কন্ঠ ডেস্ক ঃ ধারাবাহিক বন্দুকযুদ্ধ ও সাড়াশি অভিযানের মধ্যেই দেশে মাদকের আমদানি ও কেনাবেচা গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন যশোর এর বেনাপোল ও শার্শা সীমান্তের এলাকা দিয়ে মাদক চোরাচালানিরা মাদক নিয়ে দেশে প্রবেশ করছে। এসব মাদক দ্রব্যর মধ্যে বেশী আসছে ফেন্সিডিল, বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ, গাজা ও ইয়াবা। প্রতিদিন নির্বিঘেœ এরা সীমান্তের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দেশে নিয়ে আসছে এসব মাদক দ্রব্য।
শার্শার কায়বা থেকে বেনাপোল হয়ে শুরু করে ঘুরে আবার শার্শার পাকশি পর্যন্ত রয়েছে বিশাল সীমান্ত এলাকা। এসব সীমান্ত এলাকায় প্রায় স্পটে রয়েছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব পূর্র্ণ কাজে নিয়োজিত বিজিবি সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। তারপরও থেমে নেই মাদক আসা। গতবছরের চেয়ে কয়েকগুন বেশী মাদক আসছে বলে স্বয়ং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হতাশা প্রকাশ করেছে। শার্শার কায়বা, রুদ্রপুুর, গোগা, ভুলোট, পাচভুলোপ, অগ্রভুলো, পুটখালী,শালকোনা, পাকশি, ডিহি, গোড়পাড়া এবং বেনাপোলের, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা দিয়ে আসছে বড় বড় ফেন্সিডিল ও গাঁজার চালান। গতবছর পুলিশের অভিযানে তেমন মাদক দ্রব্য উদ্ধার না হলেও এবছর রেকর্ড পরিমান মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। প্রতিদিন বিস্তীর্ন এ সীমান্ত পথে উদ্ধার হচ্ছে ফেন্সিডিলের চালান।
গত ১৯ আগষ্ট জাহান আলী নামে এক মাদক ব্যবসায়িকে ৩১২ বোতল ফেনিসিডিল সহ আটক করে বিজিবি। ২১ আগষ্ট ২০ বোতল ফেন্সিডিল সহ সাবু , ২২ আগষ্ট ২০০ পিছ ইয়াবা সহ ছায়রা ও তার স্বামী শাহিন,২৩ আগষ্ট ৭৩ বোতল ফেন্সিডিল সহ রফিকুল, আলমগীর, ২৯ আগষ্ট ৯০ বোতল ফেনিসিডিল সহ আমান হোসেন,৩৬৫ বোতল ফেনসিডিল সহ খাইবার হোসেন ও আশানুর রহমান, ১ সেপ্টেম্বর ৮ বোতল ফেনসিডিল সহ সাবু নামে একজন আটক হয় বিজিবি ও পুলিশের কাছে। এছাড়া শুধু বাগআঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি গত ১৩ জুলাই থেকে ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত ১২৬৯ বোতল ফেনসিডিল ও মদ সহ আটক করে ১৮ জনকে। মামলা হয় ৪৫ জনের নামে। এর মধ্যে ২৭ জনকে পলাতক দেখানো হযেছে। এছাড়া বেনাপোল শার্শা গোড়পাড়া পুলিশ ফাড়িতে ও মাদকদ্রব্য সহ আরো মাদক ব্যবসায়ি আটক হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানা সুত্র জানায় গত বছর এরকম কোন মাদক দ্রব্য উদ্ধার হয়নি। চলতি বছরের শুরুতে মাদক বেশী আসছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। গত আগষ্ট মাসে বেনাপোল পোর্ট থানা প্রায় ৩ হাজার পিছ ফেন্সিডিল ও ৬০ কেজি গাজা উদ্ধার করেছে। এসময় কয়েকশত পিছ ইয়াবাও উদ্ধার করা হয়েছে। শার্শা থানায়ও প্রচুর ফেন্সিডিল ও গাজা উদ্ধার হয়েছে বলে থানা সুত্র জানায়।
সীমান্তের একটি সুত্র জানায় সাম্প্রতিককালে যে কোন সময়ের চেয়ে ভারত থেকে মাদক দ্রব্য বেশী আসছে। বড় বড় চালান সীমান্তের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগিতায় ভারত থেকে বাংলাদেশে নির্বিঘ্নে পার হয়ে আসে। আর এসব মাদক দ্রব্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাকে পিকআপে ইজিবাইকে অন্যান্য পন্যবাহি যানবাহনে চলে যায়।
আইনশৃঙ্খলা ও এলাকা সুত্রে জানা গেছে একাধিক মামলার আসামিরা মাদক ব্যবসা করে। এরা আটক হওয়ার পর আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে এসে আবারও এসব পেশায় নিয়োজিত হয়। আর এদের সাথে রয়েছে সীমান্তে অলিখিত ঘাট মালিক। রুদ্রপুর সীমান্তে রয়েছে ঘাটমালিক বলে খ্যাত হোসেন আলী, হানিফ, গোগা সীমান্তে রয়েছে
তবিবার রহমান, অগ্রভুলোট রয়েছে মাদক সিন্ডিকেটের ঘাট মালিক সাবুর উদ্দিন ও আজিজ হোসেন। এসব ঘাট মালিকের মাধ্যেমে চুক্তি করে ভারত থেকে নিয়ে আসছে মাদক দ্রব্য। মাদক চোরাচালানির মধ্যে এবং একাধিক মামলার আসামি রয়েছে দাউদখালি গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে লাল্টু মিয়া, ও তার ভাই লাভলু হোসেন, এবং বাবলু মিয়া কওছার এর ছেলে বুলবুল আহম্মেদ, সাধন নিকারীর ছেলে আব্দুল কাদের হামিদ মিয়া রহিম মিয়া, ও আব্দুল জলিল, আব্দুল বারির ছেলে হোসেন আলী, রহিম মিয়ার ছেলে রনি ও মাসুদ, ভাবানিপুর গ্রামের জোনাব আলীর ছেলে মাসুম রুদ্রপুর বউ বাজরের আমির চাঁদের ছেলে কুখ্যাত ফেন্সিডিল ব্যবসায়ি অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবসায়ি একাধিক মামলার আসামি মোহাম্মাদ হানিফ, শাহাজাহান কাজীর ছেলে ওবাইদুর রহমান, হানিফ গাজির ছেলে দাউদ গাজী ও চাঁন গাজী,ইউসুফ এর ছেলে আজিজুল ও হাকিম মিয়া অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী দাউদখালী গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে মহিনুর। বেনাপোল ভবেরবেড় গ্রামের মইনে মিয়া, ফিরোজা বেগম, বাবু মিয়া, সাগরিকা ।
এছাড়া বেনাপোলের রঘুনাথপুর, দৌলতপুর , বারোপোতা , পুটখালী, ভবেরবেড় রয়েছে কুখ্যাত একাধিক মাদক মামলার আসামি। এদের মধ্যে অনেকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ঘোরাফেরা করলেও সবাই রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিকি দলের নেতাদের সংশি¬ষ্টতা থাকে, মদদ থাকে। বড় মাদক কারবরিরা বিপদে পড়লে রাজনৈতিকি আশ্রয় প্রশ্রয় পায়। আর সেই ব্যবসায়ীরা তখন নিজেদের লোকদের সহজে রক্ষা করে। এ কারনে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান সফল হয় না। তাই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে ভেতর বাইরে। কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।
বেনাপোলের ভবেরবেড় এলাকায় রয়েছে চিহিৃত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। এদের কাউকে কাউকে প্রকাশ্যে পুলিশ বিজিবির সাথে ঘোরাফেরা করতে এবং খোশ গল্প করতে দেখা যায়। আবার এদের নামে মাদক মামলা ও রয়েছে। এই ভবেরবেড় এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়িরা পাইকারী ও খুচরা মাদক ক্রয় করে নিয়ে যায়।
শার্শার বাগআচড়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি এই ফাঁড়িতে যোগদান করার পর যত মাদকদ্রব্য এবং তার সাথে বহনকারী যানবাহন আটক হয়েছে তা অন্য সময় হয়নি। আমি দেশে মাদকদ্রব্য যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষে কাজ করছি।
শার্শা থানা ওসি বদরুল আলম বলেন, আমরা মাদক উদ্ধার এর পাশাপাশি যারা এর সাথে সংশি¬ষ্ট রয়েছে তাদের চিহিৃত করে আইনে সপোর্দ করছি। কোন মাদক ব্যবসায়ি এবং তাদের মদদদাতাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান বলেন, আমার বেনাপোল পোর্ট থানায় যোগদানের পর থেকে মাদক বিরোধি অভিযান ও মাদক উদ্ধার কার্যক্রম অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে এ নিয়ে মাদক উদ্ধারের এত রেকর্ড নেই। আমি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কোন গডফাদার বলে কেউ জড়িত থাকে তাদের সাথে কোন আপস নয়। মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষে যে সুপারিশ করবে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
৪৯ বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার হান্নান মিয়া বলেন, আমি বেনাপোলে নতুন। যদি মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেশী থাকে তবে তা নির্মুল করা হবে। কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবে না।