আসাদুর রহমান
অন্যতম প্রাচীন সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এই দলের নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থাকলেও পরবর্তীকালে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়।
এ বছর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী বিশেষভাবে মহিমান্বিত। কেননা, আজ ২৩ জুন হাতছানি দিচ্ছে ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের দিকে।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে ’৫৪ সালের নির্বাচন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে এ দেশের মানুষ। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের হীন চক্রান্তের ফলে মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই ভেঙে দেওয়া হয় মন্ত্রিসভা। শুরু হয় লাগাতার গণতান্ত্রিক আন্দোলন। ’৬২-এর গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, ’৬৬-এর বাঙালীর মুক্তি সনদ ৬ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিণত হন বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে। তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় চক্রান্ত। দায়ের করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাঁকে গ্রেপ্তার করে সম্পন্ন করা হয় ফাঁসিতে ঝুলানোর যাবতীয় আয়োজন। কিন্তু বাঙালী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে। শেখ মুজিব অভিষিক্ত হন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। সেই সাথে কথিত লৌহমানব আইয়ুব খানের পতন হয়।
তারপর ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ লাভ করে ইতিহাসের নজিরবিহীন সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তবু ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি পাকিস্তানিরা। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ’৭১ সালের ৭ মার্চ। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তির সংগ্রামে। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে এই সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নব-উদ্যমে সংগঠিত হন। তারই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ১৯৯৬-এর সরকার গঠন করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ২০০৮ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে ‘রূপকল্প ২০২১’-এর আলোকে মধ্যম আয়ের সুখী-সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখান এবং ২০২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর আলোকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ বিশ্বাস করে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আর এবার এসেছে ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দিবসটি ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়ে।
গত রোববার ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ বেনাপোলে উদ্যানে বিশাল র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এ সমাবেশের প্রস্তুতি তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে সবাই প্রস্তুত। আজ সকাল থেকেই বেনাপোল পৌর ও উপজেলা শার্শা উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিকারে ৩টা ৩০মিনিটে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা অর্পণ , জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে, কেক কাটা, কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সমমনা সকল সংগঠন।
শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকা থেকে আগত উপস্থিত আ.লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী উল্লেখযোগ্য
রোববার ২৩ জুন বেনাপোল তিন নম্বর গোডাউনের সামনে (যশোর কলকাতা মেন রাস্তা) বিকাল সাড়ে চারটায় সময় বেনাপোল বাজার থেকে বিশাল এক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটির নেতৃত্ব দেবেন ৮৫,যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। র্যালি শেষে বিকাল ৫ টার সময় এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শার্শা উপজেলা আ.লীগ সভাপতি-বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল হক মঞ্জু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশাল ঐ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-৮৫,যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন।
বক্তব্য দেন-শার্শা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক-মোঃ ইব্রাহীম খলিল, বেনাপোল পৌর মেয়র,মোঃ নাসির উদ্দিন,, নব-নির্বাচিত শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-মোঃ সোহরাব হোসেন,ভাইস চেয়ারম্যান-আব্দুর রহিম সরদার,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান-শামীমা আলম সালমা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান প্রমুখ।#