জহুরুল ইসলাম
যশোর সদর উপজেলার সিরাজসিংগা দাখিল মাদরাসার পাশে প্রশাসনের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবৈধভাবে প্রায় ১০ বছর ধরে গড়ে উঠেছে স্মার্ট বিকস্ নামে একটি ইটের ভাটা। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে সিরাজসিংগা দাখিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ২০১৫ সালের দিকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে স্মার্ট বিকস্ ইট ভাটা স্থাপন করা হয়। আইন অমান্য করে মাদরাসার কাছেই তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এসব দেখেও না দেখার ভান করছে প্রশাসন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসার পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইট ভাটা। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ ভাটার অন্যপাশে আবার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের জমি। ভাটার মালিকরা প্রভাবশালি হওয়াই অনেকে ভয়ে কিছু বলতে পারেনা। এদিকে ইট ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা হাঁচি, কাশি, অ্যাজমা, এলার্জিসহ নানা ধরনের চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আইন অনুযায়ী যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। তবে সেই আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপট খাঁটিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ভাটাটি। মাদরাসার শিক্ষার্থী, স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাবকেরা এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, ইট ভাটা স্থাপনের সময় বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে জোরপূর্বক ইট ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। দ্রুত এ ইট ভাটা উচ্ছেদ করে মাদরাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা জানায়, ‘ইট ভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কয়লার অনেক বাজে দুর্গন্ধ আসে। মাঝে মাঝে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা অসুস্থতার কারণে মাদ্রাসায় আসতে পারে না। শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার ও রিয়াদ হোসেন জানায়, ‘ইট ভাটার ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। একদিকে ধুলো উড়ে পরিবেশ নষ্ট করে। অন্যদিকে বেপরোয়া ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া রাস্তার ধুলোবালি আমাদের গায়ে লেগে ড্রেস নোংরা হয়ে যায়। ইট ভাটাটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’ ওই এলাকার কৃষক হিরণ বলেন, ‘ফসলি জমির পাশে ইট ভাটার ধোঁয়া ও ধুলো বালিতে আমাদের ফসলের জমি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন কমে গেছে, ঘর-বাড়ির চালা ও আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। শিশুরা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’ নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে মাদরাসা সাবেক পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বলেন, ইট ভাটা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সরকারের রেজিস্ট্রেশন শাখা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন কিভাবে অনুমতি দিয়েছে তা আমার জানা নেই। দ্রুত প্রতিষ্ঠানের পাশ থেকে ইট ভাটা উচ্ছেদ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে স্মার্ট বিকস্ এর পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, আমরা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে ভাটা পরিচালনা করছি। তবে ছাড়পত্র দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। মাদরাসার ইংরেজি শিক্ষক মো. কাওসার আলী বলেন, বছর দেড় আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ভেকু/এক্সকাভেটর নিয়ে ভাটা উচ্ছেদ অভিযানে আসে। তবে তাদের ক্ষমতার দাপটে তখন উচ্ছেদ না করে ফিরে চলে যাই। মাদরাসার সুপার মাও. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছরই দাখিল পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করে আসছে মাদরাসাটি। মাদরাসায় মোট শিক্ষক কর্মচারীসহ ১৪ জন কর্মরত আছে। এ মাদরাসায় মোট শিক্ষার্থী রয়েছে আড়াই শতাধিক। ইট ভাটার কারণে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের। যশোর পরিবেশ অধিদফতর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এমদাদুল হক এর কাছে এ বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কথা একদম স্পষ্ট। যদি কোনো ইট ভাটা থেকে পরিবেশ দূষিত হয় বা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই ওই সকল অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।