যশোর প্রতিনিধি
অবশেষে নিজের চেয়ারে বসলেন যশোর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার তিনি কলেজে যান। এসময় তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে মুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গত ৫ অক্টোবর যশোর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বলে একদল দুর্বত্ত। রাজি না হওয়ায় কলেজের শিক্ষকদের কক্ষের দরজা বন্ধ করে তাঁকে চড়থাপ্পড় ও কিল–ঘুষি মারতে থাকে। পরে জোর করে অধ্যক্ষের কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। চলে যাওয়ার সময় তারা কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে কম্পিউটার নিয়ে চলে যায়। ঘটনার পর আহত অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুবৃত্তরা শহরের আরএন রোডের বাসিন্দা। তারা দীর্ঘদিন ধরে কলেজটি দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তের পর পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আবুল হাশেম এর সহযোগিতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওই সব শিক্ষকের সহযোগিতায় আর এন রোডের এক দুর্বৃত্ত দলবল নিয়ে এসে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর থেকে অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমানকে আর কলেজে প্রবেশ করতে দেয়নি ওই সব দুর্বৃত্তরা।
৫ অক্টোবর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, ‘শহরের আরএন সড়কের সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে কলেজটি দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সময় পদত্যাগ করার জন্য আমাকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। রাজি না হওয়ায় আজ (৫ অক্টোবর) কলেজের মিলনায়তনে প্রকাশ্যে আমাকে মারধর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। শুধু মারধর নয়, তাঁরা কলেজের অফিসকক্ষে তান্ডব চালায়। তাঁরা অফিসের কম্পিউটার লুট করে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় দায়ের করার মামলায় অনেক আসামি এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ ওই সব আসামিদের চিনলেও তাউকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ।যশোর হোমিওপ্যাথিক কলেজের মার্কেট ও আরএন রোড এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, আওয়ামী লীগের দোসরা প্রশাসন ও পুলিশে বহাল থাকায় তারা এখনো অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। হোমিও কলেজটি প্রকাশ্যে দিনের আলোতে যেভাবে দখল করতে চেয়েছিল তা সিনেমাকে হার মানায়। তারা বলছেন, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ মুনির হোসেন টগর চৌরাস্তায় থানা মোড়ে বসে সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। সৈয়দ মুনির হোসেন টগরের নির্দেশে আব্দুল্লাহ আল মামুন হ্যানিম্যান হোমিও ফার্মেসীতে বসে আওয়ামী লীগের এসব দোসরা কলেজটি দখল নিতে বিভিন্ন রকম ফন্দি ফিকির চালিয়ে যাচ্ছে। সহকারী অধ্যাপক আবুল হাশেমও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি পদোন্নতি নিয়েছেন অবৈধভাবে। সিনিয়রকে টপকিয়ে তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে পদোন্নতি নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পক্তৃত। ফ্যাস্টিট হাসিনার পিএস নজরুল ইসলাম খানের হাত ধরে হোমিও কলেজে চাকরিতে ঢোকেন। আবুল হাশেম দীর্ঘ ১৫ বছর কখনো এনআই খান আবার কখনো সাবেক এমপি ও মন্ত্রী স্বপন ভট্টাচায়ের লোক পরিচয় দিয়ে কলেজ থেকে নানা সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কলেজের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসরা বহাল থাকার কারণে আসামিদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। কলেজের লুট হওয়া মালামালও উদ্ধার করছে না। যে কারণে আসামিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আবারও যে কোন সময় হামলা চালাতে পরে। এদিকে, ঘটনার মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের নিস্কৃয়তার কারণে আসামিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে তারা আবারও কলেজটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠতে পারে।