ধারাবাহিক প্রতিবেদনেরঃ- ১ম পর্ব
জাহিদ হাসান
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার আব্দুল হাকিমের মদদে ঘুষ বাণিজ্যে মেতেছেন কাস্টমসে কর্মরত সিংহভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। জানাগেছে এসকল অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের আদায়কৃত ঘুষের অর্থের একটি ভাগ তার পকেটে যাওয়ায় নির্দ্বিধায় এবং নির্বিঘ্নে এ সকল কাস্টম কর্মকর্তারা তাদের ঘুষ বাণিজ্য দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন। বেনাপোল কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে নানা সময়ে সংবাদ প্রকাশ এবং অভিযোগ থাকলেও কার্যকরী কোন ব্যবস্তা নেননি কমিশনার মহোদয়।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের প্রতিটা কক্ষে প্রবেশের পূর্বেই দেখা যায় লেখা আছে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। কারণ জানতে জানা যায় বিভিন্ন সময় কাস্টমস হাউজের একাধিক কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কারণে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে কেউ ভিডিও করতে না পারে এবং কর্মকর্তারা নির্বিঘ্নে তাদের ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারেন। কাস্টমস কমিশনার ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ না করে সিএন্ডএফ মালিক এবং কর্মচারীদের হাউজে মোবাইল ব্যবহার কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। এই আইন না মানলে সেই সিএন্ডএফ কে পোহাতে হয় নানা ধকল এবং জবাবদিহিতার।
কয়েকদিন সংবাদ সংগ্রহের জন্য কাস্টমস হাউজের চত্বরে ঘুরে দেখা যায় এক এক কর্মকর্তার ঘুষ খাওয়ার ধরণ একেক রকম। কোন কর্মকর্তা নিজ হাতে ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন না, ঘুষের টাকা নেওয়ার জন্য আছে নিজস্ব ভাবে নিয়োগ দেওয়া কর্মচারী। এই অবৈধ কর্মচারীকে কাস্টমসের ভাষায় বলা হয় এনজিও। এই এনজিও গণ ফাইল প্রতি চাহিদা মাফিক টাকা পেয়ে সিগনাল দিলেই ফাইলে সই হয়ে যায়। আবার কোন কোন কর্মকর্তার এই টাকা আদায়ের জন্য আছে সরকারি সিপাই। কোন কোন অফিসারের বেশি চাহিদা নেই ফাইল প্রতি টাকা বেঁধে দেওয়া আছে, সেটা পেলেই সই ওকে। কিছু অফিসারের এনজিও বা সিপাই রুমের বাহিরে টেবিলে তার স্যারের সিল নিয়ে বসে আছে টাকা পেলে ফাইলে সিল মেরে দিচ্ছে ভিতর থেকে তার স্যার সই করে দিচ্ছে। সিল বাদে ভিতরে গেলে সে ফাইলে আর সই হয়না। কিছু এনজিও আছে কাস্টমস থেকে টাকা গ্রহণ করেন না, কাস্টমসের বাইরে গিয়ে তারা টাকা কালেকশন করেন। কিছু কর্মকর্তা আছেন আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ কে এসএসকোড চেন্জ সহ নানা হয়রানির ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে একটা রীতি চালু আছে আপনার ফাইল যতই স্বচ্ছ থাকুক না কেনো, ফাইলের কাজ এগোনোর জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনাকে দেওয়ায় লাগবে। যেটা কাস্টমসের ভাষায় স্পিডমানি নামে পরিচিত।
বিগত ১ বছরে বেনাপোল কাস্টমস তার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এই রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসাবে বিশ্লেষকরা দেখছেন, বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তাদের নানা হয়রানি এবং অবাধ ঘুষ বাণিজ্যের কারণে বহু আমদানিকারক এই বন্দর দিয়ে তাদের পণ্য আমদানি বন্ধ করেছেন। আবার অনেকে ক্ষতি পোষাতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এবিষয়ে একাধিক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ি জানান এক সময় ভোমরা বন্দর দিয়ে কোন কাজ হতো না কিন্তু এখন নানা সুবিধার কারণে বহু আমদানিকারক এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভোমরা সহ অন্যান্য বন্দর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাছাড়া এই কমিশনার দীর্ঘ ১ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাস্টমস হাউজে থাকলেও কাজের মান উন্নয়নে কার্যকরী কোন ভূমিকা পালন করতে পারেননি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ঘুরেও দেখা যায় দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিশাল আখড়া। এখানে লাগেজ ব্যবসায়িদের দৌড়ত্ব কিছুটা কম হলেও সাধারণ যাত্রীগণ পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি। একজন সাধারণ যাত্রী তার নিজের এবং পরিবারের ব্যবহারের অল্প কিছু মাল আনলেও সেটা কর্মকর্তারা ডিএম করে দিচ্ছেন। তবে এই ডিএম করা পণ্য নিয়ে চলছে নানা কারসাজি এবং ভেলকিবাজি। ইমিগ্রেশনে কর্মরত কর্মকর্তারা এই ডিএম কৃত পণ্য রাতের আধারে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি, আবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছেন সেসকল পণ্য। এসকল ডিএমের পণ্য সংরক্ষণ করার জন্য নেই নির্দিষ্ট কোন গুদম ঘর বা পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা। মাল গুলো রাখা হচ্ছে ইমিগ্রেশনের বাথরুম সহ অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। তার উপর এই সকল আটককৃত পণ্য তারা কাস্টমসে জমা না দিয়ে গুদামেই ফেলে রাখেন দীর্ঘদিন। পরবর্তীতে অল্প দিনের মধ্যে সেসকল পণ্য পচে গেলে ফেলে দেওয়া ইমিগ্রেশনের নর্দমায়। তখন চুরি কৃত ডিএম পণ্যের আর হিসাব থাকেনা এবং পণ্য পচে যাওয়ায় মালিকও পণ্য গ্রহণ করতে পারেনা। এসকল বিষয়ে একাধিক নিউজ প্রকাশ সহ নানা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও কাস্টমস কমিশনারের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।এবিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে কর্মরত কমিশনার আব্দুল হাকিমকে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।