মোঃ ইব্রাহিম খলিল: বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনে সাতক্ষীরা জেলার শেষ সীমান্তে ম্যানগ্রোভ খ্যাত সুন্দরবনের কোলঘেঁষে শ্যামনগর উপজেলা অবস্থিত। ইতি পূর্বে উপজেলাটি শিডর,আইলা,বুলবুল আম্ফান ও সাম্প্রাতিক সময়ে প্রানঘাতী করোনার মহামারী ছোবলে মানুষের জীবন প্রায় ওষ্টাগত। ঠিক সেই সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ক্রয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ও শিক্ষার মান বাড়াতে ২০১৯ -২০ অর্থ বছরে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ক্রয় অত্যাবশ্যক। নিয়ম অনুযায়ী স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক, সভাপতি সহ সংশি¬ষ্টরা বাজার যাচাই বাচাই করে হাজিরা মেশিনটি ক্রয় করে ¯¬ীপটি উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিবে। কিন্তু শিক্ষা অফিসারের দূর্নীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সে কারণে শিক্ষা অফিসারের উপর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম ভাবে ক্ষুদ্ধ।
শ্যামনগর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিন ছোট কুপট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলায় ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৫১টি স্কুলে ¯¬ীপ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা । বাকী ৪০ টি স্কুল সি,এফ, এস এর আওতাধিন ছিল। শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক উক্ত ¯¬ীপের বরাদ্দ কৃত টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের একাউন্টে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরিপত্রের নির্দেশনা না মেনে সমুদয় টাকা নিজ একাউন্টে জমা রাখেন যা আইনের বহিভূত।
পশ্চিম শ্রীফলকাটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসেন আলী সহ কয়েক জন শিক্ষক জানান, ¯¬ীপের বরাদ্দ কৃত ৫০ হাজার টাকা থেকে শিক্ষা অফিসার আমাদের সাথে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ক্রয় বাবদ ২৫ হাজার টাকা সহ ভ্যাটের টাকা কেটে নিয়ে স্ব স্ব বিদ্যালয় একাউন্টে ২২হাজার ৫শত টাকা জমা দেন। যা স্কুলের একাউন্ট চেক করলে প্রমান মিলবে। শিক্ষকরা আরো বলেন, জেডকেটিকো মডেল নং কে৫০এ নামীয় ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি একেবারেই নিম্ম মানের। মেশিনটির বর্তমান বাজার মূল্য ৬ হাজার ৮ শত টাকা। অথচ উপজেলা শিক্ষা অফিসার কিছু শিক্ষকদের সহযোগীতায় ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় থেকে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা আরো জানান, শিক্ষা অফিসার নিজের দূর্নীতি ঢাকতে সহকারী শিক্ষা অফিসার আজহারুল ইসলামকে দিয়ে মন গড়া প্রত্যায়ন তৈরী করে শিক্ষকদের চাপ সৃষ্টি করে শিক্ষকদের সই করিয়ে নেন। প্রত্যায়নে কি লেখা আছে আপনাদের দেখার দরকার নেই। সহকারী শিক্ষা অফিসার এখানে ক্ষ্যান্ত হননি তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ষ্ট্যাম্প করে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন।
হায়বাতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, উপজেলায় কয়েকটি বিদ্যালয় ¯¬ীপের আওতাধীন নয়। আমরা সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিস থেকে ৪৫ হাজার টাকার চেক নিয়ে নিজেরাই বাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যে হাজিরা মেশিন ক্রয় করি। তিনি আরো বলেন আমি কোন দূর্নীতিকে প্রশ্রায় দেয়নি আমরা কয়েক জন শিক্ষক শিক্ষা অফিসারের ফান্দে পা দেয়নি।
সহকারী শিক্ষা অফিসার আজহারুল ইসলামকে প্রত্যায়নের বিষয় জানতে চাহিলে তিনি বলেন, ¯¬ীপের টাকা ও হাজিরা মেশিন বাবদ শিক্ষকের কাছ থেকে কোন প্রত্যায়ন নেয়া হয়নি বা ষ্ট্যাম্পের কথাও বলেনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি ¯¬ীপের বরােেদ্দর টাকা নিজ একাউন্টে রাখার বিষয় সত্যতা স্বীকার করে প্রতিবেদককে বলেন, হাজীরা মেশিন বাজার মূল্য ৬ হাজার ৮ শত টাকা ঠিকই। কিন্তু জেডকেটিকো মডেল নং কে৫০এ মেশিনটি তিন বছরের সার্ভিস দেয়া শর্তে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয় ঢাকা আগরগাঁ জেডকেটিকো মডেল নং কে৫০এ পাইকারী বিক্রেতা ষ্টোর ম্যানেজার শওকাত হোসেনের সাথে মুঠো ফোনে ০১৭০৯৯৯৫৪৬৭,০৯৬৭৮০০২০০৩, নম্বরে কথা হলে তিনি জানান, উল্লেখিত ডিজিটাল মেশিনের মূল্য ৬হাজার ৮শত টাকা। তবে বেশি নিলে নির্ধারিত মূল্য থেকে বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। মেশিনটির ওয়ারেন্টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, মেশিনের ওয়ারেন্টি এক বছর তো থাকছে প্রয়োজনে ওয়ারেন্টির সময় সিমা বাড়ানো যাবে বলে তিনি জানান। এদিকে শ্যামনগর উপজেলা ২২নং ভৈরবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান গেল বছর বরাদ্দকৃত স্লিপের ৫০০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বাবদ উপজেলা শিক্ষা অফিসার, আক্তারুজ্জামান ২৫০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা কর্তন করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আমরা কোন প্রকার ডিজিটাল হাজিরা মেশিন পাইনি। বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ডাঃ মহিদার রহমান বলেন শিক্ষা অফিসারের দূর্নীতি মেনে নেওয়া যায়না। ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিনের বাজার মূল্য ৬৮০০/- (ছয় হাজার আটশত) টাকা অথচ তিন বছরের ফ্রি সার্ভিসিং এর দোহাই দিয়ে ও মেশিন বাবদ শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়ে বরাদ্দকৃত স্লিপের টাকা থেকে ২৫০০০/- (পঁচিশ হাজার) টাকা কর্তন করেছেন। এটা অত্যান্ত দুঃখ জনক ও হাস্যকর ব্যপার। আমি সংশি¬ষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশা-পাশি বিভাগীয় শাস্তি সহ দূদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ছবি ঃ শ্যামনগর উপজেলা (প্রাঃ) শিক্ষা অফিসার আক্তারুজ্জামান। ও হাজিরা মেশিনের ছবি।