যানজট নিরসন ও ফুটপাত রক্ষায় নিরব উপজেলা প্রশাসন
মনিরামপুর(পৌর)প্রতিনিধি
যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের মনিরামপুর পৌরশহরের যানজট যেনো মাঝে মধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরকেউ হার মানাই।মনিরামপুর বাজারের গরুহাট মোড় থেকে উপজেলা গেট পর্যন্ত মহাসড়কের একেবারে গা ঘেঁষেই সমস্ত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় ব্যাক্তি মালিকানাধীন ভবন।এরপরও যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং,মেইন রোডের উপরই ইজিবাইক,ভ্যান,ইটালী গাড়ী,ভাড়াই চালিত মটরসাইকেল সহ বিভিন্ন ছোট বড় যানবাহনের স্টান্ডে সয়লাভ। যানজটের আরেকটি বড় কারন, মনিরামপুর গরুহাট মোড় থেকে দক্ষিনমাথা বাসস্টান্ড পর্যন্ত যশোর টু সাতক্ষীরা বাস সার্ভিসের নির্ধারিত ২টা স্টোপেজ থাকলেও ড্রাইভাররা ৫ থেকে ৬টা স্টোপেজ যাত্রী ওঠানামা সহ ইচ্ছা অনুযায়ী গাড়ী দাড় করিয়ে সৃষ্টি করে অসহনীয় তীব্র যানজট।যানজটের সাথে সাথে ফুটপাত দখল,রাস্তার উপরই ভাসমান ছোট ছোট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও লক্ষ্য করা যায়।ভুক্তভোগী ও ব্যাবসয়ীদের অভিযোগ,বিগত কয়েকমাস যাবত এসব নিয়ে একেবারে নিরব ভূমিকা পালন করছে মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসন।
তারা বলছেন,বিগত সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি বিভিন্ন সময়ে যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে ক্যাম্পেইন, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এখন তেমন কোন ভূমিকা দেখা যায়না মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসনের।উপজেলা প্রশাসনের এই নিরাবতাকে নেতীবাচক হিসাবে দেখছেন সুশীল সমাজ ও ব্যাবসায়ী মহল। বিগত দিনে যানজট নিরসনে একাধিক বার উপজেলা প্রশাসনের মাইকিং ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা বাস মালিক সমিতির সাথে কথা বললেও কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি।সর্বশেষ গত ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর থেকে বেশ কয়েকদিন মনিরামপুর বাজারে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেনের হস্তক্ষেপে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা যানজট নিরসনে কাজ করেছিলো।তবে সেটা বেশিদিন স্থায়িত্ব করেনি বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।ফলে আবারও দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে মনিরামপুর বাজারের সেই তীব্র যানজট। সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ ছাড়াও মাছ বাজার,কাঁচা বাজার,গরুহাট সহ নানানরকম কাজের সুবাদে মনিরামপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কেশবপুর,ঝিকরগাছা,অভয়নগর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মনিরামপুর বাজারে আসেন বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ।যানজটের কারনে নির্দিষ্ট সময়ে কাচামাল সহ বিভিন্ন মালামাল পৌছাতে ও নিজেদের কাজ নিয়ে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌছাতে নাজেহাল বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ। লেগে থাকা যানজটে নির্বিগ্নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছাতে পারেনা শিক্ষার্থীরা।জরুরী রোগীবহনকারী এ্যাম্বুলেন্সও অসহায় এই যানজটের কাছে। কেশবপুর থেকে যশোরে যাওয়ার পথে যানজটে আটকে থাকা এক বাস যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,ভাই প্রতিদিনই এই মনিরামপুর বাজারে আসলে জ্যাম লাগে।তারজন্য প্রায়ই আমাকে বসের কাছে ঝাড়ি খেতে হয়,তাছাড়াও নিজেকেউ অতিষ্ঠ লাগে।মনিরামপুর ছাড়া আর কোন থানা শহরে এমন যানজট হতে আমি দেখিনি। গতকাল রবিবার মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে রোগী নিয়ে যশোর সদর হাসপাতালে যাওয়ার পথে মনিরামপুর রাজগঞ্জ মোড়ে জরুরী রোগী সহ আটকে পড়ে একটি এ্যাম্বুলেন্স। এসময় এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার শাকিল বলেন,ভাই সিজাটিয়ান রোগী নিয়ে ২০/২৫মিঃ হলো হাসপাতাল থেকে বের হয়েছি,যেখানে মনিরামপুর থেকে যশোর যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট।অবশেষে পথচারীদের সহযোগিতায় বেশ খানেক পরে জ্যাম কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।যদি যানজটে পড়ে রোগীর কোন ক্ষতি হয়ে যায় এ দায়ভার কে নিবে!সরেজমিনে দেখা যায়,মনিরামপুর বাজারের প্রধান সড়ক ছাড়াও দোলখোলা রোড,থানা রোড,কুলটিয়া রোড,রাজগঞ্জ রোড,পাইকারি কাঁচা বাজার রোড সহ সমস্ত বাইপাস সড়কেউ এই যানজটের চিত্র এখন মনিরামপুরের নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার। অপরদিকে মেইন সড়কের কলাহাটা,খুচরা কাঁচা বাজার, মুদিপট্টি,গার্মেন্টসপট্টি সহ প্রতিটি মার্কেটের দোকানীরা তাদের নির্দিষ্ট জায়গা বাদেও ১/২ হাত জায়গা দখলে নিয়ে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে।একদিকে ফুটপাত দখল করছে,অপরদিকে তার কারনে অলিগলিতেও যানজটে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এছাড়াও প্রধান সড়কের পৌরসভার সামনে রাস্তার দু’পাশ দিয়ে হার্ডওয়্যার,কসমেটিকস,লেদার ও ব্যাগের দোকান,খাবার হোটেল,প্লাস্টিক পন্যের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যাবসায়ীরা পথচারীর হাটার ফুটপাতকে দোকানের আঙ্গিনা হিসাবে নানান পন্য সামগ্রিই ঝুলিয়ে দোকানের প্রসার বাড়িয়েছে। দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে প্লাস্টিক মালামাল সাজানো ব্যাবসায়ী মিহির ঘোষের কাছে দখলের কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন,সবাই দখল করে বসে আছে।আমাকে সরাতে বললে আমি সরিয়ে নিচ্ছি। তবে সবার জন্য আইন সমান হলে আমার সাথে সবাইকে ফুটপাত ছেড়ে দিতে হবে।আমিও চাই পথচারীর জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত থাকুক। তবে মনিরামপুর বাজার বনিক সমিতির ব্যাবসায়ীরা বলছে ভিন্ন কথা,তাদের অভিযোগ এত বড় একটা বাজারে যানজট কমাতে নেই কোন ট্রাফিক পুলিশ,উপজেলাব্যাপি যে সমস্ত আনাসর সদস্য আছে তাদের দিয়ে তো যানজট নিরসন করা বা কমানো যায়।উপজেলা প্রশাসন বিগতদিনে মাঝে মধ্য যানযট নিরসনে রাজগঞ্জ মোড়ে একজন গ্রাম পুলিশ বা থানাকে দায়িত্ব দিতো।আবার ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্ট,উচ্ছেদ অভিযান সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।কিন্তু নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসার পর এখন পর্যন্ত কোন ধরনের পদক্ষেপ বা এ ধরনের কোন উদ্যেগ নেয়নি মনিরামপুর উপজেলা প্রশাসন। তবে কি যাত্রী ভোগান্তির এই যানজট মনিরামপুর বাজারে থেকেই যাবে,ভোগান্তিতেই কি চলবে জীবনযাত্রা,মুমূর্ষু রোগী নিয়ে জরুরী কোন এক এ্যাম্বুলেন্স কি যানজটে আটকা পড়ে গন্তব্য পরিবর্তন করে মন্তব্যের সম্মূখীন হবে?ফুটপাতে পথচারী কি নির্বিগ্নে চলাফেরা করতে পারবে না,ফুটপাত দখলকারীরা কি এভাবেই ভোগ করে যাবে তাদের ইচ্ছামতো,বাজারের অলিগলিতে দোকানীরা জায়গা দখল করে বিশৃঙ্খলার পরিধি বাড়িয়ে যাবে? এমন পাহাড় সমান অভিযোগ মনিরামপুর বাজারের বনিক সমিতির ব্যাবসায়ী মহলসহ স্থানীয়দের মুখে মুখে।তবে এই তীব্র যানজটের স্থায়ী সমাধানকল্পে মনিরামপুর বাজারের প্রধান সড়ক প্রসস্থ্যকরনের বিকল্প কিছুই দেখছেন না রাজনৈতিক,ব্যাবসায়িক,সুশীলসমাজ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।পাশাপাশি পথচারীর সুবিদার্থে মনিরামপুর বাজারের ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এ সমস্ত ব্যাক্তিবর্গ।ব্যাপারে মনিরামপুর উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্নার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি যশোর মিটিং এ আছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সন্তোষ সর্মা।তারপরও মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করলে ব্যাস্ততার কারনে তিনি ফোনকলের সাড়া দেননি।