কালিগঞ্জ(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি: সসাতক্ষীরার কালিগঞ্জে সুস্থ্য মানসিক বিকাশের জন্য তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই বললেই চলে। কিশোর-কিশোরীদের জন্য ছোট-খাটো দুয়েকটি খেলার মাঠ থাকলেও সেগুলো ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে উন্নত মানসিকতায় গড়ে তুলতে বিনোদন সুবিধার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন এলাকার সচেহন মহল। তাই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বসন্তপুর রামজননী ভবন ও পরিতাক্ত চন্দ্র ভবনের কোলঘেসে গড়ে উঠুক বিনোদন ও পিকনিক স্পট কেন্দ্র। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলাকার গনমানুষের দাবীর বিষয়টি জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালকে অবহিত করলে রামজননী ভবন কেন্দ্রীক চন্দ্র ভবনের পাশে অবস্থিত সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে পার্ক স্থাপনের সম্মতি প্রদান করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির জাঁকজমকপূর্ণ পিকনিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল রামজননী ভবনের পরিত্যাক্ত জমিতে পিকনিক স্পট কর্ণার ঘোষনা দিয়েছিলেন। অবশেষে সেই প্রতিশ্রুতি আসলেই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। তেমননি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজ রূপ নিতে চলেছে। ইতিপূর্বে কেউ এই এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলাবাসীর বিনোদনের জন্য কোথাও সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। তাই বিনোদনের জন্য এলাকার মানুষদের ছুটতে হয়েছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে। যাদের এই সুযোগটি নেই তারা কালিন্দী, ইছামতি ও কাঁকশিয়ালী নদীর ত্রিমোহনায় বসে বিনোদনের সামান্য চেষ্টা করে থাকে। স্হানীয় এলাকাবাসী মনে করছেন, বসন্তপুর রামজননী ও চন্দ্র ভবন দুটিকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি নদীর পাড়কে ঘিরে পার্ক স্থাপন করলে নদীর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। স্হানীয় আব্দুল হামিদ গাজী, ইয়া মোল্লা, সন্তোষ শর্মা সহ প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এক সময় এসব নদী দিয়ে বড় বড় পালতোলা নৌকা, শ্যালোর নৌকা, ধোলাই নৌকা চলতো। সেসময় যারা নৌকার মাঝি ছিল তারা প্রায় সব প্রয়াত। পরিবহনের প্রধান মাধ্যমই ছিল নৌকা। এমনকি এই নদী বয়ে চাষীরা কৃষিপণ্য বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করতো। তাছাড়া বৃটিশ শাসনামল থেকে দেশ স্বাধীনের পর বেশ কয়েক বছর বসন্তপুর পোর্ট চালু ছিল। ততকালীন সময় ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারের সাথে ভারতের হিঞ্জলগঞ্জের জাঁকজমকপূর্ণ বানিজ্য হতো। কিন্তুু অঙ্গাত কারণে কয়েক যুগ যাবৎ বসন্তপুর নদী বন্দরটি বন্ধ রয়েছে। নৌবন্দর পুনঃ চালুর মাধ্যমে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি অধুনিক পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের সুমন ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বাহিরে ছুটতে হয়। অথচ আমাদের এলাকাতেই যে প্রাচীন ঐতিহ্য ও নদীটি রয়েছে সে নদীর পাড় সংস্কারের মাধ্যমে এখানেই বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। শিশুদের সুস্থ্য মানসিক বিকাশের জন্য অবশ্যই বিনোদন জরুরি। বসন্তপুরে বিনোদন কেন্দ্র হতে যাচ্ছে শুনে আমি আনন্দিত। পাশাপাশি নৌবন্দরটি চালুর উদ্যোগ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবী জানাই। এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাশ বাচ্চু বলেন, নদীর তীর ঘেঁষে পার্ক হলে বসন্তপুর গ্রামের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে নদীটি বাঁচবে। এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন বলেন, বসন্তপুরে চন্দ্র ভবন ও নদীর পাড় ঘেঁষে পার্ক স্থাপন এখন সময়ের দাবি। বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। বসন্তপুরে পার্ক স্হাপনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালিগঞ্জে পর্যটন বিকাশ ও মাদকের ছোবল হতে যুব সমাজকে রক্ষা করতে সুস্থ্য বিনোদনের জন্য পার্ক বা পর্যটন স্থান করার গণদাবীর বিষয়টি জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল স্যারকে অবহিত করা হয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয় বসন্তপুরে একটি পার্ক করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আগামি মাসে স্যার উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর পার্কের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। তাছাড়া বসন্তপুর পোর্ট হতে হিঙ্গলগঞ্জ নৌরুট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে বিষয়ে জনমত জরিপ ও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।