ওজনের মাঝারি ছাগল বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার টাকার মধ্যেই। আর ১০ হাজার টাকার মধ্যেই মিলছে মাঝারি সাইজের ভেড়া। তবে এবারের পশুহাটে বড় আকারের গরুর চেয়ে তুলনামুলোকভাবে বেশি হাকানো হচ্ছে বড় সাইজের ছাগলের দাম।
পশুহাটে ৮-১০ মন ওজনের গরু মিলছে ২ লাখ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যেই। অপরদিকে চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশ কেজি ওজনের ছাগলের দাম হাকানো হয়েছে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এবারের ঈদে অধিকাংশ মধ্যবিত্তরা ঝুঁকেছেন মাঝারি সাইজের পশু কোরবানিতে। যেকারনে চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের দাম।
তবে অতীতের মতো প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে গরু আমদানি না হওয়ায় বছর জুড়ে উৎপাদিত দেশীয় পশু কাঙ্খিত দামে বেঁচতে পেরে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে খামারী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে।
দেশের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ কোরবানির পশুরহাট পারুলিয়ায় পশু বেঁচাকেনায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেই চিত্র। রোগমুক্ত ও মানসম্মত কোরবানির পশু বেঁচাকেনা নিশ্চিতে পশুহাটে ভেটেরনারি ক্যাম্প স্থাপন করেছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি পশুহাটে যাওয়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে জোরদার করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও টহল। গ্রামপুলিশের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পশুহাটে দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরাও। তাছাড়া নিয়মিত টহলে থাকছেন র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল।
তবে পারুলিয়া পশুহাটটি সম্পূর্ন খোলা যায়গায় অবস্থিত হওয়ায় প্রখর রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ছে হাটে তোলা কোরবানির পশু ও ক্রেতা-বিক্রেতারা। পশুহাটটিকে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে পর্যাপ্ত গাছ রোপন অথবা বিকল্প উপায়ে ছাঁয়াযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
রোববার পারুলিয়া পশুহাটে প্রায় ১০ মন ওজনের বিশালাকৃতির একটি গরু বিক্রির জন্য তুলেছিলেন উত্তর পারুলিয়ার খামারী রুহুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে খামারে পালিত বড় সাইজের গরুটি হাটে তুলেছি। সারাবছর লালন পালনে যে পরিমান খরচ হয়েছে, তাতে আশা ছিল গরুটি নুন্যতম তিন লাখ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু বড় সাইজের গরুর চাহিদা কম হওয়ায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন ক্রেতারা। যেকারণে গরুটি বিক্রি না করে কাঙ্খিত দামের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে আছি।’
৮-৯ মন ওজনের গরু বিক্রির জন্য পশুহাটে আসা কালীগঞ্জের খামারী দিপক ঘোষ জানান, ‘নুন্যতম ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় গরুটি বিক্রির জন্য হাটে এনেছি, কিন্তু মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় আমাদের বড় গরুর প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ এক্কেবারে নেই বলা যায়।’
পারুলিয়া পশু হাটের সুব্যবস্থা ও তদারকিতে নিয়োজিত ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবু এবং প্যানেল চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন হীরা বলেন, ‘কোরবানির ঈদ ঘিরে এবছর পশুহাটের বেঁচাকেনা মোটামুটি জমজমাট রয়েছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় মাঝারি পশুর দামও বেশি। পক্ষান্তরে অনেকটাই কমেছে বড় সাইজের পশুর চাহিদা ও দাম।’
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুপুরে পশুহাটটি পরিদর্শন করেছি, ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার এবং গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভেটেরনারি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। হাটের পরিবেশে ছায়াযুক্ত করে তুলতে বিকল্প পদ্ধতিতে শেড তৈরীর কাজ চলছে। ঈদের আগে নির্ধারিত একটি হাট সহ আরও দু’একটি হাট বসানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।’