মণিরামপুর প্রতিনিধি: মণিরামপুরে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া আশ্রিতা ভাগ্নিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে একটি ঘরের মধ্যে। থানায় মামলা করতে আসতে চাইলেও ভয়ভীতিসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। যে কোন সময়ে তাকে অপহরণ করা হতে পারে বলে এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি মোবাইলে থানা পুলিশকে জানালেও এখনো পর্যন্ত ধর্ষিতা মেয়েটিকে উদ্ধারসহ প্রশাসণ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
জানাযায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেবিদাসপুর গ্রামে মামাদের আশ্রিতা হয়ে স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ভাগ্নিকে গলায় দা ধরে এবং রাতে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মামা শফিকুল ইসলাম ৬ মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শফিকুল ভাগ্নির ঘরে ঢুকে আবারও তাকে ধর্ষণ করে। এ সময়ে ঘরের পাশ দিয়ে ওই এলাকায় এক মহিলা মেয়েটির গোংরানোর শব্দ পেয়ে টিনের ফাঁক দিয়ে ধর্ষণের বিষয়টি দেখে ফেললে জানাজানি হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোড়পাড়ের সৃষ্টি হয়, কিন্তু ধর্ষক আপন মামা হওয়ায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে মামা বাড়ীর লোকজন মেয়েটি অবরুদ্ধ করে রাখে। এ ঘটনা গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ধর্ষিতার সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও সোমবার পর্যন্ত মেয়েটি উদ্ধারসহ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
এদিকে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী জানিয়েছে, তার মায়ের সাথে বাবার ডিভোর্স হয় ১০ বছর আগে। বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। জীবিকার তাগিদে মা বাইরে থাকে। এরপর মায়ের পাঠানো টাকা দিয়ে দিয়ে মামার বাড়িতে তৈরীকৃত আলাদা ঘরে সে বসবাস করে আসছে। গত ৬ মাস থেকে সুযোগ পেলেই ছোট মামা শফিকুল ইসলাম ঘরে ঢুকে গলায় দা ধরে জোর করে তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কাউকে বললে রাতে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়াসহ তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার ভয় দেখানো হতো।
রোববার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ফের জোর করে পাশবিক নির্যাতন চালানোর সময় প্রতিবেশি এক নারী দেখে ফেলায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এদিন ভূক্তভোগি ওই ছাত্রী তার নিকটাত্বীয়সহ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার উপর চালানো পাশবিক নির্যাতনের পুরো ঘটনা খুলে বলে।
এদিকে ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে নির্যাতিতার মামা বাড়ীর লোকজন পরিবারের মানসম্মানের কথা বিবেচনা করে মেয়েটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন। মেয়েটি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে থানায় অভিযোগ করার আগ্রহ প্রকাশ করার পর থেকে তাকে একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ অন্যাত্র সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তাছাড়া সে যেন প্রশাসন বা গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে ধর্ষণের বিষয়ে কোন কিছু প্রকাশ না করার জন্য হুমকি-ধামকিসহ নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে যাচ্ছে। ধর্ষক শফিকুল ও শফিকুলের আরেক ভাই তরিকুল সাংবাদিকসহ যারা মেয়েটির পক্ষে কথা বলবে তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে। করে কোন কিছু এমনকি তাকে (মেয়েটি) অপহরণ করা হতে পারে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ফোনটি কেটে দেই। পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার কল করলেও ফোনটি আর রিসিভ করেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন মোল্যা জানান, মামা শফিকুল ইসলাম প্রায় তার ভাগ্নির উপর এমন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে বলে তিনি একাধিক ব্যক্তির মারফত জানতে পেরেছি। আমি নিজে থানায় ফোন দিয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি।
থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।