নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের যৌনপল্লীতে দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হচ্ছে যৌনপল্লীর বাসিন্দারা।২টি যৌনপল্লির ৫টি বাড়ির যৌনকর্মীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে ৬ দালাল ও দায়িত্বরত কিছু পুলিশ সদস্যদের হাতে। যৌনপল্লীতে দালালদের চাঁদাবাজির খাই মেটাতে সারা দিনের রোজগারের টাকার সিংহভাগই তুলে দিতে হচ্ছে তাদের হাতে। এর ফলে এক প্রকার অভুক্ত থেকেই দিন কাটাতে হচ্ছে অনেককেই। দীর্ঘদিন ধরে চলে আশা পুলিশ ও দালালের এই অত্যাচারের প্রতিবাদে রাস্তায় নামার চিন্তা করছে ভুক্তভোগি যৌনকর্মীরা।যশোর কোতোয়ালি থানার পাশে হাটখোলা রোড এর সামান্য দুরে বাবু বাজার ও মাড়োয়াড়ি মন্দির সংলগ্ন পতিতা পল্লীর ৫টি বাড়ি। পতিতা পল্লিতে প্রায় ১শ ছোট ছোট ঘরে গাদাগাদি করে থাকে ২ শতাধিক যৌন কর্মী। এই পতিতা পল্লি গুলির দেখভাল করেন সদর ফাঁড়ি পুলিশ। পতিতাদের চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পুলিশের ওপর থাকলেও তারা করেন উল্টোটা।তাদের সহযোগিতা করে দালাল নামধারী কিছু মাদক ব্যবসায়ি। তাদের মধ্যে মাড়োয়াড়ি মন্দির রোডে হাফিজুর, আমিনুর, জালাল এবং বাবুবাজার এলাকায় বিষ্ণু, আশা পুলিশের পক্ষে দালালি করে। তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে পতিতারা। তাদের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও পতিতাদের দায়িত্বে থাকা যশোর সদর পুলিশ ফাঁড়ির বকশি ও এএসআই জসিম উল্টো ফাঁসিয়ে দেয় পতিতাদের। এরপরই নানা কায়দায় পতিতাদের অত্যাচার করে ওই ৬ দালাল। তাদের ঘরে খদ্দের ঢুকতে না দেওয়াসহ,খদ্দেরদের ধরে ইয়াবা গাঁজাসহ চালান দেওয়ার অভিযোগও আছে। এছাড়াও খদ্দেরদের কাছ থেকে ছিনতাই করে এমনও অভিযোগ রয়েছে দালালদের বিরুদ্ধে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে পতিতা পল্লীর বাসিন্দাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, তাদের ওপর সদর ফাঁড়ি পুলিশের হয়রানির কথা। তারা জানান,প্রতিমাসে ঘর প্রতি ফাঁড়িতে দিতে হয় ২ হাজার টাকা। দেশের অন্যকোন যৌনকর্মী যশোরের এপল্লির কোন ঘরে উঠলে ফাঁড়িতে নাম লেখাতে বাধ্যতা মূলক। এর জন্য ফাঁড়িতে দিতে হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কেউ যদি একই পল্লীর ভেতর ঘর বদল করে তার পরিবর্তনকারিকে দিতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বাড়ি পরিবর্তন করলে দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই যৌনপল্লি গুলোতে রয়েছে ফাঁড়ি পুলিশের বেশ কয়েকজন আদায়কারি। এদের কাজ যৌনপল্লিতে খরিদ্দার ঢোকামাত্র ফাঁড়ির জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা করে আদায় করা। এই খাত থেকে পুলিশের আয় মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা। এছাড়াও যৌন পল্লির ঘর মালিকদের প্রায় সবারই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসা ও নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। ওই সব বাসা বাড়িতে থাকে তাদের সন্তানসহ স্বজনরা। ফলে দেখভাল করার জন্য দিনে একবার করে সেখানে যেতে হয়। এই কারনে বাইরে বাসা বা বাড়ি থাকা প্রত্যেক ঘরআলীকে প্রতিমাসে ফাঁড়িকে দিতে হয় ৩ হাজার টাকা।এছাড়াও কোন যৌনকর্মী ফাড়ি পুলিশকে না জানিয়ে পল্লির বাইরে গেলেই আদায় করা হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাদের অভিযোগ, গায়ের জোরে দালাল বনে যাওয়া হাফিজুর, আমিনুর, জালাল, বিষ্ণু, আশাসহ আরো অনেকে নানা কায়দায় কারনে অকারণে জোর করে তাদের উপার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা মুখ বুজে সহ্য করছেন এই চাঁদাবাজি। প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। তাদের প্রতিবাদ ফাঁড়ি পুলিশ কর্ণপাতও করছেন না। উপরোন্ত নানা ভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে তারা।যৌনকর্মীরা জানায়,একতো আগেরমত আর তাদের আয় রোজগার নেই। তারপরও কোন রকম যা আয় হচ্ছে তা দালাল ও ফাঁড়ির পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।