শার্শা প্রতিনিধি: “ক্ষুধা লাগলে খেয়ে যান, এই শ্লোগানকে সামনে রেখে যশোরের নাভারণে পথ শিশু ও ভারসাম্যহীন পাগল ও ভবঘুরে ক্ষুধার্ত অসহায় ছিন্নমুল মানুষের দু’মুঠো খাবার খাওয়ানোর ব্রত নিয়ে ‘ফ্রী খাবার বাড়ীর’ যাত্রা শুরু। ২০০০ সালের বন্যার সময় শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ ও অসহায় ছিন্নমুল মানুষের মাঝে বিরাজমান ছিল হাহাকার। দু’মুঠো খাবারের জন্য এদিক-সেদিক ছুটে বেড়িয়েছেন দুস্থ ও অসহায় ছিন্নমুল ক্ষুধার্তরা। ক্ষুধার্ত শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করেছে। ক্ষুধার্তদের ক্ষুধা নিবারনের জন্য কেউ এগিয়ে না আসলেও একজনের মন ঁেকদেছে অসহায় ক্ষুধার্তদের পাশে দাড়াতে। সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না তার। তবুও তিনি যতদুর পেরেছেন রান্না করা খাবার প্যাকেটে করে নিয়ে ক্ষুধার্তদের ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টা করেছেন। এমনকি ক্ষুধার্ত অবুঝ কুকুর-বিড়ালদেরও রাতের বেলা তিনি খাবার খেতে দিতেন। এমনিভাবে বিন্দু বিন্দু চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে হাটি-হাটি, পা-পা করে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠালাভ করে ‘ফ্রী খাবার বাড়ী’। এই ‘ফ্রী খাবার বাড়ীর’ সহযোগীতায় তার পাশে এসে সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছে একটি সেবামুলক সামাজিক সংগঠন ”মানবসেবা হেল্প ফাউন্ডেশন”। যে ব্যক্তি ক্ষুধার্তদের ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টায় রাত দিন ছুটে চলেছেন তিনি কোন মহাপুরূষ বা কোন শিল্পপতি বা কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি নন। তিনি শার্শা উপজেলার আমতলা-গাতিপাড়া গ্রামের চাষী পরিবারের মৃত আক্কাছ আলী মোড়লের ছেলে। তিনি একজন সামান্য মোটরমেকানিক, নাম তার মিজানুর রহমান মিজান (৪৮)। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের তিনি দ্বিতীয়। পারিবারিক জীবনে তিনি এক ছেলের বাবা। শার্শা বাজারে উপজেলা পরিষদের সামনে তার একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ আছে। তার চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভাবনীয় নতুন নতুন মডেলের গাড়ি তৈরী করেছেন এবং ৭০টি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি, সেইসাথে পেয়েছেন সম্মাননা ক্রেষ্টও। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয় নিয়েও তিনি অনেক গবেষণা করেছেন এবং পরিবেশবিদদের পক্ষ থেকে ৭টি সম্মাননা ক্রেষ্ট অর্জন করেন। দেশ সেরা উদ্ভাবকের তালিকায় তার নাম লেখাতে তিনি সমর্থ হয়েছেন। চলমান বৈশি^ক মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি জনসচেতনামুলক বিভিন্ন প্রচার-প্রচারনা এবং দরিদ্রদের মাঝে লক্ষাধিক মাস্ক ফ্রি বিতরণে মিজানের ভুমিকা স্মরন রাখার মত। দুস্থ ও এতিমদের মাঝে তিনি কোরাণ শরীফ বিতরণ করেছেন। বর্তমানে দেশে ধর্ষন প্রতিবাদে সর্বত্র যেভাবে আন্দোলন চলছে তারই আলোকে তিনি নিজ উদ্যোগে ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিবাদ সবাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। তবে বর্তমানে ‘ফ্রী খাবার বাড়ী’নিয়ে তিনি বেশী ব্যস্ত আছেন। ‘ফ্রী খাবার বাড়ীর’ তালিকায় পথ শিশু ও ভারসাম্যহীন পাগল ও ভবঘুরে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য সপ্তাহে ৩দিন খিচুড়ি, ৩দিন যে কোন তরকারি বা সবজির সাথে মাছ এবং সপ্তাহে একদিন প্রতি শুক্রবারে মাংস খাওয়ানো হয়। ‘ফ্রী খাবার বাড়ী’ ৪ সেপ্টেম্বার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে ৩৮দিনে ২’ হাজার ৫’শ জন ক্ষুধার্ত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, এতিমখানার শিশুরা তৃপ্তির সাথে ক্ষুধা নিবারণ করতে পেরেছে। ‘ফ্রী খাবার বাড়ীর’ সুনাম চারিদিকে প্রচার হওয়ার কারণে অনেক দাতা ব্যক্তি বা সংস্থা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের সহযোগীতায় কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশসেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজানের ‘ফ্রী খাবার বাড়ী।’ উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, করোনা ভাইরাস সবাইকে কি শিক্ষা দিয়েছে আমার জানা নেই, তবে এই করোনা আমাকে অনেক ভাল কিছু দিয়ে গেছে। করোনাকালে অনাহারে থাকা পথ শিশু ও রাস্তার ভারসাম্যহীন পাগলদের জন্য ফ্রী খাবার বিতরন করতে যেয়ে এমন একটি হোটেল করার কথা ভাবছিলাম। সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ। ‘ফ্রী খাবার বাড়ীর স্থায়ী কোন জায়গা বা প্রতিষ্ঠান না থাকায় নাভারণ- বুরুজবাগান মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে বাদল নার্সারীর ভেতরে বাদল নার্সারীর মালিক বাদল হোসেনের পরিচালনায় এই খাবার বাড়ির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।