1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী

  • প্রকাশের সময় বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০
  • ৮৮ বার সংবাদটি পাঠিত
রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে সচিবালয় প্রান্তে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন- পিআইডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের আগে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পরে বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সব জায়গা থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। এই বই প্রকাশের পর সেই ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে কিছুটা হলেও আমরা রক্ষা পেয়েছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যেমন তার জীবন গাঁথা আছে পাশাপাশি তার সংগ্রামেরও অনেক কথা আছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক তথ্য এখানে পাওয়া যায়। সারাবিশ্বে বইটি এরইমধ্যে ১৪টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং আরো কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছে। বিশ্বে যারাই এটা পড়েছে তাদের কাছেই এটি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার জীবনী এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয় এবং আজকে যে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, সেই ইতিহাস জানার এখানে সুযোগ রয়েছে।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের এই সময়ে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের ৬ খণ্ড ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা সময়ে বঙ্গবন্ধু এটি লেখা শুরু করেছিলেন। ২০১২ সালের ১২ জুন বইটি প্রকাশিত হয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাঠকদের কথা বিবেচনা করে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ নেয় এবং প্রথম ধাপে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ১০০ সেট (প্রতিটি ৬ খণ্ড) ব্রেইল সংস্করণ মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছে।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ দুটি বইয়ের নামকরণই জাতির পিতার ছোট কন্যা শেখ রেহানার করা, অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বছরের শুরুতে বিনামূল্যে যে পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করে সেগুলোও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আজ এই ব্রেইল বই প্রকাশ করার ফলে, আমি মনে করবো, আমাদের সমাজের একটা মূল্যবান গোষ্ঠী, তারাও ইতিহাসটা জানার সুযোগ পাবে। আর এর মধ্য দিয়ে তারাও যে আমাদেরই একজন সেটাও কিন্তু প্রমাণিত হলো।

মোট ৬ খণ্ড ব্রেইলে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এগুলো লাইব্রেরিতে সংগ্রহের পরামর্শ দেন। কেননা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংগ্রহ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এগুলো পড়াটা একটু কষ্টসাধ্য হবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার প্রয়াত বান্ধবী সাংবাদিক বেবী মওদুদকে নিয়ে জাতির পিতার ডায়েরিগুলো সংগ্রহ এবং একে পরিপূর্ণ বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেন উল্লেখ করে বলেন, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টগুলো নিয়ে এরইমধ্যে বই প্রকাশ করেছি (সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)। যার ৬ খণ্ড এরইমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং ৭ম ও ৮ম খণ্ড (মোট ১৪ খণ্ডের মধ্যে) প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মাধ্যমেও কিন্তু আমাদের দেশের সংগ্রামের ইতিহাস, বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ইতিহাসটা বের হয়ে এসেছে এবং আমরা কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সেটা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর কারাগারে বসে লেখা অপর আত্মজীবনী ‘কারাগারের রোজনামচা’র বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেয়ার পর তাকে (বঙ্গবন্ধু) যখন গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয় সে সময় তিনি এই ডায়েরিটা লেখেন। আর ১৯৫২ সালে একটি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে চীন ভ্রমণ নিয়ে জাতির পিতা লেখেন ‘আমার দেখা নয়া চীন’। ১৯৫৪ সালে তিনি যখন গ্রেফতার ছিলেন তখন এই লেখাটা লিখেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার এসব ব্যক্তিগত ডায়েরি যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো প্রত্যেকটি খাতার ওপরই জেলখানার সেন্সরশিপের সিল এবং সই রয়েছে। সময়গুলোও সেখান থেকে খোঁজ করে বের করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে আত্মজীবনী লেখার জন্য বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সব সময় উদ্বুদ্ধ করতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি যেন তার (বঙ্গবন্ধু) জীবনীটা লিখে রাখেন। সেই থেকে তিনি কিন্তু লিখতে শুরু করেন। বাবা যতবার কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন আমার মা জেলগেটে থেকে বাবার লেখার খাতাগুলো সংগ্রহ করে রাখতেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের ইতিহাস প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ১৯৭১ সালে এই খাতাগুলো আমরা প্রায় হারাতে বসেছিলাম। আমাদের ধানমন্ডির বাসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লুটপাট করে। যদিও সবকিছু লুটপাট করে, তবে এগুলো লাইন টানা রুল করা কিছু খাতা ছিল বিধায় সেগুলো তাদের নজরে পড়েনি বা তাদের কাছে এগুলোর কোনো মূল্য ছিল না। যাই হোক এক সময় সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসি। যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ভূমিকাতে আমি লিখেছি।

তিনি বলেন, ৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তাদের ধানমিন্ডর বাসায় আবার লুটপাট হয়। ৮৬ সালে (আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর) দেশে ফিরে আসার পর জিয়াউর রহমান জোর করে সে বাসায় তাকে ঢুকতে দেয়নি বরং সে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল।

পরে যখন সে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় তখনই তিনি খাতাগুলো সেখান থেকে এবং ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় তার (শেখ হাসিনা) বেঁচে যাওয়ার পর এক ফুফাতো ভাইসহ আরো কয়েকজনের সহায়তায় বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, খাতাগুলোর জীর্ণ-শীর্ণ দশা ছিল। ফটোকপি করে, স্ক্যান করে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে অনেক কষ্ট করে সেগুলোর পাঠোদ্ধার করতে হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের আদলে খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু চেয়ার পর্যন্ত সরিয়ে দেয়।

শেখ হাসিনা ভাষণে তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। মুজিববর্ষে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION