করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আর ‘আম্ফান’ এর মত ভয়াল রাতেও নিজের জীবন বাজী রেখে অসহায় গরীব-দুঃখী মানুষের চিন্তায় প্রত্যন্ত গ্রামের অজ পাড়াগাঁয়ে অবিরাম ছুটে চলেছেন তিনি। জনসাধারণকে সচেতন করতে কখনও হাতে হ্যান্ডমাইক, কখনও পরিচ্ছন্নকর্মী হয়ে ঝাড়ু ধরছেন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কখনও অবৈধ দখল উচ্ছেদে কর্দমাক্ত খালে নেমে পড়ছেন, আবার কখনও গভীর রাতে নিজ হাতে ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় মায়ের দ্বারে দ্বারে কড়া নাড়ছেন। মানবতার সেবায় নির্ঘুম রাত, আর অক্লান্ত সকাল-দুপুর ছুটে চলায় যার ব্রত। তিনি হলেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন।
অপরদিকে একদল দুর্নীতিবাজ, স্বার্থান্বেষী, ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল একাট্টা হয়ে তাকে বদলী করাতে নানান ধরণের অপপ্রচারে নেমেছে। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমতো ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের দিক নির্দেশনায় সরকারের অর্পিত সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করে আসছেন তালার ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন। যে কারণে তিনি দু-দুবার সাতক্ষীরা জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রচেষ্টায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তালা উপজেলা স্বচ্ছতার মানদণ্ডে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে ইতিমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। তার মেধা, সততা, কর্মদক্ষতা, মানবিকতা, যেখানে সমস্যা সেখানেই ছুটে গিয়ে সমাধান করাসহ বিভিন্ন মানবিক গুণাবলীর কারণে তিনি এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।
তালা উপজেলার মাটি ও মানুষের সাথে মিশে যাওয়া ইউএনও ইকবাল হোসেন পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার সন্তান। প্রায় ১০ মাস আগে তালা উপজেলায় যোগদানের পর থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। অসহায় ও কর্মহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সহায়তা। ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ পরবর্তী তার বর্তমান ভূমিকাও প্রশংসার দাবী রাখে। এছাড়া ‘ক্লিন সাতক্ষীরা,গ্রিন সাতক্ষীরা’ গড়ে তোলার লক্ষ যে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। নাগরিকদের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে ইতিমধ্যেই তিনি অত্র উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষকে মুগ্ধ করেছেন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষাসহ দুর্নীতি মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ছুটে চলা ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন যোগদানের মাত্র ১০ মাসের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সকল প্রকার দুর্নীতি-অনিয়ম রুখে দিয়ে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, খালে-বিলে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতায় নেট-পাটা অপসারণ, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহলের শত্রু হলেও একের পর এক ইতিবাচক ঘটনার জন্ম দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থার পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের গরমে দুর্ভোগের চিত্র দেখে,তাদের কষ্ট উপলব্ধি করে নিজেকে অপরাধী মনে করেছিলেন তিনি। ঘোষণা দিয়েছিলেন হাসপাতালে এসির ব্যবস্থা না করে নিজের রুমের এসি ব্যবহার করবেন না। অবশেষে তার ঐকান্তিক চেষ্টায় তালা হাসপাতালে রোগীদের জন্য এসির ব্যবস্থা হয়।
একজন ইউএনও’র তদারকিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় সকল দপ্তরে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ফিরেছে, সরকারের প্রতি আস্থা ফিরেছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু ভূমিদস্যু-দুর্নীতিবাজ, স্বার্থান্বেষী মহলের গাত্রদাহে এই সৎ মানুষটির বিরুদ্ধে চলছে নানা ষড়যন্ত্র! তাকে বদলী করতে উঠে পড়ে লেগেছে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল।
একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছর জুনমাস এলেই নড়েচড়ে বসে একটি দুর্নীতিবাজ ও প্রভাবশালী চক্র। প্রতিবছর জুন মাস এলেই তাদের খাওয়া ঘুম হারাম হয়ে যায়। আইওয়াশ টেন্ডারের মাধ্যমে কোন কাজ না করেই এডিপি’র লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয় এই সিন্ডিকেট। বর্তমান ইউএনও এখানে থাকলে উক্ত টাকা কোনভাবেই ভাগাভাগি করতে পারবেনা বলে তারা ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন, বিগত ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই তালায় যোগদান করেন। যোগদান করেই তিনি অনিয়মের বেড়াজাল ভাঙতে শুরু করেন। তিনি দু-দু’বার সাতক্ষীরা জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। প্রবহমান খালে অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্ত করে সাধারণের চলাচলের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, কোথাও আবার কঠোর হস্তে আইনের শাসন প্রয়োগ করছেন। যে কারণে তিনি সাধারণ মানুষের মনের মাঝে স্থান পেয়েছেন তিনি।
এদিকে তালার দুর্নীতি পরায়ণ কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ সিন্ডিকেট চক্র অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিতে না পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধাচরণসহ নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। অযৌক্তিক অজুহাতে আন্দোলনের পায়তারা করছে এমন অভিযোগ সচেতন মহলের।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, যারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিতে পারছে না তারাই ইউএনও’র বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মুক্তিযোদ্ধা এমএম ফজলুল হক জানান, নিঃসন্দেহে ইউএনও একজন ভালো মানুষ, তিনি সঠিক কাজগুলোই করছেন এবং দেশের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তালা মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিঃসন্দেহে একজন সৎ ও ভাল মানুষ। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তালা হাসপাতালে রোগীদের জন্য এসির করা ব্যবস্থা হয়।
তালার সিনিয়র সাংবাদিক এম এ ফয়সাল জানান, আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা এমন একজন সৎ ও যোগ্য সরকারি অফিসারকে পেয়েছি। বর্তমান ইউএনও তালায় যোগদানের পর থেকে সমস্ত সেক্টরে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে।
জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা মীর জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা ভালো মানুষকে ইউএনও হিসাবে পেয়েছি, কিন্তু সবাই তো আর ভাল চাই না।
এ বিষয়ে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে ছুটে চলা তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। যতদিন আছি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবো। আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে এসেছিমাত্র।’ এ সময় সকলের সহযোগিতা পেলে তালা উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কল্যাণে যা যা করার প্রয়োজন সেটি করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।