স্টাফ রিপোর্টারঃ যশোর বাঘারপাড়ার রায়পুর স্কুল এন্ড কলেজে নানা রকম দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জামাতকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। এর আগে তিনদফা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো জবাব না দেয়ায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভা শেষে রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিল্লাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সাথে তার বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নোটিশে সভাপতি আরো উল্লেখ করেছেন, বারবার তাকে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকার জন্য বলা হলেও তা তিনি আমলে নেননি। ফলে ১৩ জুলাই বিশেষ সভার স্বীদ্ধান্তের আলোকে ২৩ জুলাই মুলতবি সভায় তাকে দুই মাসের জন্য বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পরও জবাব না দেয়ায় কেন তাকে স্থায়ী বহিস্কারের জন্য বোর্ডকে সুপারিশ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এবং তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাঘারপাড়ার রায়পুর স্কুল এন্ড কলেজে নানা রকম দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জামাতকে শোকজ করে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিল্লাল হোসেন।শোকজে উল্লেখ করা হয়, তিনি স্কুল থেকে দুই বার নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে ঢাকায় ব্যক্তিগত কাজে যান। নিজের কাজে ঘুরে এসে প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। নিজের কাজে ঘুরে এসে ৬ হাজার দুইশো টাকা হজম করে নেন । শোকজে বলা হয় , দুই দফা প্রজেক্ট কমিটি করলেও স্কুল সংষ্কার করা হয়নি। ২০২০ সালের ১০ মার্চ বারান্দার গেট নির্মানের অজুহাত দিয়ে ৯০ হাজার টাকা সাধারণ তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। একমাসের কথা থাকলেও তা এখনো করা হয়নি।
আব্দুল আলীম, ওবাইদুর রহমান ও শাহীনের সাথে পজিশন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয় একই সাথে জাফরের কাছথেকে নগদ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে পজিসন বুঝিয়ে দেয়া হয়নি কেন তা জানতে চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির এক সদস্যের প্রতি মাসের সন্মানী ভাতা সাধারণ তহবিল থেকে উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পরে জানা যায় ওই টাকা ওই সদস্য নেননা। কিন্তু তার টাকা অধ্যক্ষ উঠিয়ে কি করেন সেটাও জানতে চাওয়া হয়। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে ২০১৯ সালের এপ্রিল ৭ম, ৮ম ও ১০ শ্রেনীর সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছথেকে ১শ’৫০, ২শ’৫০ ও ৩শ’ টাকা করে ৬২ হাজার ৭শ’ ৫০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে । এ টাকা আদায়ের কোনো রশিদ শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়নি। এমনকি সে টাকা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলেও জমা দেয়া হয়নি । গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্রতিষ্ঠানের পিওন বাঘারপাড়ার জয়নগর গ্রামের সামদিয়াত হোসেন বস্তাভর্তি বই চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক হয়।
এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল সামদিয়াতকে বহিস্কারও করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে স্কুল কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়ায় অভিযুক্ত পিয়নকে কেনো ফের স্কুলের সবকাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এছাড়া ২০১৮ সালে ৪ নভেম্বর পাঁচলাখ আটান্ন হাজার টাকার ফ্যান, ল্যাপটপ, মনিটর, সহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল কেনা হয়। যা রেজুলেশনের বাইরে ও ক্রয় কমিটি বাদেও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে করা হয়েছে যার ব্যখ্যা চাওয়া হয়। ২০১৮ সালের স্কুল শাখা ও কলেজ শাখার ৯শ’৮৯ শিক্ষার্থীর কাছথেকে ২০০ টাকা করে নিয়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয় যার কোনো রশিদ, বিল ভাওচার নেই এমনকি ক্রয় কমিটির ,মাধ্যমেও খরিদ হয়নি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের অর্থ বছর ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর দুইলাখ ৩৭ হাজার ৮শ’ টাকা খরচ করা হয় প্রজেক্ট কমিটি ছাড়া। এছাড়া যাতায়াতের রাস্তা ব্যায় ১৬ হাজার দুইশো, বাথরুমের ব্যয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪শ’৮৪ টাকা ব্যায়ের সিড়ি নির্মান ব্যয় ৫ লাখ ২৪ হাজার ৬শ’৫৭ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প রেজুলেশন নাই, প্রজেক্ট কমিটি ছাড়া ব্যায় হয়েছে।
এছাড়াও বার্ষিক ব্যায়ের হিসেবে দুই লাখ ২ হাজার ৯৭ টাকার গরমিল রয়েছে উল্লেখ করে এসব বিষয়ে জাবাব চাওয়া হয় উল্লেখিত নোটিশে। কিন্তু অধ্যক্ষ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় শোকজের জবাব না পেয়ে পরিচালনা পরিষদের মুলতবি সভায় তাকে বরখাস্তের স্বিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সভায় অধ্যক্ষ সহ ম্যানেজিং কমিটির ১০ সদস্যের মধ্যে ৫জন উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ সহ অন্য পাঁচজন এ সভায় অংশ নেননি।