1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman
শিরোনামঃ
ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অবসর জনিত বিদায়ী সংবর্ধনা ঝিকরগাছায় জামায়াতের কর্মী সমাবেশে ও ইফতার মাহফিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী সমিতির সভাপতি সামাদ ও সম্পাদক সোহাগ যশোর সদরের সতিঘাটায় সওজের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা অপারেশন ডেভিল হান্টেও ফিরছে না স্বস্তি সাতক্ষীরায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক বিপ্লবকে হুমকি, থানায় অভিযোগ যশোরে খালুর চোখ উপড়ে ফেলা সেই যুবক আটক ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পেল ৮ শিশু-কিশোর ইয়েমেনে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ১৮০ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাজারে ফিরছে বোতলজাত সয়াবিন, কিছুটা কেটেছে সংকট

অপারেশন ডেভিল হান্টেও ফিরছে না স্বস্তি

  • প্রকাশের সময় রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫
  • ২৮ বার সংবাদটি পাঠিত
অপারেশন ডেভিল হান্ট

কণ্ঠ ডেস্ক

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ বাড়ছে। ছিনতাই-ডাকাতি, রাহাজানি-খুন, ধর্ষণসহ একের পর এক নানা অপরাধ সামনে আসছে। সেই সঙ্গে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযানে শত শত অপরাধী গ্রেফতার হলেও সাধারণ মানুষের মনে এখনও স্বস্তি ফেরেনি। মাদক, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রশ্ন উঠছে—এতে কি সত্যিকারের অপরাধীরা ধরা পড়ছে, নাকি ছোটখাটো অপরাধীদের ধরে অভিযান সফল দেখানোর চেষ্টা চলছে? অন্যদিকে ডেভিল হান্টের নামে কাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে?ঢাকা মহানগরীর একাধিক এলাকায় সাধারণ মানুষ এখনও নানা ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘দিনের বেলায় কিছুটা স্বস্তি থাকলেও রাতে বের হলে ভয় লাগে। ছিনতাই আগের মতোই হচ্ছে। পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু অপরাধ বন্ধ হয়নি।’পুরান ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদাবাজরা আগের মতোই আছে। মাঝেমধ্যে বড় কিছু ধরপাকড় হয়, কিন্তু কয়েকদিন পর ওরা আবার বেরিয়ে আসে। অভিযান চলছে, তবু অপরাধ কমছে না। আসল গডফাদারদের ধরা হচ্ছে না বলেই হয়তো এসব ঘটছে। তাহলে ডেভিল হান্টে কাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে?’ বিশেষ অভিযানের পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং উদ্বেগ বেড়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ওই হামলায় গুরুতর আহত একজন পরে মারা যান। এই ঘটনার পর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী গত ৮ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই অভিযানে মোট ৩০ হাজার ৭০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ হাজার ৫০০ জন ডেভিল হান্টে এবং বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন ১৯ হাজার ৫০২ জন ব্যক্তি। তবে এ অভিযান অব্যাহত থাকলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ মাসে আর কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে অভিযান অব্যাহত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না— এমনটাই বলছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। বরং সাধারণ মানুষের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করার পরও গত এক মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৪২টি, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৫৭টিতে পৌঁছেছে। ফেব্রুয়ারিতে দুই জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। দলবদ্ধ ধর্ষণের সংখ্যা জানুয়ারিতে ছিল ১৫টি, যা ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ১৭টি। নারী ও শিশুদের অপহরণ এবং নিখোঁজের ঘটনা জানুয়ারিতে ছিল ১৫টি, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮টি। গণপিটুনির ঘটনা কিছুটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। জানুয়ারিতে ১২ জন গণপিটুনিতে নিহত হন, আহত ১৮ জন। আর ফেব্রুয়ারিতে ৮ জন নিহত ও ১৯ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘পরিসংখ্যান দিয়ে সব সময় পরিস্থিতি বোঝা যায় না। কারণ রিপোর্টেড ক্রাইম ও প্রকৃত অপরাধের মধ্যে পার্থক্য থাকে। জনগণের ভীতি কেটেছে কিনা সেটাই আসল বিষয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীদের ধরতে সারা দেশে একযোগে যৌথ অভিযানের কোনও বিকল্প নেই।’
ফেসবুকে ভাইরাল অপরাধের ভিডিও
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ছিনতাই ও ডাকাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বনশ্রী এলাকায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মালামাল লুট করছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ১৯ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। এতে গুলিতে দুই জন নিহত হয়। পুলিশ জানায়, তারা ছিল ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’। এলাকার বাসিন্দা আসিফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনার পর অপরাধ কিছুটা কমেছে, তবে আতঙ্ক রয়েই গেছে। বিশেষ করে ঈদের আগে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটা নিয়ে সবাই চিন্তিত।’ পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বাংলাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনায় ১১৪৫টি মামলা হয়েছে। এক বছর আগে একই সময়ে ৭৬৩টি মামলা হয়েছিল। অর্থাৎ অপরাধের হার আগের তুলনায় বেড়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারা দেশেই আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। শুধু ডেভিল হান্ট নয়, সব ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। কোনও অপরাধীই ছাড় পাবে না। অভিযানে অনেক বড় বড় অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। আমরা সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।’ অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘শুধু ধরপাকড় করলেই অপরাধ কমবে না। অপরাধের শেকড় অনেক গভীরে। মূল হোতাদের আইনের আওতায় না আনলে এসব অপরাধ বারবার ফিরে আসবে। অপরাধী শুধু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের লোকজন নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ছত্রছায়ায়ও রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিযান সফল করতে হলে শুধু পুলিশি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যেন আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে আসতে না পারে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য কাজে লাগাতে হবে।’
কী বলছে সরকার?
যখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চালালেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেভাবে উন্নতি হয়নি, তখন ভিন্ন অবস্থান সরকারের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই বিশেষ অভিযানের পর দেশে অপরাধের হার কমেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্বীকার করেছেন যে, পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলায়নি। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে অবনতি। হত্যার মতো বড় ধরনের অপরাধ কিছুটা কমেছে। তবে ছিনতাই ও ছোটখাটো অপরাধ বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, “অপরাধ যতটা ঘটছে, তার চেয়ে বেশি ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানো হচ্ছে। কয়েকটি বড় ঘটনা পরপর ঘটেছে, আবার সেগুলোর ভিডিও সোশ্যালমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে যতটুকু না ঘটনা ঘটেছে, তার চেয়ে বেশি প্রচারণা চালানো হয়েছে।’ সরকারের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরাই পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে ‘প্রোপাগান্ডা’ চালাচ্ছে। তারা যে ষড়যন্ত্র করছে, তা স্পষ্ট। তারা ‘ডেভিল অ্যাক্টিভিজম’ চালাচ্ছে বলেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ প্রয়োজন হয়েছে।” সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ‘অভিযান সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চালানো হচ্ছে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করছে, জনজীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতেই এই অভিযান।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে মানসিক চাপের মধ্যে ছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। সে তুলনায় অনেকটা শক্তি অর্জন করেছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।’
সাধারণ মানুষ দ্রুত স্বস্তি চায়
সরকারের দাবি, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জনমনে আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অভিযান চলবে এবং অপরাধীদের ধরা হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানের প্রকৃত কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে হলে আরও সময় প্রয়োজন। সাধারণ জনগণের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, অভিযানে কি শুধু ছোট অপরাধীদের ধরা হচ্ছে, নাকি আসল গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে? একাধিক এলাকায় সাধারণ মানুষ মনে করছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীদের এখনও ধরা হয়নি। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চললেও জনগণের আতঙ্ক এখনও কাটেনি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অভিযান নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে অপরাধের শেকড় উপড়ে ফেলা যায়। আর সাধারণ মানুষ অপেক্ষায়, সত্যিকারের অপরাধীরা কবে ধরা পড়বে!

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION