কণ্ঠ ডেস্ক
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছোড়া একটি ড্রোন ইসরায়েলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোনের এই আঘাত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। যদিও ড্রোন হামলার সময় ওই বাসভবনে নেতানিয়াহু কিংবা তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। শনিবার ভোরের দিকে এই হামলা হয়েছে বলে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিবৃতিতে বলা হয়, বিলাসবহুল সব ভিলা আর রোমান ধ্বংসাবশেষ ও অ্যাম্ফিথিয়েটারের জন্য বিখ্যাত সিজারিয়ার একটি ভবনে ড্রোন আঘাত হেনেছে। তবে ওই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
নেতানিয়াহু বাসভবনে যেভাবে আঘাত
কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিনিধি নূর ওদেহ বলেছেন, নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলার বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ড্রোন হামলার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর বাসভবন এমন একটি এলাকায় অবস্থিত, যেখানে ব্যাপক শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রায় দুর্ভেদ্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে হিজবুল্লাহর ড্রোন নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হানল, তা ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নূর ওদেহ বলেন, লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে গেছে ড্রোনটি। পুরো সময়ে ড্রোনটি শনাক্ত করতে পারেনি ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এমনকি ড্রোন হামলার সময় বাসিন্দাদের যে সাইরেন বাজিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে সেটিও করা হয়নি। একেবারে যেখানে আঘাত করার উদ্দেশে হিজবুল্লাহ ড্রোনটি ছুড়েছিল, সেখানেই আঘাত হেনেছে। এই ঘটনা ইসরায়েলে এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। নূর ওদেহ বলেন, নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা চালানোর জন্য লেবানন থেকে রকেটের বিশাল বহর ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যালিলি ও হাইফা শহরসহ উত্তর ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজানো হয়েছে।উত্তর ইসরায়েলের বৃহত্তম শহর হাইফা। কৌশলগত বন্দরনগরী হিসাবেও দেখা হয় এই শহরটিকে। যেখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস এবং দেশটির নৌবাহিনীর সদর দপ্তর রয়েছে। ওদেহ বলেন, আমরা সিজারিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সাইরেন বাজানো বন্ধ হয়ে যায়। ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাথে সরাসরি সংঘাত শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে নেতানিয়াহুর বাসভবনে এই হামলাকে। ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিজবুল্লাহ নতুন ধাপে প্রবেশ করার তথ্য জানানোর একদিন পর এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।একদিন আগে হিজবুল্লাহর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে নতুন ধাঁচের অস্ত্র মোতায়েন করেছে হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটির অপারেশন রুম থেকে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা প্রথমবারের মতো নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন ব্যবহার করেছেন। ‘‘যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবাননের কয়েকটি অংশে আক্রমণকারী ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছেন।’’ সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, এএফপি, আলজাজিরা।