নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পাহাড়ী এলাকাগুলোতে প্রায় একচেটিয়াভাবে এক সময় মাল্টার চাষ হলেও বর্তমানে শুধু পাহাড়েই সীমাব্ধ নয়। দেশের মাটি ও জলবায়ূ মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। উদ্বুদ্ধ করছেন একে অন্যকেও। সফল হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। শুধু নিজের জন্য নয়, অনেকে বাজারে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।
যশোরের বাঘারপাড়ার বলরামপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করা হয়েছে দু’ থেকে তিনটি মাল্টার চারা। করোনায় বিশ্বমহামারীতে চারিদিকে যখন ভিটামিন-সি-এর কদর বেড়ে গেছে। সে ইস্যু মাথায় নিয়ে বাঘারপাড়ার এ প্রত্যন্ত গ্রামটিতে তিনশ মাল্টার চারা বিতরণ করেছে একটি সামাজিক সংগঠন। প্রতি মৌসুমেই ৩শ’ গাছে প্রায় ৬ হাজার পিস মাল্টা ধরবে বলে দাবি ওই সংগঠনের এক কৃষিবিদের। ফলে গ্রামের বলরামপুর গ্রামের ভিটামিনের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রিও করতে পারবেন বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাাল্টার গুনাগুণ বলতে গেলে উচ্চফলনশীন ও নিয়মিত ফল দানকারী ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ একটি সুমিষ্ট ফল। আর কারণে অনেকেই এখন মাল্টাচাষে নিযুক্ত হচ্ছেন। শহর এলাকায় মাল্টার জনপ্রিয়তা থাকলেও গ্রামের মানুষ মাল্টা সম্পর্কে তেমন অবহিত নয়। তাই অনেকে এখন গ্রামের দিকে মাল্টা চাষের হাত প্রসারিত করছেন।
যশোরে ঝুমঝুমপুরের জ্ঞানের মেলা মানব কল্যান সংস্থার উদ্যোগে বাঘারপাড়ার বলরামপুর গ্রাম পরিণত হয়েছে মাল্টা গ্রামে। এ গ্রামের সব ধরণের ফলের গাছ থাকলেও মাল্টা গাছ এবারই প্রথম লাগানো হয়েছে। ১২০টি পরিবারের মধ্যে দু থেকে ৩টি করে চারা লাগানো হয়েছে। একদিনে একই সময়ে একই সাইজের রোপণের এ গাছে এক সাথে ফল ধরবে। আর ১৫০টি পরিবারে। শুধুদেখতে সৌন্দয্য নয়। তা পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি আয়ও হতে পারে। আর এচিন্তাধারা থেকে নেয়া হয়েছে এ মহতী ্উদ্যোগ, বদলে যাওয়ার অপেক্ষায় বলরামপুর গ্রাম। অপেক্ষা শুধু সময়ের।
গাছ সবাই লাগায় কিন্তু মাল্টা কেন এমন প্রশ্ন যদি করা হয় তবে বলা যায় তা অধিক পরিমাণে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ। আর ভিটামিন-সি আমাদের শরীরের জন্য যে কত জরুরী তা আমরা সবাই একরোনাকালে উপলব্ধি করতে পেরেছি। বাজারে যখন ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলের অস্বাভাবিক দাম, ওষুধের দোকানগুলোতে যখন ভিটামিন-সি ট্যাবলেটের আকাল তখন একরোনা সময়ে সত্যি এক প্রসংশনীয় উদ্যোগ নিয়েছে জ্ঞানের মেলা মানব কল্যান সংস্থার। আর বাস্তবায়নে রয়েছে অতিথি সমাজ কল্যাণ সংস্থা।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে সময়ে শিশু-কিশোরেরা জানেই না তাদের আশে-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছ সম্পর্কে জানে না তাদেও গুরুত্ব। তাই গ্রামের প্রতিটি শিশু যাতে শিশু যাতে গাছ সম। সম্পর্কে আগ্রহী হয় এং পরিচর্যার মানসিকতা তৈরি হয় সে জন্য জ্ঞাণের মেলা সংগঠনটি এলাকার কয়েকজন স্বপ্ন বিলাসী তরুণকে সাথে নিয়ে একাজে নেমেছেন।
জ্ঞানের মেলা যে পরিবারের মধ্যে দিচ্ছে তারা বাইরের কোন জমিতে রোপণ করতে পারবেন না। বাড়ির আঙিনাতে এগুলো শোভা পাবে। এতে করে সংরক্ষণের সুবিধা হবে বলে মনে করেছেন এ উদ্যোক্তারা। এ গ্রামের প্রতিটা বাড়ি পরিণত হবে। হবে এক একটি মাল্টা বাড়িতে। যে বাড়ির প্রতিটি দস্যরা উদ্ধুদ্ধ করবে অন্যদের। বলরামপুর গ্রাম মাল্টাগ্রাম হওয়ায় উচ্ছসিত এ গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। তারা নিজেরাই নিজেদেও বাড়ির আঙিনা তৈরি করেছেন, গাছ লাগিয়েছেন ও নিজের হতে। আর পরিচর্যা যে করবেন তা তাদেও মুখের হাসিই বলে দেয়। এ গ্রামের স্বপন বিশ্বাস ও পলাশ বিশ্বাস বলেন, জীবনে প্রথম দেখলাম এ ধরনের উদ্যোগ। গাছের বিতরণ একটা পুরাতন শখ এ এদেশের মানুষের। কিন্তু এক সাথে প্রতিটি বাড়িতে একই জাতের চারা রোপন নান্দনিক উদ্যোগে অবহিত করেন তারা। তারা আরও বলেন, মাল্টার নাম শুনেছি বা মাঝে মধ্যে ছেলে মেয়েদের খাওয়ানো হয় কিন্তু এবারই প্রথম দেখলাম বলে মন্তব্য করেন।
শনিবার বিকেলে মাল্টার চারা বিতরণের সময় অংশ নেন জ্ঞানের মেলা মানব কল্যান সংস্থার, সভাপতি কৃষিবিদ ইবাদ আলী, সহ-সভাপতি মিলন হোসেন, সভাপতি কৃষিবিদ সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, সহ-সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল, কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আরিফা জাহান, বাবুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, শেখ ইব্রাহিম, আলতাফ হোসাইন, শরিফুল ইসলাম, টিপু গাজী, তৌহিদ আলম, শরীফ হোসেন, সেলিম হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, ফিরোজ হোসেন। অতিথি সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধি পলাশ বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বাস, সমীর বিশ্বাস, পাপ্পু বিশ্বাস, শিমুল বিশ্বাস, শাহীন হোসেন প্রমুখ।
এদিকে অতিথি সমাজ কল্যাণ সংস্থার মাল্টার চারা রক্ষণাবেক্ষণ করণে কাজ শুরু করেছে। সংগঠনের উপদেষ্টা স্বপন বিশ্বাস বলেন, এখন থেকেই বিভিন্ন উপাদান দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে। যা প্রতি বাড়ি বাড়ি একটি করে প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হবে মাত্র ১০টাকার বিনিময়ে। তাছাড়া সংগঠনের পক্ষে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চারাগুলো দেখভালও করা হবে বলেও তিনি জানান।