কণ্ঠ ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি সংস্কার চায়। তবে যে সংস্কার জনগণের কল্যাণের জন্য হবে সেই সংস্কার চায়। এ জন্য ২০২৩ সালে একটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ও পলায়নের পর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত রাজনৈতিক দল সমূহের সাথে কথা বলে সংস্কারের ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। আমাদের এই ৩১ দফা বিবেচনায় নেওয়া হলে প্রকৃত জনকল্যাণে সংস্কারের হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বার) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল স্মরণ তারেক রহমান এ প্রসঙ্গে আর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিষন নামের সংস্কারের কথা বলেছেন। আমরা ২০২৩ সালে দলের পক্ষ থেকে এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল দল একত্রিত ভাবে সংস্কারের পক্ষে ৩১ দফা দিয়েছি। আজকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে সেটিকি সংবিধানের মধ্যে কতগুলো লাইনের পরিবর্তন। কোথায় কি পরিবর্তন করতে হবে এটাই কি মূখ্য বিষয়। সংবিধানে অবশ্যই কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। দেশ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন যে বিষয় আছে, সময়ের এবং দিন দুনিয়ার পরিবর্তিত অবস্থার সাথে অবশ্যই কিছু সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি যে পরিবর্তনের ফলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে সেই কাজ গুলো করলে আমি মনে করি প্রকৃত সংস্কার হবে । শুধু বইয়ের কতগুলো লাইন পরিবর্তন করাকে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি সংস্কার মনে করি না। আমরা মনে করি, যে সংস্কার করলে বেকারদের কর্মসংস্থান, নারীর স্বাধীনতা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুশিক্ষা নিশ্চিত হবে, মানুষের সার্বিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা,মানবাধিকার নিশ্চিত হবে সেটাই প্রকৃত সংস্কার। তিনি সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যে কয়েকজন রাজনীতিবিদের সততা কর্মযজ্ঞতা , জনকল্যাণে ব্যাপক অবদান ও ব্যাক্তিত্বের জন্য প্রশ্নহীন ভাবে গর্ববোধ করতে পারেন তাদের মধ্যে তরিকুল ইসলাম অন্যতম। বিএনপি যে কারণে তাকে অন্যমাত্রায় স্মরণ করে। বিশেষ করে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের আন্দোলনের সময় প্রতিটি রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সামনে সুন্দরভাবে তরিকুল ইসলামের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ফুটে ওঠে। দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে শান্তিময় যশোর জেলার সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন তরিকুল ইসলাম। তার শুন্যতা দেশের প্রতিটি মানুষের মত আমিও গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে অনুভব করছি। তিনি বলেন, মরহুম তরিকুল ইসলামের সাথে আমার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক খুব সীমিত ছিল। কিন্তু একটি বিষয়ে আমি তাকে স্মরণীয় মনে করি সেটি হচ্ছে ১/১১ শাসনামলে তিনি এবং আমি মিথ্যা ষড়যন্ত্র মুলক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলাম। আমি তখন প্রথম গ্রেফতার ও পরিস্থিতির কারণে বেশ বিচলিত ছিলাম। পিজি হাসপাতালে আমার সাথে তাঁর এক মিনিটের মত দেখা হয়। আমাদের মধ্যে যাতে কথা না হয় তার জন্য পুলিশ প্রশাসন ব্যপক তৎপর ছিল। এর মাঝেই তিনি আমাকে বলেছিলেন, তারেক ভয় পেও না, সাহস রাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে। তাঁর এই একটি কথা আমাদের সাহসী করে তুলেছিল। তিনি কত বড় মাপের নেতা ছিলেন তার আরও প্রমাণ আমি আমার পরিবার এবং সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি ছিলেন, সত্যিকার অর্থে দেশ প্রেমিক ও আদর্শে অবিচল এক নেতা। তাকে এরশাদের স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিস্ট শাসনামলে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে দল পরিবর্তনের রাজি করাতে পারেনি। এ কারণে দল তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা রাখে। তিনি বলেন, তরিকুল ইসলামকে এ কথায় আমরা একজন যোদ্ধা হিসেবে চিনি। উনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদনি মানুষের পক্ষে লড়াই করেছেন। মানুষের কথা বলা থেকে শুরু করে, রাজনীতি, মর্যাদা, দেশের স্বাধীনতা সর্বোপরী দেশ ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে তিনি আমৃত্যু লড়াই করেছেন। পৃথিবীতে মানুষের অবস্থা ক্ষণস্থায়ী কিন্তু সবকিছু মিলে একজন মানুষ অমর হতে পারেন তার র্কীতি এবং কর্মে। তরিকুল ইসলাম এই অবিস্মরণীয় সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ভক্ত অনুসারী এবং গুণগ্রাহীদের কাছে। একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে তৃণমুলের যে আত্মিক সম্পর্ক সেটা তিনি কখনো বিচ্যুতি হতে দেননি। তরিকুল ইসলাম কখনো প্রাচুর্য্য এবং সম্পদের পেছনে দৌঁড়াননি। বাংলাদেশের যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ সৎ হিসেবে পরিচিত তরিকুল ইসলাম তাদের মধ্যে একজন। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরিকুল ইসলামের জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তারেক রহমান বলেন, ২০১৪ সালের আন্দোলনে তরিকুল ইসলাম কিভাবে অবদান রেখেছিলেন। দলের পাশাপাশি গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষকে কি ভাবে সুসংগঠিত করে আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের অধিকারকে ছিনিয়ে আনতে হয় সেটি তিনি দেখিয়েছিলেন। আজ আমরা সেই মানুষটির স্মরণসভায় উপস্থিত হয়েছি। এখানে বিএনপির পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও উপস্থিত আছেন। তিনি আরও বলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈচারের পতনের পরও দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কারণ পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেতাত্মরা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে রয়ে গেছে। সেখান থেকে তারা ষড়যন্ত্রের বীজ বপনের চেষ্টা করছে। । তিনি ১৯৬২ সালে এম এম কলেজের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে আটক হয়েছিলেন ১৯৬৮ এবং ১৯৬৯ তিনি আরও দুইবার আটক হন আইয়ূব বিরোধী গণঅভুত্থানে নেতৃত্ব দেবার কারণে। দেশের এই ক্রান্তিকালে তরিকুল ইসলামের মত একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের অভাব বোধ করছি। আজকে এই দিনে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, মহান রাব্বুল আল আমিন তাকে বেহেস্ত নসীব করুন।জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশাররফ হোসেনের কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তরিকুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। জেলা ইমাম পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান মুনাজাত পরিচালনা করেন। স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু।স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেল হক সাবু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, চিকিৎসক সমাজের পক্ষে অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি এ জেড এম সালেক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তন্ময় সাহা, জেলা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।