শাহাদাত হোসেন:কিছুদিন আগে মাদক মামলায় দণ্ডিত আসামিকে বিশেষ শর্তে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে প্রবেশনে পাঠানোর আদেশের পর এবার সাতক্ষীরায় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে চলাচলের রাস্তা নিয়ে মারামারির ঘটনায় একই পরিবারের স্বামী স্ত্রীসহ চার জনকে এক মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে আসামিদের সংশোধনের সুযোগ দিয়ে প্রবেশন আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার মঙ্গলবার এই রায় দেন। তবে আসামীদের কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন আইনে আদালত তাদেরকে বাড়ি থেকে সাজা ভোগের এবং সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন কয়েকটি শর্তে।
এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে মাদক বিরোধী প্রচার,আসামীরা বাদিকে ১০টি বনজ ও ১০ টি ফলজ মোট ২০টি গাছ প্রদান করবেন, বাল্যবিবাহ রোধে প্রচারণা, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং কারও সাথে কোন ঝগড়া না করা। তিন মাস পর এ শর্ত যথাযথভাবে পালিত হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রবেশন অফিসারকে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত আরও জানিয়েছেন এই শর্তে কোন বিঘ্ন ঘটালে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হবে।
গাছ প্রদান করা হয়েছে কিনা তা আশাশুনি উপজেলার ৩ নং কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিশ্চিত করবেন। সাজাপ্রাপ্ত হয়েও বাড়িতে থাকা আসামীরা হলেন আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙা গ্রামের গৌতম গাইন, মমতা গাইন, লতিকা মন্ডল ও উর্মিলা গাইন।
মামলার বাদী প্রতিবেশী নমিতা মন্ডল উল্লেখ করেন যে দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াতের পথ নিয়ে বিরোধ চলছিল। এরই এক পর্যায়ে তার মেয়ে বন্যাকে গৌতম ও তার পরিবারের লোকজন মারধর করে। এ ঘটনায় তিনি আশাশুনি থানায় মামলা করেন ২০১৬ সালে। তদন্ত শেষে আশাশুনি থানা পুলিশ এ মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়। সরকার পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন অ্যাড. শংকর কুমার মজুমদার। আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাড. আ ক ম রেজায়ান উল্লাহ (সবুজ)।
উল্লেখ্য, কোন অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারাবদ্ধ না রেখে বা কোন প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে প্রবেশন বোঝায় ।প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সাথে সংঘর্ষে বা সংস্পর্শে আসা শিশু-কিশোরেরা বা অন্য কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথম ও লঘু অপরাধে দায়ে কারাগারে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবার ও সামাজিক পরিবেশে রেখে কৃত অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একিভূত করণের সুযোগ দেয়া হয়।
প্রবেশন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংশোধনী কার্যক্রম। এটি অপরাধীর বিশৃঙ্খল ও বেআইনি আচরণ সংশোধনের জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত কর্ম পদ্ধতি। এখানে অপরাধীকে পুনঃঅপরাধ রোধ ও একজন আইনমান্যকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সহায়তা করা হয়।