শার্শা প্রতিনিধি : বাংলা পঞ্জিকার পাতায় আবারও এসেছে শরৎ। আর শরৎ মানেই শিশির ভেজা স্নিগ্ধ সকাল। সবুজ ঘাসের ওপর ঝরা শিউলির মিষ্টি সুবাস। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কাশফুলের পাপড়ি। প্রকৃতির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে ঋতুরানী শরৎ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে দোলা দেয় দশভূজা মহামায়া ত্রিনয়নী দেবীর আবাহন। জানান দেয় শরৎ মানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবের বার্তা। যদিও এবার দেবী দূর্গা আসছেন কার্তিকে মানে হেমন্তে। করোনার মহামারীতে এবার কমবে অনুষ্ঠানের আড়ম্বর। ২২ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা আর ২৬ অক্টোবর দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের দূর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গাপূজার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তবে প্রতি বছরের মতো এই সময় প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়নি। যদিও এবছর দূর্গাপূজা উৎসব নয় ধর্মীয় রীতিতেই থাকবে সীমাবদ্ধ। মন্ডপে মন্ডপে ঢাকে বাড়ি, ধুপ-ধুনচি আর কর্পূরের গন্ধ, অঞ্জলী, সন্ধিপূজা ক’দিন পরেই। শারদীয়া দূর্গোৎসব সুশৃংখল ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে উদযাপনের লক্ষ্যে বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলায় এ বছর ২৬টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় শারদীয়া দূর্গোৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে অন্যান্য বছরের তুলনায় ঢিলেঢালা ভাবে। নরম কাদা-মাটি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে গড়ে তোলা দশভূজা দেবী দূর্গার প্রতিমা তৈরির মধ্য দিয়েই দূর্গোৎসবের সব ধরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ায় মন্ডপে সাজসজ্জা ও প্রতিমা তৈরির কাজে সময় পার করছেন আয়োজক কমিটির সদস্যবৃন্দ। প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরীতে ভাস্করেরা কাজ করে চলেছেন। অনেক মন্ডপে ইতিমধ্যে প্রতিমায় মাটির কাজ শেষে শুরু হয়েছে রূপায়নের জন্য রঙ তুলির আঁচড়। নানান রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবিকে। কেউ কেউ বাঙালী সাজে মা দূর্গাকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন ভক্তবৃন্দের জন্য। বৈশ্বিক মহামারী করোনা দূর্যোগকালীন সময়ে সরকারী আইন মেনে শার্শা থানায় ১৭টি ও বেনাপোল পোর্ট থানায় ৯টি দৃষ্টিনন্দন মন্দিরে হিন্দু ধর্মের বড় ধর্মীয় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২২ অক্টোবর থেকে ৫ দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এ বৃহৎ উৎসব। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবছরের পূজায় কোন আলোকসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে না। এখন শুধু অপেক্ষা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। সকলের সুখ ও মঙ্গল কামনায় মায়ের আগমণ ঘটবে এবার। অশুভ শক্তি ও অসুর শক্তির বিনাশ হবে। পৃথিবীর সুন্দর ও শ্বাশত সুন্দরের জয় হবে এমনটাই আশা করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ভাস্কর সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, দূর্গাপূজাকে আকর্ষণীয় করে তোলে মূলত: মা দূর্গার প্রতিমা। মূল আকর্ষণ মা দূর্গার প্রতিমা সুন্দর হলে পূজাটাও সুন্দর কাটে ভক্তবৃন্দের নিকট। এই দূর্গা মায়ের প্রতিমায় ভক্তদের আকর্ষণ বাড়াতে প্রচুর কাঁচাপণ্যের প্রয়োজন হয়। তবে বাজারে কাঁচাপণ্যের দাম বাড়ায় এবার প্রতিমা তৈরিতে খরচ বেড়ে যাবে করোনাকালিন সময়ে গতবছরের তুলনায় একটু বেশী। শার্শা উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার রায় বলেন, আসলে এবারের দূর্গাপূজাটা অনুষ্ঠিত হবে শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতিতে। যার ফলে উৎসব করার সুযোগটা থাকছে না। যখন উৎসব থাকে, তখন মানুষের মন বড় থাকে। মানুষ চায় তার ম-পটি সবচেয়ে সুন্দর হোক, বড় হোক। মানুষের মধ্যে সেই উৎফুল্লতা নেই। ধর্মীয় রীতি পালন করতে হবে বলেই হয়ত এবার প্রতিমাগুলো ছোট হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারীতে সব পূজামন্ডপে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনে ২৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় পরিষদ। শার্শা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বৈদ্যনাথ দাস বলেন, এবারের এ দূর্গাপূজায় প্রচন্ড আর্থিক সংকটের মধ্যে থাকলেও পূজার মূল বিষয়বস্তুকে বাদ দেওয়া যায়না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন বৈশি^ক এই মহামারীতে আর্থিক এ সংকটের মধ্যে আমাদেরকে একটু অর্থ সহযোগিতা বাড়িয়ে দেয়। শার্শা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদরুল আলম খান বলেন, আসন্ন শারদীয়া দূর্গাপূজা ২০২০ সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী পালিত হবে। আমরা নিয়মিত টহলের মাধ্যমে মন্ডপসমূহ মনিটরিং করছি। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে আমরা পূজার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।