আসাদুর রহমান শার্শা প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় আম্পান’র পর যশোর রোডের শতবর্ষী রেইনট্রি গাছগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ এই ঝড়ে যশোর অংশে জীর্ণ ও মৃতপ্রায় ২৩টি শতবর্ষী গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের অংশে উপড়ে পড়েছে শতাধিক গাছ। এই ঝড়ের পর স্থানীয়রা বলছেন, আম্পান চলে যাওয়ার পর ‘মৃতপ্রায় ও জীর্ণ’ শতবর্ষী গাছগুলো তাদের জন্য অত্যন্ত আতঙ্কের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, এই গাছগুলোর জন্য তারা উন্নয়নবঞ্চিত হয়েছেন। এখন এই গাছই তাদের উপরে ভেঙ্গে পড়ছে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় সেখানকার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
যশোর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহাসিক যশোর রোডের যশোর- বেনাপোল অংশের ৩৮ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে দুই শতাধিক শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ রয়েছে। গত ২০ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান’র তাণ্ডবে এই মহাসড়কের ২৩টি শতবর্ষী রেইনট্রি গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে। ভেঙেপড়া গাছগুলো, ঝিকরগাছার হাজের আলী, বালিখোলা, গদখালি, বেনেয়ালি, বাদে নাভারণ কলোনি বাজার এলাকার। এছাড়াও অসংখ্য গাছের ডালপালা ভেঙে দুর্ঘটনা ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটেছে। গাছ পড়ে নাভারণ কলোনি বাজারের ৪টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরদিন প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস’র তৎপরতায় গাছের কিছু অংশ সরিয়ে সড়ক চলাচলের আংশিক উপযোগী করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, যশোর- বেনাপোল সড়কের শতবর্ষী এই গাছগুলো এখন ‘জীর্ণ ও মৃতপ্রায়’। ঘূর্ণিঝড় আম্পান’র তাণ্ডবের পর বেশকিছু গাছ উপড়ে ও ভেঙে পড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবগাছই। আর এতে শতবর্ষী গাছগুলো হয়ে পড়েছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। একারণে গত বুধবারের কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক স্থানেই এই গাছগুলোর ডালপালা ভেঙে পড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্যমতে, আগামীতে আরও কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। দুর্বল হয়ে পড়া গাছগুলো আসন্ন ঝড়ে আরও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। এসব নিয়ে আতঙ্কিতও তারা।
এদিকে, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, যশোরের সমন্বয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু জানিয়েছেন, আম্পান ও ঘূর্ণিঝড়ে যশোর-বেনাপোল সড়কে তেইশটি গাছ উপড়ে পড়ে জনগণের জানমাল ও নবনির্মিত রাস্তার ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। যশোর-বেনাপোল সড়কের জীর্ণশীর্ণ মৃতপ্রায় গাছগুলো বর্তমানে ‘হিউম্যান থ্রেড’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর প্রথম থেকে বেনাপোল বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল বিবেচনায় উন্নত সড়কের কথা বলে আসছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হবে না এবং এলাকার মানুষের কর্মের যে আপার সম্ভাবনা তা নষ্ট হবে।
‘উন্নত বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে কোনো গাছ থাকে না। এজন্য নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোর-বেনাপোল সড়কের জীর্ণশীর্ণ মৃতপ্রায় গাছগুলো অপসারণ করে টেকসই সড়ক তৈরি করার উপর জোর দাবি জানাচ্ছে। একইসাথে রাস্তা তৈরি শেষে পরিকল্পিতভাবে রাস্তার দু’ধারে পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোরও দাবি জানাচ্ছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, যশোর বেনাপোল সড়কের শতবর্ষী জীর্ণ ও মৃতপ্রায় গাছগুলো এখন জীবনের জন্য হুমকি। এই গাছের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কেউ সহানুভূতি জানায় না বেনাপোল বন্দরের উন্নয়ন ও মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য তিনি জীর্ণ ও মৃতপ্রায় গাছগুলো অপসারণের দাবি জানান।
এদিকে, আম্পান’র তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে যশোর রোডের শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। এ ঘটনার পর ‘গাছ রক্ষায় আন্দোলনকারীদের’ একহাত নিয়েছেন সে দেশের উন্নয়নবঞ্চিতরা। আনন্দবাজার পত্রিকা এমন তথ্য জানিয়েছে।
সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিককে উদ্বৃত করে আনন্দবাজার জানিয়েছে,শনিবার পর্যন্ত জানা গেছে, বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পথে শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছের ডাল ভেঙেছে অসংখ্য। সঠিক সংখ্যাটা জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’’
পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, যশোর রোড (৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক নামেও পরিচিত) সম্প্রসারণের জন্য বছর তিনেক আগে বারাসত, অশোকনগর, হাবড়া এবং বনগাঁয় পাঁচটি উড়ালপুল (ফ্লাইওভার) বা রেলসেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল যশোর রোডের পাশের গাছ কাটা প্রয়োজন। বনগাঁয় গাছ কাটার কাজ শুরুও হয়। এরপরেই গাছ বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণের দাবিতে সরব হন বৃক্ষপ্রেমীরা।গাছ বাঁচানোর দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়, একটি মানবাধিকার সংগঠন। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।
যশোর রোডে গিয়ে দেখা গেল বহু গাছ ভেঙে মাটিতে শুয়ে আছে। কিছু গাছ ডালপালা খুইয়ে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে, গাছ ভেঙে পড়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সোশ্যাল মিডিয়াতে নানান চর্চা শুরু হয়েছে। গাছের জন্য কেউ কেউ মনোকষ্ট প্রকাশ করলেও কেউ কেউ লিখছেন,প্রাচীন গাছগুলো নিয়ে আন্দোলন করে রেলসেতু তৈরি রুখে দিয়ে কী লাভ হল? সেই তো ঝড়ে ভেঙেই পড়ল। শুধু শুধু উন্নয়নটা আটকে দেওয়া হল।