কণ্ঠ ডেস্ক
গত বছর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ ভবনের অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব পড়েছিল সেখানকার ইফতার বাজারে। যার ফলে ওই রমজানে আগুন আতঙ্কে সেখানকার ইফতার বাজারে অনেকটা ক্রেতাশূন্য ও ভূতুড়ে পরিবেশ ছিল। এবার সেই আতঙ্ক কাটিয়ে জৌলুস ফিরেছে বেইলি রোডের ইফতার বাণিজ্যে।ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছে জ্যাগেরি রেস্তোরাঁ ও পিঠা ঘর এবং ক্যাপিটাল ইফতার বাজার, নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁসহ অনেক দোকান। এসব দোকানে প্রায় শতাধিক ইফতারের আইটেম দেখা গেছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ছোলা, বুট থেকে শুরু করে মগজ ভুনা, খাসির হালিম, গরুর চপ, গরুর শামি কাবাব, মাটন লেগ রোস্ট, জালি কাবাব, শিক কাবাব, রেশমি কাবাব, সুতি কাবাব, ভেজিটেবল রোল, স্প্রিং রোল, বাসমতির জর্দা, চাটনি, পনির সমুচা, নিমকি পোড়া, বুন্দিয়া, হালিম, দই বড়া, কিমা পরোটা, কাশ্মীরি পরোটাসহ হরেক রকমের জিলাপি পাওয়া যাচ্ছে। কাবাব আইটেমের পাশাপাশি পিঠার আইটেমও বিক্রি হচ্ছে। এক-একটি ইফতারের আইটেম বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৭০০ টাকায়।বেইলি রোডের দোকানিরা বলছেন, গত বছর আগুনের ঘটনার পর রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা অভিযান পরিচালনা করে বেইলি রোড এলাকায় নবাবী ভোজসহ একাধিক রেস্তোরাঁ সিলগালা করে দিয়েছিল। মানুষের মধ্যে আগুনে ওই ঘটনায় এই এলাকাকেন্দ্রিক এক ধরনের আতঙ্ক ছিল। এবার সেই পরিবেশ নেই। মানুষ আগের মতো এবারও ইফতার কিনতে বেইলি রোডে আসছে। তবে, রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে ইফতার করার ক্ষেত্রে এখনও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়ে গেছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মানুষ ঘুরে-ঘুরে নিজেদের পছন্দসই ইফতার ক্রয় করছে বিভিন্ন দোকান থেকে। ছুটির দিন হওয়ার অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে ক্রেতার ভিড়ও বেশি। যার ফলে বিক্রিও বেশি হচ্ছে দোকানগুলোতে।ইফতার ক্রয় করতে আসা মানুষের কারও হাতে হালিমের বাটি, কার হাতে হরেক রকমের কাবাব, আবার কারও হাতে ছোলা ভুনা, পিঁয়াজু, বেগুনির প্যাকেট। ইফতারে পাশাপাশি অনেকে তেহারি-বিরিয়ানিও কিনেছেন। বাজার ঘুরে জানা যায়, এবার কিছু কিছু ইফতার আইটেমের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে মাংসের তৈরি আইটেম ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আর অন্যান্য আইটেম ক্ষেত্রবিশেষ ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। জ্যাগেরি রেস্তোরাঁ ও পিঠা ঘরের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান রিফাত বলেন, দাম খুব একটা বাড়েনি। আগের মতোই আছে।গরুর কালো ভুনা গত রমজানে ১৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, যেটা এবার বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ টাকা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চর্বি ছাড়া এটা বিক্রি হচ্ছে। এই মাংস শুধু ক্রয় করতে হয়েছে ৯০০ টাকায়। একসঙ্গে মসলাসহ অন্য জিনিস তো আছেই। কাজে একটু দাম বাড়াতে হয়েছে। ক্যাপিটাল ইফতার বাজারে গত রমজানে বিফ কালো ভুনা বিক্রি হয়েছিল ১২০০ টাকায় বলে দাবি করেন ক্রেতা জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, আমার যতটুকু মনে পড়ে গত বছর এখান থেকে আমি ১২০০ টাকায় দিয়ে বিফ কালো ভুনা ক্রয় করেছিলাম। এবার সেটা বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়। এভাবে এখানে প্রতিটি ইফতার আইটেম দাম গতবারের তুলনায় দাম বাড়িয়েছে।ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের বিক্রয় কর্মী আহসান জানান, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে হয়ত কিছু দাম বেড়েছে। না হলে আগের দামেই আছে।
রেস্তোরাঁর ভেতরে ইফতারে এখনও রয়েছে আতঙ্কে
ইফতার কেনাকাটায় জৌলুস ফিরলেও রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার করার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহ এখনও অনেক কম বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগুনে ঘটনার পর থেকে মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক রয়ে গেছে। যার কারণে মানুষ ইফতার কেনাকাটা করে নিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো রেস্তোরাঁয় বসে ইফতার করতে কম মানুষ আসছে। মাহমুদুল হাসান রিফাত বলেন, বিক্রি খারাপ না। মোটামুটি ভালো হচ্ছে। তবে, আগে দোকানের ভেতরে ইফতারের সময় মানুষকে জায়গা দেওয়া যেতো না। কিন্তু আগুনে পর থেকে মানুষ এখন দোকানে বসে ইফতার করা কমে গেছে। এখন দোকান ফাঁকাই থাকে।