নিজস্ব প্রতিবেদক, মনিরামপুর
মনিরামপুরে লাইসেন্স ছাড়াই প্রায় ১৫ বছর ধরে চলছে কেসি সর্জিক্যাল এন্ড শিশু হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, সেখানে নেই কোন বিশেযজ্ঞ চিকিৎসক, নেই ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী নার্স, অস্ত্রোপাচারের সময় অজ্ঞান করার চিকিৎসকও নেই, নেই কোন প্যাথলজিষ্ট। তার পরও বহাল তবিয়তে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ওই হাসপাতালের পরিচালক প্রশান্ত বিশ্বাস। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কার্যত: কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। সরেজমিন যাওয়া হয় উপজেলার ভবদহ এলাকার কুলটিয়া ইউনিয়নের সুজাতপুরে অবস্থিত কেসি সার্জিক্যাল এন্ড শিশু হাসপাতালে। দুইতলা ভবন জুড়ে ১৫ বছর যাবত এ হাসপাতালে রয়েছে ক্লিনিক্যাল এবং ডায়গনষ্টিক বিভাগ। রোগিদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষনিয়। হাসপাতালের নিচ তলায় বর্হির্বিভাগে অন্তত: ২৫ জন রোগী অপেক্ষায় রয়েছে চিকিৎসকের কক্ষে (চেম্বার) প্রবেশের জন্য। দোতলায় সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি ক্যাবিনে রয়েছেন সিজারিয়ানসহ ভর্তি রোগি। এর মধ্যে বাজে কুলটিয়া গ্রামের প্রসুতি টুম্পা বিশ্বাসকে চিকিৎসা দেওয়া চলছিল। অন্য কেবিনে রয়েছেন মাছনা গ্রামের ইদ্রিস আলী। তার হাটুর টিউমার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ক্যাবিনে রয়েছে রোগিরা। তবে অভিযোগ রয়েছে জমজমাট ব্যবসা হলেও হাসপাতালের নেই কোন বৈধ লাইলেন্স। ক্লিনিক এবং ডায়গনিষ্টিক বিভাগ পরিচালনা করতে যে শর্তাবলির প্রয়োজন তার কোনটাই বিদ্যমান নেই এ হাসপাাতলে। সর্ব নিম্ন তিনজন মেডিকেল অফিসার ও তিনজন ডিপ্লোমাধারী নার্স থাকার বিধান থাকলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ডায়গনষ্টিক বিভাগের জন্য প্রয়োজন নুন্যতম একজন মেডিকেল অফিসার, একজন প্যাথোলজিষ্ট, একজন টেশনিশিয়ান, একজন ডিপ্লোমাধারী নার্স। কিন্তু কোন মেডিকেল অফিসার,নার্স, প্যাথোলজিষ্ট, টেকনিশিয়ানকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের পরিচালক প্রশান্ত বিশ্বাস নিজেকে মেডিকেল অফিসার পরিচয় দিয়ে জানান, ঢাকা থেকে ক্যান্সার ও টিউমার বিশেষজ্ঞ তার ভাইপো ডা.মিঠুন মল্লিক মাঝেমধ্যে এ হাসপাতালে এসে রোগিদের অস্ত্রোপচার করেন।পরবর্তি চিকিৎসা দেন তিনি নিজেই। লাইসেন্স না থাকা সম্পর্কে প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, লাইসেন্সের জন্য অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। হাসপাতালের পরিচালক আরো জানান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে তিনি নিজেই দায়িত্ব পালন করেন। হাসপাতালের স্টাফ পরিচয়দানকারি কিশোর বিশ্বাস জানান, দুইজন ডিপ্লোমাধারী নার্স পিয়াঙ্কা বিশ^াস ও লবন্য মন্ডল সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করলেও তারা এখন ছুটিতে রয়েছে। তিনি জানান, খুলনা থেকে মাঝেমধ্যে প্যাথলজিষ্ট এবং টেকনিশিয়ান এনে ডায়গনষ্টিকের কাজ করা হয়। নিজেকে ক্যান্সার ও টিউমার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ডা.মিঠুন মল্লিক মোবাইল ফোনে বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার এ হাসপাতালে বাহির থেকে অজ্ঞান করার ডাক্তার সাথে নিয়ে রোগিদের অস্ত্রোপচার করে থাকি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা.তন্ময় বিশ্বাস জানান, কোন লাইসেন্স না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দরুন ইতিমধ্যে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে কেসি সার্জিকেল এন্ড শিশু হাসপাতালসহ কয়েকটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ বিভিন্ন দন্ড দেওয়া হয়। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, কেসি সার্জিকেল এন্ড শিশু হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খুব শিঘ্রই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।