শার্শা প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে সড়কের ধারে একাকী পড়ে আছে মনিকা নামের এক মা। জরাজীর্ণ শরীরে নেই কোন বলশক্তি। শীতার্ত আবহাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে জবুথবু হয়ে শুয়ে থাকা মনিকার গায়ে নেই কোনো গরম কাপড়। খাবারের নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে থাকে অধিকাংশ সময়। কেউ কোনো খাবার দিলে তা একটু খেয়ে একটু বাঁচিয়ে রাখেন তিনি। খাবার না থাকলে কখনো না খেয়ে কখনো খালে বিলে কিংবা ডোবা জলাশয় থেকে ছোট ছোট কাঁকড়াও খেতে দেখা যায় তাকে। বলছিলাম যশোরের শার্শা উপজেলার এক বৃদ্ধ মায়ের কথা। বেনাপোল বাইপাস সড়ক বেয়ে কিছুদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে এই বৃদ্ধ মাকে। এলাকাটি ভবারবেড়ের শেষাংশে পড়েছে। সড়কের দুই ধারের আবাদি জমির বুক চিরে বয়ে যাওয়া সড়কটির খুব কাছেই মনিকা নামের এই মায়ের চাহনি ঠিকঠাক দেখেনি কেউ। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি কেউ। দিগন্তজোড়া মাঠ প্রান্তে অপলোক চেয়ে থাকা মায়ের নির্বাক চাহনি কারো মন না কাড়লেও থমকে গেছে ১৪ বছরের মাহামুদুল্লাহ নামে এক যুবক। সহায় সম্বলহারা গৃহহীন এই মমতাময়ী নারীর অসহায়ত্বের একটি ছবি শেয়ার করে শার্শার কৃতি সন্তান দেশ সেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমানের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে। যেখানে দেখতে পাওয়া যায় মনিকা রানী কাঁকড়া ধরে একটি পাত্রে সেগুলি আগুনে পুড়িয়ে খাচ্ছে। উদ্ভাবক মিজানের সাথে মাহামুদুল্লার ফেসবুকে এ্যাড থাকলেও চেনাজানা নাই একে অপরের সাথে। একটি পোষ্টে পরিচয়, তারপর মিজানকে নিয়ে গেলো সেই বৃদ্ধ মায়ের কাছে। উদ্ভাবক মিজান বৃদ্ধ মাকে দেখতে সাথে নিয়ে গেলেন রান্না করা খাবার, কিছু শুকনা খাবার এবং শীত নিবারনের জন্য কম্বল। শুধু তাই নয়, নিজ হাতে মনিকা রানীকে খাবার খাওয়ায়ে দিলেন তিনি। বৃদ্ধ অসহায় এই মাকে একটু ভাল ভাবে রাখা এবং আজীবন খাবার খাওয়ানোর জন্য আশ্বস্ত করেন মিজান। এসময় মিজান ওই মাকে খাওয়ানোর সময় তার অসহায়ত্বের কথা ভেবে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। উদ্ভাবক মিজান এসময় বলেন, মনিকা রানী নামের এই বৃদ্ধ মা দীর্ঘ তিন থেকে চার মাস যাবত এভাবে রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে একাকি রাত্রি যাপন করে আসছে। এতোদিনে আমার নজরে আসেনি। আজ যখন নিজের চোখে এসে তাকে দেখলাম আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। আজ থেকে তার সমস্ত দেখা শুনার দায়িত্ব আমার। আমি ধন্য তার মুখে এক নালা খাবার তুলে দিতে পেরেছি। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে জোরদাবি জানাচ্ছি। সকলে যেন এমন মানুষদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তার জন্য মানবিক আবেদন করছি। এসময় উদ্ভাবক মিজানের সাথে ছিলেন নাভারণ ফ্রি খাবার বাড়ির পরিচালক বাদল হোসেন, তরুণ সমাজ সেবক কিশোর মাহামুদুল্লাহ এবং সাংবাদিক জসিম উদ্দিন সহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।