জাহিদ হাসান
বেনাপোল স্থল বন্দরে স্কেল ওজন জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে একটি চক্র। আর এই চক্রের সাথে জড়িত স্থল বন্দরের স্কেলে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক,উপ-পরিচালক সহ বেশ কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। গত বছর জুলায় মাসে জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর মোট ৬টি তদন্ত কমিটি করা হয়। এর মধ্যে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি একটি। বাকি ৫টি তদন্ত কমিটি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের। অথচ দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা আইনগত ব্যবস্থা ও অভিযুক্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। নাম মাত্র বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাদের বদলি করা হয়। দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৭-৮ হাজার মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। আমদানি পণ্য থেকে গত বছর এই বন্দর থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।
স্থলবন্দর সূত্র থেকে জানা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দরে গতি আনতে ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারিতে বন্দর অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা হয়। আর কাজটি পায় ঢাকার বেসরকারি সফটওয়্যার কোম্পানি ‘ডাটা সফট’। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের ওজন পরিমাপের পর খালি গাড়ির ওজন বাদ দিয়ে পণ্যের ওজন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভারে সংরক্ষণ করে সফটওয়্যারটি। ফলে আমদানিকৃত ট্রাকে কত টন মাল আছে তার পরিমাপের একটি ওজন ¯িøপ দেওয়া হতো আমদানি কারক প্রতিষ্টানের নিয়জিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে। বন্দরে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরপরই কিছু ত্রুটি খুঁজে পায় স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সফটওয়্যার ত্রæটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্দর,আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সমন্বয়ে তৈরি হয় একটি চক্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তার মাধ্যমে জানা যায়, টন প্রতি টাকা নিতেন স্থল বন্দরের স্কেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এছাড়াও তিনি আরও জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যে সকল গাড়ির ওজন করা হতো সেগুলোর স্কেল ¯িøপ পূনরায় প্রিন্ট নিয়ে পরীক্ষণের সময় ফাইলে দেখানো হতো। ফলে কাস্টমসের বুঝার উপায় ছিলো না যে ওজন ফাঁকিতে কারসাজি হচ্ছে।
স্থল বন্দরে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা সকালের সময়কে জানান, স্কেলে কর্মরত কলিগরা ওজন ¯িøফ ফাঁকির টাকায় নামে বেনামে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। আবার অনেক কর্মকর্তা অবৈধ এসব টাকা জমা রাখছেন বিশ^স্ত আত্মীয় স্বজনের ব্যাংক একাউন্টে। এছাড়াও পোষ্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন বিভিন্ন নামে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী জানান, স্থল বন্দরে অটোমেশনে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে মূলত তার এ্যাসেস হিস্টরী অটোমেটিক ডিলেট হয়ে যায়। ফলে পূর্বে কে বা কার আউডি দিয়ে এ্যাসেস করা হয়েছে বা ট্রাকের ওজন কত ছিলো তা বোঝার উপায় থাকে না। এর ফলে শুল্ক ফাঁকি দিতে ওজন কম দেখানোর বিষয়টি খুবই সহজ ছিলো। কাস্টমস ত্রæটি খুজে পাওয়ার পর থেকে কড়া নজরদারির মাধ্যমে পরীক্ষণ সম্পন্ন করে পণ্য খালাশ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিমকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, জালিয়াতির ঘটনা তদন্দের পর মন্ত্রালয় থেকে যে সকল সুপারিশ গুলো দিয়েছিলো সে গুলো আমরা বন্দরে বাস্তবায়ন করেছি। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান করেছে সে রিপোর্ট নিয়ে তারা ব্যবস্থা নিবে।