কণ্ঠ ডেস্ক
ইরানের তিনটি প্রদেশে-ইলাম, খোজেস্তান ও তেহরানের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই হামলায় ‘সীমিত ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। শনিবারের (২৬ অক্টোবর) এই হামলায় বিভিন্ন সংগঠন ও দেশ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো উঠে এসেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল ঘোষণা করেছে যে তারা গত ১ অক্টোবর ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলার প্রতিক্রিয়ায় তাদের প্রতিশোধ নিয়েছে। তাদের এই প্রতিক্রিয়া আত্মরক্ষার একটি অনুশীলন ছিল এবং এটি জনবহুল এলাকাগুলো এড়িয়ে শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেনি বলে দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আমাদের লক্ষ মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা এবং উত্তেজনা হ্রাস করা। আমরা ইরানকে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ বন্ধ করতে আহ্বান জানাই যাতে এই লড়াইয়ের চক্র শেষ হয়ে যায় এবং আর কোনও বাড়াবাড়ি না ঘটে। বাইডেন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ইরান যদি প্রতিক্রিয়া জানাতে চায় তবে আমরা ইসরায়েলকে পুরোপুরি রক্ষা করতে এবং সমর্থন দিতে প্রস্তুত। ইরান এমন সিদ্ধান্ত নিলে তার পরিণতি ভোগ করবে বলেও উল্লেখ করেছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সরাসরি সংঘাতটি এখানেই শেষ হওয়া উচিত।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, আমি পরিষ্কার করে বলছি, ইরানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি, আমরা আরও আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়াতে চাই এবং সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। ইরানকে এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ফ্রান্স
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ফ্রান্স সকল পক্ষকে যে কোনও বাড়াবাড়ি এবং এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানায় যা এই অঞ্চলের চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করতে পারে।
সৌদি আরব
সৌদি আরবের সরকারি সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সৌদি আরব ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।হামলাকে ইরানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইন ও প্রথার লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই অঞ্চলে অব্যাহত উত্তেজনা এবং সংঘাতের প্রসার, যা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে তা অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে সব সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা হ্রাস করার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
মিসর
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, মিসর মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকা উত্তেজনা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। এই অঞ্চলটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করা সকল কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে। মিশর তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে যে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি দ্রুত কার্যকর হওয়া উচিত; যার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির পথ তৈরি হবে। কারণ এটিই উত্তেজনা কমানোর একমাত্র উপায়।
পাকিস্তান
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে এবং ইতোমধ্যেই অস্থিতিশীল অঞ্চলে একটি বিপজ্জনক উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বিবৃতিতে, ইসরায়েল বর্তমান উত্তেজনা ও সংঘাত বিস্তারের সম্পূর্ণ দায়ভার বহন করে বলে জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের বেপরোয়া আচরণ ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার তীব্র নিন্দা জানায় ইউএই। এই উত্তেজনার অব্যাহত বৃদ্ধি এবং এর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে দেশটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংঘাতের বিস্তার এড়াতে সর্বোচ্চ মাত্রায় সংযম এবং প্রজ্ঞা প্রদর্শনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
ইরাক
ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল তার আগ্রাসী নীতি অব্যাহত রেখেছে এবং এই অঞ্চলে সংঘাতের বিস্তার ঘটিয়েছে,যা নির্লজ্জ আগ্রাসনের কাজ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।ইরাক পুনরায় তার দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে গাজা ও লেবাননে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে।
হামাস
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে জানিয়েছে, ইরানের সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন প্রদেশে হামলার জন্য ইহুদিবাদী আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায় তারা। আমরা এটিকে ইরানের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এমন একটি উত্তেজনার বিস্তার হিসেবে বিবেচনা করি যা অঞ্চলটির নিরাপত্তা এবং এর জনগণের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। এই আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ দায়ী করা হচ্ছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে পরিচালিত হয়েছে বলেও দাবি করেছে হামাস।