স্টাফ রিপোর্টারঃ যশোরের মনিরামপুরে সরকারি ৫৫৫ বস্তা চাল পাচারের ঘটনায় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসিএলএসডি) মনিরুজ্জামান মুন্নাকে বদলি করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান বুধবার এ বদলির আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন মনিরুজ্জামানকে বদলি করে তার স্থলে পোষ্টিং দেয়া হয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলার ওসিএলএসডি মোহাম্মদ সেলিমকে।তবে চাল পাচারের ঘটনায় জড়িত পিআইওসহ মুল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। ফলে এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রীয়া।
জানাযায়, গত ৪ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ ভাইভাই রাইস মিল এন্ড চাতালে অভিযান চালায়। পরে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফীর উপস্থিতিতে সরকারি কাবিখার ৫৫৫ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। এ সময় আটক করা হয় চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং ট্রাক চালক ফরিদ হাওলাদারকে। অবশ্য এসময় সেখানে চাতাল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ উপস্থিতিদের সামনে চাল পাচারের ঘটনায় খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসিএলএসডি) এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও), চাল বেচাকেনার সিন্ডিকেটের সদস্য শহিদুল ইসলাম, অষ্টম দাস, জগদিশ দাসসহ জড়িত অনেক কুশিলবদের নাম প্রকাশ করে। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম এবং ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তি বাচ্চু একে অপরের বিরুদ্ধে সরকারি চাল পাচারের ঘটনায় জড়িত অভিযোগ তোলেন। অথচ পুলিশ বাদি হয়ে শুধুমাত্র চাতাল মালিক মামুন এবং ট্রাকচালক ফরিদের নামে মামলা করেন। পুলিশ ৫ এপ্রিল মামুন এবং ফরিদকে যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানী শেষে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আকরাম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে ৭ এপ্রিল তাদেরকে আদালতে হাজির করে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সম্পা বসুর আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক মামুন এবং ফরিদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি(তদন্ত) শিকদার মতিয়ার রহমান জানান, আদলেতে দেয়া জবান বন্দিতে তারা উল্লেখ করেন সরকারি চাল পাচারের ঘটনায় তাদের সাথে আরো জড়িত ছিলেন সিন্ডিকেট নেতা শহিদুল ইসলাম, জগদিশ দাসসহ আরো দুইজন সরকারি কর্মকর্তা। পরবর্তিতে মামলাটি নিরপেভাবে তদন্তের জন্য ২১ এপ্রিল যশোর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে সরকারি চাল আটক হবার পর পরই সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মনিরুজ্জামান মুন্না জানিয়েছিলেন এ চাল ছিল কাবিখার চারটি প্রকল্পের বরাদ্দকৃত চাল। এরপর থেকে ওই চার প্রকল্প হালাল করার জন্য শুরু হয় ব্যাপক তৎপরতা।
জানাযায়, এ চারটি প্রকল্পের মধ্যে রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ২৫ মে:টন, পার্শ্ববর্তি একটি মন্দিরের জন্য ২৫ মে:টন, বালিধা-পাঁচাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ১০ মে:টন এবং হরিদাসকাটির কেএইচএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ মে:টন চাল। নিয়ম রয়েছে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের পর পরির্দশন শেষে প্রকল্প বাস্তবায়ন(পিআইও) কর্মকর্তা বরাদ্দকৃত চালের ডিও(ডেলিভারী অর্ডার) দিবেন প্রকল্পের সভাপতির কাছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এ চারটি প্রকল্পের মধ্যে তিনটির কোন কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া সত্ত্বেও পিআইও আব্দুল্লাহ বায়েজিদ বরাদ্দকৃত চালের ডিও ছাড় করেন। অভিযোগ রয়েছে কাজ না করে প্রকল্পের সভাপতিরা পিআইও এবং খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাসহ সিন্ডিকেটের হোতারা জোগসাজসে ওই ডিওর চাল বিক্রি করেন ভাইভাই রাইস মিলের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে। পুলিশের হাতে ওই চাল আটকের পর কাবিখা প্রকল্পের ওই চরটি কাজ তড়িঘড়ি করে শুরু করা হয়। কিন্তু জানাজানি হবার পর এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে কর্তৃপ ইতিমধ্যে রাজগঞ্জের ওই দুইটি প্রকল্পের কাজ স্থগিত করে দেন। অন্যদিকে রাতে তড়িঘড়ি করে বালিধা-পাঁচাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি ভরাট করা হয়েছে নাম কাওয়াস্তে।