শফিকুল ইসলামঃ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম পশু চামড়ার মোকাম রাজারহাট। এই মোকামে গত হাটে (মঙ্গলবার) একশ পিস চামড়া এনেছিলেন বাঘারপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুনীল ঘোষ। হাট না জমায় সেদিন ফেরত নিয়ে যান চামড়া। শনিবার হাটে এনেছিলেন লবণজাত সেই চামড়া। এবারও মেলেনি কাক্সিক্ষত দাম। কেনা দামেই বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সুনীল ঘোষের দাবি, প্রতিপিস ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ১৫ টাকায় কিনেছিলাম। লবণ ও পরিবহন মিলে চামড়াপ্রতি খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আজ হাটে ২০ টাকার বেশি দাম উঠছে না। লাভ তো দূরের কথা, লবণের দামও উঠছে না।
অভয়নগরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন জানালেন, দাম নিয়ে ভয় থাকায় অনেক হিসাব করে চামড়া কিনেছি। ২শ’ পিস গরু ও ১শ’ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে এসেছি। ছাগলের চামড়া ১০ থেকে ২০ টাকা পিস আর গরু ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পিস দরে কিনেছি। হাটে পাইকারদের দামে চামড়া বিক্রি করলে লবণের খরচও উঠবে না।
সুনীল ঘোষ কিংবা সেলিম হোসেন নয়, তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া ক্রয় করলেও ন্যূনতম লাভে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারছে না। মোকামে এসে দাম নিয়ে চরম হতাশ। আর মহাজনের কাছে পাওনা বকেয়া টাকা না পেয়ে চামড়া কিনতে গিয়ে হিমশিম পাইকাররা। তাদেরও অভিযোগের শেষ নেই।
জানা যায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে রাজারহাট এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম। এই হাটে প্রায় ৩শ আড়ত রয়েছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে হাট। যশোর ছাড়াও আশেপাশের জেলার ক্রেতাবিক্রেতার সমাগম ঘটে এই হাটে। প্রতিবছর কুরবানি পরবর্তী হাটে ১০-১৫ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। এবার গত মঙ্গলবার ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে বৃষ্টির কারণে চামড়া নিয়ে আসতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে সীমিত পরিসরে হাট জমলেও গত হাটে অর্ধকোটি টাকারও চামড়া বেচাকেনা করতে পারেনি। তবে গতকাল শনিবার ছিল ভিন্নচিত্র। হাটে সরগরম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। ট্যানারি শিল্পে দেওয়ার জন্য স্থানীয় আড়তদাররা চামড়া কিনে মজুত করেন। এদিন হাটে ভালো চামড়া উঠলেও দাম নিয়ে সন্তুষ্টি নন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। প্রতিপিস গরুর চামড়া মানভেদে ১শ’ থেকে ৭শ’ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঋণ নিয়ে চামড়া ক্রয় করেছেন তারা। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম না পেয়ে আসল যেমন তেমন লবণ খরচও উঠবে না তাদের।
মাগুরার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রানা হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ না করায় সর্বস্বান্ত হয়েছি। লাভের আশায় এবারও চামড়া ক্রয় করছি। আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দিয়ে চামড়া নিয়ে ট্যানারি মালিকরা খেলা করছেন। তাদের কারণে চামড়া বাজারে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা পাচ্ছেন, ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ চামড়া কিনছেন বাকিতে। কোটি কোটি টাকা বাকিও ফেলে রাখছেন বছরের পর বছর। গত দুই বছরে তিনি ঢাকার ট্যানারি মালিকের কাছে ৩৮ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই টাকাগুলো পেলেই কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারতেন বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকার হেমায়েতপুর চামড়ার ব্যবসায়ী মেসার্স হালিম এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী হাজী হালিম বলেন, গেল বছরের তুলনায় এবছর প্রতি চামড়ায় ২শ’ টাকা বেশি। গ্রেড অনুযায়ী চামড়ার দাম নির্ধারণ হয়। সেহেতু যে চামড়ার যেমন দাম তেমনি পাবেন তারা। এতে তাদের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
রাজারহাট চামড়ার হাটের ইজারাদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে এই হাটে। তবে ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা বকেয়া টাকা পেলে বেচাকেনা আরো ভাল হতো বলে তিনি জানান।
যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল জানান, শনিবার কুরবানি পরবর্তী দ্বিতীয় হাটে প্রায় ২ কোটি টাকার বেশি চামড়া বিক্রি হয়েছে। সরকারি নির্ধারিত দামেই কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।