নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রতিদিনই বাড়ছে যানবাহন। ফলে সড়কের উভয়পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এখন নিয়মিত দৃশ্য। বেনাপোল পৌরসভা যানজট নিরসনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল নির্মাণ করলেও যানবাহনগুলো মহাসড়কে কোথাও এক সারি আবার কোথাও দুই সারিতে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সারা বছরই বেনাপোল বন্দর ও বাজার এলাকায় লেগে থাকে অসহনীয় যানজট। যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থপনাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরের প্রধান সড়কগুলোতে যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থা। সড়কের একটি জায়গা ছাড়া আর কোথাও নেই ট্রাফিক পুলিশের আনাগোনা। আর এই সুযোগে বেনাপোলের প্রধান সড়কটির দুই কিলোমিটার জুড়ে প্রতিনিয়ত রাখা হচ্ছে বাস ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। স্কুল, কলেজপড়ুয়া ও এলাকার সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো প্রকার নজরদারি করছে না বলে অভিযোগ এলাকার ব্যবসায়ীদের।ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনের কণ্ঠকে বলেন, টার্মিনাল নির্মাণ করা হলেও সড়কের ওপর বাস-ট্রাক রেখে প্রতিনিয়ত যানজট তৈরি করছে একটি মহল। দীর্ঘদিন নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বন্দরটি চললেও কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রধান সড়কে প্রতিদিনের এ তীব্র যানজট থেকে পরিত্রাণ চান তারা। যাতে কমলমতি শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে।বেনাপোল চেকপোস্টের ব্যবসায়ী আজিজুল হক প্রতিদিনের কণ্ঠকে বলেন, যানজট এখন এই শহরের বড় সমস্যা। বেনাপোল বন্দরের আনসার ক্যাম্পের সামনে থেকে শুরু হয় যানজট, বেনাপোল বাজার পর্যন্ত একই অবস্থা। এ সড়কে ইচ্ছামতো এলামেলোভাবে যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। চালকের খেয়ালখুশি মতো গাড়ি চালায়। কে কার আগে যাবে, গাড়িগুলো এই প্রতিযোগিতায় থাকে। সড়কের ওপর সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোও যে যার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এসব দেখেও প্রশাসন কিছু বলে না। যানজটের কারণে এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের জনজীবন।এছাড়াও এ বন্দরের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় দেশের সিংহভাগ পাসপোর্টযাত্রী এপথেই যাতায়াত করে থাকেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মেডিকেল ভিসা। প্রচণ্ড এ যানজটের কারণে পাসপোর্টযাত্রীসহ এ এলাকার মানুষগুলো জরুরি কাজ এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিকেও দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে পারেন নাবেনাপোল আমদানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক প্রতিদিনের কণ্ঠকে বলেন, বেনাপোল থেকে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু বেনাপোলবাসী কী পান? সুবিধাবঞ্চিত বেনাপোলবাসীর সুবিধাগুলোর প্রতিও সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন। একটি পণ্যবাহী ট্রাকের যদি চার-পাঁচ ঘণ্টা অলস সময় কেটে যায় তখন দিন শেষে এর মূল্য দিতে হবে ভোক্তাদের। কারণ এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তাই এ বন্দরের সমস্যাগুলো সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, নইলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাবে।এ বিষয়ে বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব নাসির উদ্দীন প্রতিদিনের কণ্ঠকে বলেন, আমরা জন্মকাল থেকেই এই ট্রাফিক জ্যামে ভুগছি। কিন্তু আজও এর সমাধান হয়নি। এছাড়াও চেকপোস্টের বড়আঁচড়া এমপি মার্কেটের সামনেও সব সময় যানজট লেগে থাকে। আর এই যানজট নিরসনে পৌরসভা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরইমধ্যে ইজিবাইকগুলোকে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ও সাধারণ মানুষের যানজট কষ্ট দূর করতে বাসগুলো বাস টার্মিনালে ও ট্রাকগুলো ট্রাক টার্মিনালে নেয়ার চেষ্টা করছি।তিনি বলেন, টার্মিনাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে, পরিবহন ও ট্রাকগুলো পরিষ্কার করার জন্য সার্ভিসিং সেন্টার করা হয়েছে। টার্মিনাল পরিপূর্ণ করতে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করার বেনাপোল পৌরসভা তা গ্রহণ করেছে। এরইমধ্যে বেশ কিছু পরিবহন টার্মিনালে কাউন্টার অফিস নিয়েছে। আমরা দ্রুতসেগুলো চালু করবো। এরপর ফুটপাতও দখলমুক্ত করা হবে।