তাসনিয়া ঐশী, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাট জেলা়য় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন নগরী ও অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। এটি জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পাথরঘাটা নামক স্থানে অবস্থিত। পাথরঘাটা প্রত্নস্থলটি বেশ কয়েকটি প্রত্নসম্পদের সমষ্টি। এটি উপজেলা সদর থেকে ৬.৪৪ কিলোমিটার পূর্বে তুলসীগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। তুলসীগঙ্গা নদীর উভয় তীরেই এই প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন পাওয়া যায়।
জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান পাথরঘাটা।ইতিহাসবীদদের গবেষণায় উঠে এসেছে এক সময়ে মহীপাল রাজার রাজধানী ছিল পাথরঘাটা।
৭৫৫-১১৭৫ খৃঃ এই অঞ্চলে- পালদের শাসন আমল ছিলো প্রায় ৪২০বছর।
হাজার বছরের পুরনো জনপদে এখনো প্রায় স্থানেই চোখে পরে কারুকার্য খচিত পাথরের পিলার। সেই সাথে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসা ছোট ছোট ইট পাথরের সাদৃশ্য চোখে পরে আর এতেই প্রমানিত হয় অত্র অঞ্চলটি ছিলো ধ্বংস স্তুপ।
তিন ধারে নদী মাঝধানে অসংখ্য পুরনো গাছ ও হযরত নাসির উদ্দিন শাহ্ মাজার।
চমৎকার একটি পরিবেশ তবে শীতের সময়ে কাশ ফুলে স্থানটি আরও দৃষ্টি নন্দিত হয়ে উঠে।
এখনো এই তুলশী গঙ্গা নদীতে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পাথর যাহা হাজার বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী বহন করছে। বর্তমান সময়ে মাজারের স্থানে রয়েছে প্রায় ২শ বছরের প্রাচীন রেইনট্রি গাছ এবং একটি ২কামরা বিশিষ্ট অক্ষত পুরনো মাটির ঘর।
এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক সুন্দর্য স্থানের নামই পাথরঘাটা। সবুজের সমারোহে ঘেরা পাথরঘাটার মনোরম পরিবেশ দেখে যে কেউ বিমোহিত হয়ে পড়েন। তবে ইদানীং যত্নহীন হয়ে পড়েছে এ স্থান। হয়তো নিরবে অশ্রুসিক্ত হচ্ছে এখানকার প্রকৃতি।
ইসলাম প্রচারের জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে হযরত নাসির উদ্দিন শাহ্ নামের এক সুফী সাধকের আগমন ঘটে এখানে। একই ব্যক্তি হিন্দু ধর্মানুসারীদের কাছে নিমাই শাহ নামে পরিচিত ছিলেন মৃত্যুর পর পাথরঘাটাতেই তাকে সমাহিত করা হয়।
পবিত্র এই স্থানের আরো একটি বিশেষত্ব হচ্ছে একই স্থানে খীষ্ট্রানদের মিশন-চার্চ-এবং সমাধি স্থল, হিন্দু ধর্মীয় বেশ কিছু মন্দির, এবং মুসলমান ধর্মীয় হযরত নাসির উদ্দিন শাহ্ এর মাজার। প্রতিদিন শত শত লোকজন তাদের বিভিন্ন মানত পূরনের জন্য আসেন পবিত্র এই স্থানে।
পাথরঘাটা লিলাভুমির পাশে একটি নীচু পাথরের আসন আছে। এটি পীরের আসন হিসেবে পরিচিত। তিনি বক্তব্য দেওয়ার পূর্বে এই পাথরের উপর বসতেন। চৈত্র মাসের প্রথম সোমবার মাজারে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হত। মিলাদের কিছুদিন পর সেখানে মেলা বসত যেটিতে হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলমান জড়ো হত। এই মেলাটি পাথরঘাটার মেলা বলে পরিচিত ছিল। এখানে অনেক পাথর পরে থাকতে দেখা যায়। কথায় আছে যে পীর সাহেব অলৌকিকভাবে নদী তলদেশ থেকে পাথরগুলো এনেছিলেন। মাজারের পাশ দিয়ে মৃতপ্রায় তুলশিগঙ্গা নদী বয়ে চলেছে যা দেখতে অনেকটা খালের মত। নদীটিতে স্রোতের অবস্থা এতটাই করুন যে নদীটি যেকোনো দিন মরে যেতে পারে। আপনি এখানে ভ্রমণকালে নদীটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
যেভাবে যাবেন:
পাথরঘাটা প্রত্নস্থল এর অবস্থান রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায়। সেক্ষেত্রে এখানে যেতে হলে ঢাকা থেকে সরাসরি জয়পুরহাটে বাসে অথবা ট্রেনে যেতে পারেন। জয়পুরহাট পৌঁছে যেকোনো সিএনজি বা রিকশা নিয়ে চলে যেতে পারবেন পাঁচবিবি উপজেলার পাথরঘাটা প্রত্নতত্ত্বস্থলে।