কালিগঞ্জ সাতক্ষীরা: আব্দুল অহাব মোড়ল। বয়স পয়তাল্লিশের কোঠায়। পেশায় একজন সামান্য বাদাম ব্যবসায়ি। প্রায় এক যুগ ধরে ভ্রাম্যমান ভাজা বাদাম বিক্রি করে পারিবারিক জীবনে তার কিছুটা হলেও অভাব নিবারন করেছে। তার বড় মেয়ে উর্মি (১৯) ও ছোট মেয়ে সুমি (১৩) নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেনীর মেধাবী শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে সে কালিগঞ্জের ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সোনাটিকারি গ্রামে এক টুকরা জমি কিনে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। সে উপজেলার তারালী ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের আদর আলী মোড়লের ছেলে। বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে অবস্হিত ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারে বাদাম বিক্রির সময় দৃষ্টিপাতকে বলেন, গাছি (যারা গাছ কাটে) বাবার সন্তান হওয়ার সুবাধে ছোট থেকে লেখাপড়ার প্রতি অতি আগ্রহ থাকলেও অভাবের সংসারে তা সম্ভব হয়নি তার। সে স্বপ্ন দেখেছিলো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবার আর্থিক দারিদ্রতার অভাব দূর করে দুঃখিনী মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে পরিণত হয়নি। মাত্র ৬ বছর বয়সে চাচার হাত ধরে ঢাকায় একটি মিটফোর্ড দোকানে সামান্য বেতনে কর্মচারী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করে। সেখানে ৮ থেকে ১০ বছর কাজ শেষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে উপজেলার নলতা কাঁচা বাজারে কাঁচামাল বিক্রির পেশায় যোগ দেন সে। ৩ বছরের ব্যবসায় লাভের মুখ দেখলেও অর্থাঅভাবে শেষ পর্যন্ত তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। তারপর প্রায় ৮ বছর স্হানীয় বেকারী থেকে খাদ্য দ্রব্য নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন দোকানে দোকানে মাল সরবারহ করতো। কিন্তু তাতেও প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় সকল কাজকর্ম বাদ দিয়ে ঘাড়ে বাদামের ঝুড়ি ঝুলিয়ে শুরু করে বামাম বিক্রি। “বাদাম, কটকটি, ছোলা ভাজা।। আসেন টুকটাক খান” উক্তি নিয়ে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরম মচমচে সু-স্বাদু ও মুখরোচক বাদাম, ছোলা ও কটকটি ভাজা নিয়ে বাসস্ট্যান্ড, হাট-বাজার, খেলার মাঠ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ জনবহুল এলাকায় প্রচুর পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে। তার ভাজা বাদাম ছোট-বড় সকলেই এখন এর স্বাদ নিচ্ছে। প্রতিদিন বাজার থেকে ৪ কেজি কাঁচা বাদাম, ১ কেজি ছোলা ও ২ কেজি ব্যাসনসহ প্রায় ৭’শ টাকার মতো বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে সেগুলো ছাটাই বাছাই করে। তারপর বাদাম, ছোলা ও কটকটি ভেজে প্যাকেটজাত শেষে ক্রেতাদের মাঝে ১শ গ্রাম বাদাম ২০ টাকা, ছোলা ১৫ টাকা ও প্রতি প্যাকেট কটকটি ১০ টাকা দরে বিক্রি করছে। জীবিকার তাগিদে ঝড়, বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে প্রতিদিন খুব সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সারাদিন ঘুরে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রয় হলে প্রায় ৪’শ টাকা লাভ হয়। বিক্রয় শেষে কখনও বিকালে, কখনও সন্ধ্যায়, আবার কখনও গভীর রাতে বাড়িতে ফেরে আব্দুল অহাব। তবে এখন ব্যবসায়ি বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় বিক্রয়ও কম হতে চলেছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, পরিশ্রম আর সততায় ব্যবসা করে সফল না হলেও কিছুটা সুখে আছি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কিছু ঋণ দেনার মধ্যে পড়ে আছি। ইতিপূর্বে এ ব্যবসা করে জায়গা কিনে বসবাস করছি, পাশে কিছু জায়গা কেনার ইচ্ছাও রয়েছে। বড় মেয়েটি বিয়ে দিয়েছি ও ঘরে মেধাবী ছোট মেয়েকে লেখাপড়া শিখাচ্ছি। স্ত্রী বাড়িতে গরু পালন করে সংসারে অভাব নিবারন করার চেষ্টা করছে। বর্তমান সময়ে আর্থিকভাবে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পেলে উপকার পেতাম। তারপরও অর্থনৈতিক সচ্ছলতার মাঝে কিছুটা হলেও সুখ খুঁজে পেয়েছি।