1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

মাছের চাল মানুষকে খাওয়াচ্ছে ওসিএলএসডি শাকিল

  • প্রকাশের সময় রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১১৩ বার সংবাদটি পাঠিত
মাছের চাল মানুষকে খাওয়াচ্ছে ওসিএলএসডি শাকিল

কণ্ঠ ডেস্ক

সরকারের খাদ্য বিভাগে চলছে আমন ধান-চাল সংগ্রহ মৌসুম। চলতি মৌসুমে সারাদেশের মতো যশোর জেলার আট উপজেলার ১০ টি খাদ্য গুদামে চলছে সংগ্রহ কার্যক্রম। এর মধ্যে জেলার মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য গুদামে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের (মৎস্য খামারে ব্যবহৃত) চাল ক্রয় করেছেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মেহেদী হাসান শাকিল। সরকারি নির্দেশ বহির্ভুত এই চাল কোনোভাবেই গুদামে গ্রহণ করার সুযোগ না থাকলেও বিপুল পরিমাণ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি এমন অপকর্মে জড়িয়েছেন। যা জানাজানি হলে গোটা খাদ্য বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট স‚ত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় ১ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৩১ মেট্রিক টন চাল ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই চালের অধিকাংশই (মরা দানা, কালো দানা ও বিবর্ণ দানায়) পরিপ‚র্ণ। স্থানীয় মৎস্য চাষীদের কাছে যা ‘মাছি চাল’ নামে পরিচিত। সাধারণত মাছের খাদ্য হিসেবে ওই চালের ভাত রান্না করে মৎস্য ঘেরে ছিটানো হয়। খাদ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী- নীতিমালার বাইরে (সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ মরা দানা, কালো দানা, বিবর্ণ দানা) থাকতে পারে, যা খালি চোখে ধরা পড়ার সুযোগ নেই। অথচ, সরকারি নির্দেশনা না মেনে বিপুল অর্থবাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে ওই খাদ্য কর্মকর্তা। তবে গত ১৫ ডিসেম্বর ওই কর্মকর্তাকে মণিরামপুর থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। একইসাথে যশোরের চৌগাছা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বিশ্বাসকে মণিরামপুর খাদ্য গুদামে বদলি করা হয়। ওই আদেশে সাত কর্মদিবসের মধ্যে অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যেই মণিরামপুর গুদামে ‘নিম্নমানের চাল ক্রয়ের’ পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সরকারি খালি বস্তার ঘাটতির খবর জানাজানি হয়। এছাড়াও বেশ কিছু চাল ঘাটটি রয়েছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যোগদানের আদেশপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব বুঝে না নিয়ে বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানালে ২৫ ডিসেম্বর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাজহার আনোয়ারকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- ঝিকরগাছা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজ্জামান লিটন ও যশোর কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক (টিআই) মিঠুন চক্রবর্তী। জানা গেছে, তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে গুদাম পরিদর্শন করেছেন। এখনো তাদের তদন্ত চলমান আছে।স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নন-ক্যাডারে খাদ্য বিভাগে নিয়োগ পাওয়া মেহেদী হাসান শাকিল মণিরামপুরে যোগদানের পর থেকেই অর্থ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে, কয়েকমাস আগে বোরো মৌসুমে তিনি উপজেলার কোন কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় না করে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করে নিজেই সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এরপর লোক দেখাতে ২৫০-৩০০ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের পর থেকে কোন কৃষকের কাছ থেকে ধান না কিনে ‘খাতা-কলমে’ প্রায় ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় দেখিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে সরকারি ম‚ল্য উত্তোলন করেন। এতে প্রতি কেজি ধানে ৭-৮ টাকা হারে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ওই ধান ‘ক্রাশিং করে’ চাল উৎপাদন করা হচ্ছে মর্মে মিলারদের সকল সরকারি খরচ উত্তোলন করার সুযোগ সৃষ্টি করে সেখান থেকেও কমিশন নেন। বাস্তবে ওই ধানের ফলিত চাল হিসেবে বাজার থেকে নিম্নমানের চাল কিনে গুদামে পাঠায় ওই সিন্ডিকেট। এতে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গুদাম স‚ত্রে জানা গেছে, মণিরামপুরে যখন জলাবদ্ধ অবস্থা তখনও প্রতিদিন খাতা-কলমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নামে কমিশন নিয়েছেন ওই গুদাম কর্মকর্তা। কোনো কোন দিন অস্বাভাবিক ক্রয় দেখিয়ে দুর্নীতির নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি।যশোর খাদ্য বিভাগে জনশ্রুতি রয়েছে- ধান-চাল সংগ্রহ মৌসুম ছাড়াও বিতরণ কর্মস‚চির প্রত্যেক কেজি বাবদ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌছে দিলে সব দুর্নীতি ধামাচাপা পড়ে। ফলে প্রত্যেক গুদাম কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ ফর্মুলায় তুষ্ট রেখে লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়াও ‘নানা মহল’ ম্যানেজের লক্ষ্যে সদর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মাহবুব আলম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রত্যেক মাসিক মিটিং শেষে ওসিএলএসডিদের ঘুষ ভাগাভাগির মিটিং বসে। এতে কয়েক বছর চাকরি করেই এসব কর্মকর্তারা দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে চলেছেন। অন্যদিকে, সরকারি বেতন ভাতা নিয়ে সাধারণ জনগণকে কখনো মাছের চাউল, কখনো নিম্নমানের আটা কখনো কৃষকের জন্য নির্ধারিত ধানের সরকারি ম‚ল্য লুটপাট করে চলেছে। সর্বশেষ মণিরামপুর গুদামের এ ঘটনাকেও আড়াল করতে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা সর্বমহলকে ম্যানেজ ফর্মুলায় তুষ্ট করে তড়িঘড়ি দায়িত্ব হস্তান্তরের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এমনকি তিনি খুলনা বিভাগ থেকে চলে যেতে অধিদপ্তরে আবেদন করে এবং নানা মহলে দেনদরবার করে ইতোমধ্যে ঢাকা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলির আদেশ পেয়েছেন। এদিকে, মণিরামপুর গুদামে দায়িত্ব পাওয়া ওসিএলএসডিকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে এবং তদন্ত কমিটিকে প্রভাবিত করার জন্যেও মরিয়া হয়ে উঠেছেন মেহেদী হাসান শাকিল।এ প্রসঙ্গে মণিরামপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘আমন চাল সংগ্রহে কিছুটা লাল প্রকৃতির চাল ক্রয়ের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ, তদন্ত রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।’মাছের খাওয়ার চাল গুদামে কীভাবে ঢুকল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- বাস্তবতা হচ্ছে আমন চাল সংগ্রহে সরকারি ম‚ল্য ৪৭ টাকা, অথচ বাজারে মোটা চালের দাম চলছে ৫০-৫২ টাকা। ফলে মিলাররা কিছুটা লোকসান কমাতে কিছুটা মান খারাপ চাল সরবরাহ করছেন। তবে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় এমন নিম্নমানের চাল গুদামে ঢুকাতে সরকারি নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা সদুত্তর দিতে পারেননি।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION